আন্তর্জাতিক
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যেভাবে বেঁচে ফিরলো দুই বোন
‘মার্ভ! ইরেম! মার্ভ! ইরেম!’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মী মুস্তাফা ওজতুর্ক। কিন্তু তার চিৎকারে কাজ হচ্ছে না। মার্ভ, ইরেম এই দুই তরুণীর কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। সবার মাঝে হতাশা নেমে এলো। অস্থির হয়ে পড়েছেন সবাই।
দক্ষিণ তুরস্কের আনতাকিয়ার একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট। ভয়াবহ ভূমিকম্পে তা এখন ধ্বংসস্তূপ। এই ধ্বংসস্তূপ ঘিরে রয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছেন আরও অনেকে। সবার মাঝে এক উৎকণ্ঠা ও রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। যেন কিছু একটার জন্য উদগ্রীব তারা। সকলের মধ্যে উত্তেজনা, উৎকন্ঠা কারণ পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচেই চাপা পড়ে আছেন দুই বোন মার্ভ ও ইরেম।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
আনতাকিয়ার বিধ্বস্ত ভবনটির দূরে অবস্থান নেয়া লোকদের মাঝে ওই দুই তরুণীর বন্ধুরাও ছিলেন। তারা সারারাত সেখানে বসেছিলেন। কাঁদছিলেন। ভবন থেকে বেঁচে যাওয়া অন্য মানুষরা বার বার বলছিলেন, দুই বোন এই ধ্বংসস্তূপের নিচেই চাপা পড়ে আছেন। আর তাই উদ্ধারকর্মীরা কোনোভাবেই হাল ছাড়তে চাইছিলেন না। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
বড় বোন মার্ভের বয়স ২৪, আর তার ছোট বোন ইরেমের বয়স ১৯। গেলো দুদিন ধরে ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন তারা। কিন্তু তাদের জন্য এ সময়টা ছিল কয়েক সপ্তাহ।
এদিকে উদ্ধারকর্মী মুস্তাফা বার বার চিৎকার করে ডাকছিলেন মার্ভ-ইরেমকে। এসময় হঠাৎ যেন কী হলো। মুস্তাফা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ইরেম, প্রিয় ইরেম, আমি তোমার খুব কাছে, তুমি আমাকে শুনতে পাচ্ছো?’
দূরে যারা ছিলেন তারা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কিছু শুনতে পাচ্ছিলেন না। তবে মুস্তাফার অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিল ভেতর থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছেন। এটা যেন এক স্বস্তির অনুভূতি।
‘তুমি খুবই দারুণ! দয়া করে শান্ত থাকো, আমার কথার জবাব দাও। প্রিয় মার্ভ, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও’। চিৎকার করে এ কথাগুলো বলছিলেন মুস্তাফা।
মুস্তাফা ভালো করেই জানেন, ওই মেয়েদের উদ্ধারে আরও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তাদের সাহস দিতে হবে। ওরা আশা হারিয়ে ফেললে আর বাঁচবে না। তাই তাদের সঙ্গে মজার মজার কথা বলতে লাগলেন মুস্তাফা। মার্ভ ও ইরেমও হাসাহাসি শুরু করলো।
মুস্তাফা বলছিল, ‘যদি ভেতরে ওরা জায়গা পেতো, তাহলে হয়তো নাচানাচি করতো।’
উদ্ধারকর্মীদের হিসাব অনুযায়ী, দুই বোনের কাছে পৌঁছাতে আরও দুই মিটার খুঁড়তে হবে। কিন্তু উদ্ধারকর্মী দলের অধিনায়ক হাসান বললেন, কংক্রিটের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটা ভুল পদক্ষেপে বিরাট বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। যখন খোঁড়া শুরু হলো, তখন একটা পুরো কংক্রিট তুলে ধরে রাখার জন্য বুলডোজার আনা হলো।
মুস্তাফা চিৎকার করে ওই মেয়েদের বলছিলেন, ‘ভয় পেয়ো না। বিশ্বাস করো, আমরা তোমাদের ফেলে চলে যাবো না। আমি তোমাদের বের করে আনবো। এরপর তোমরা দুজন আমাদের লাঞ্চ খাওয়াতে নিয়ে যাবে।’
মধ্যরাতে খনন কাজ চলছে। কেউ কয়েক রাত ঘুমায়নি। কংক্রিটের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা একটা ছোট্ট ছিদ্র করেছে, মেয়ে দুটি মুস্তাফার টর্চের আলো দেখতে পারছে কি না, সেটা জানার জন্য। তারা আলো দেখতে পাচ্ছে। তখন তাদের জন্য একটা নাইট ভিশন ক্যামেরা পাঠানো হলো।
ক্যামেরাটি ওপরে একটা ছোট্ট পর্দার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সবাই সেই পর্দায় দেখতে পেলো মার্ভ- ইরেমকে। এ যেন সবার জন্য এক আনন্দের মুহূর্ত। সবার মুখে এখন স্বস্তির ছায়া। কারণ মেয়ে দুটি ভালোই আছে। উদ্ধারকর্মীরা বললেন, ‘তোমরা কী সুন্দর। বেশি নড়াচড়া করো না।’
এদিকে মধ্যরাত পেরিয়ে তখন ভোর পাঁচটা। সুড়ঙ্গটি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে। তার ভেতর দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা হামাগুড়ি দিয়ে যেতে পারবেন। সব কিছু প্রস্তুত করা হলো- মেডিকেল টিম, অ্যাম্বুলেন্স। সবাই যেন উত্তেজিত। এরপর সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। সকাল সাড়ে ৬টায় প্রথমে ইরেমকে বাইরে বের করে আনা হলো। তিনি কাঁদছিলেন। এ যেন বেচে ফেরার স্বস্তির কান্না। এর আধা ঘণ্টা পর মার্ভকেও বের করে আনা হলো।
মার্ভ বেরিয়ে আসার পর সবাই উল্লাস করছিলেন। হাততালি দিচ্ছিলেন। যে বন্ধুরা সারারাত জেগেছিলেন, তারা চিৎকার করে কাঁদছিলেন। আর বলছিলেন ‘মার্ভ, ইরেম, আমরা তোমাদের পাশে আছি। ভয় পেয়ো না।’
দুই বোনকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো, নিয়ে যাওয়া হলো একটি ফিল্ড হাসপাতালে। এভাবেই বেচে ফিরলো দুটি প্রাণ। তবে মার্ভ-ইরেমের জন্য কষ্ট ভোলার এটাই যথেষ্ট ছিল না। কারণ ভূমিকম্পে তাদের সামনেই মারা গেছেন তাদের মা। যার মরদেহ সেই ধ্বংসস্তূপের নিচেই পড়ে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন