করোনা ভাইরাস
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্ছেদ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ, ঝুঁকিতে লাখো ভাড়াটিয়া
যুক্তরাষ্ট্রে আজ স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে কোভিড মহামারীতে আবাসিক বাসভবন থেকে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ সংক্রান্ত নির্দেশনার মেয়াদ। এর ফলে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে অন্তত ৭০ লাখ মার্কিনী। উচ্ছেদ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর দাবিতে রোববার ভোররাতে ইউএস ক্যাপিটলের সামনে র্যালি করেছে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য তা একটি বড় ধাক্কা হয়ে আসবে। বৃহস্পতিবার রাতেও শেষ চেষ্টা হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে মার্কিন কংগ্রেসকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। করোনার ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ায় মানুষকে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতেই এই অনুরোধ করেছেন তিনি।
এর আগে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়ারা সময়মতো বাড়ি ভাড়া দিতে না পারলেও তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সিডিসি।
এই নির্দেশনার মেয়াদ আরো বাড়ানোর দাবিতে ক্যাপিটালে অবস্থান নিয়েছেন কংগ্রেস সদস্য কোরি বুশ। তিনি জানান, মেয়াদ না বাড়ানোয় উচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, উচ্ছেদ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়াতে ডেমোক্রেটদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কোরি বুশ। শনিবার তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি উচ্ছেদ করা হয় তাহলে বাবা-মায়েরা কীভাবে শিশুদের যত্ন নেবে, নিজেরা কাজে যাবে। একটি প্রাণঘাতি বৈশ্বিক মহামারী চলার সময় আমরা জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারি না।
শনিবার ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, এ দেশের প্রতিটি রাজ্যে, পরিবারগুলো খাবার টেবিলের সামনে বসে ভাবছে কীভাবে একটি বিপর্যয়কর, বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ও অপ্রয়োজনীয় উচ্ছেদ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে তারা।
শুক্রবার ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনা না করেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন শেষ হয়। আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে তোলা হলেও তা আটকে যায় রিপাবলিকান দলের সদস্যদের বিরোধিতায়।
বিরোধী আইনপ্রণেতারা বলছে, ভাড়া না পাওয়ায় সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বাড়ির মালিকরা।
স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করছে বাড়িওয়ালা গোষ্ঠী এবং বাড়িওয়ালাদের একটি অংশ। ভাড়া থেকে আয় বন্ধ থাকার কারণে বন্ধকীর কিস্তি, কর ও বিমার অর্থ পরিশোধ করতে হিমশিম অবস্থায় পড়েছে তারা।
শনিবার রাতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানান, ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের জন্য দ্রুত চার হাজার ৬৫০ কোটি ডলারের তহবিল ছাড়ের দাবি জানিয়েছে আইনপ্রণেতারা।
অ্যাসপেন ইনস্টিটিউট এবং কোভিড-১৯ ইভিকশন ডিফেন্স প্রজেক্ট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ লাখ বসতবাড়ির দেড় কোটির বেশি বাসিন্দা ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি। বাড়িওয়ালাদের কাছে মোট ২০০ কোটি ডলারের বেশি তাদের দেনা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ২০২০ সালের মার্চ থেকেই ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে গেল সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সিডিসি ভাড়াটিয়া উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কয়েকবার এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এদিকে, উচ্ছেদ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩১ জুলায়ের পরও বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কের মতো অঙ্গরাজ্যগুলো।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।