করোনা ভাইরাস
জাপানে মডার্নার টিকায় আরও দূষণ শনাক্ত
জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলে মডার্নার করোনা টিকায় আরও দূষণ শনাক্ত হওয়ায় এই টিকার ডোজ প্রয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। রোববার দূষিত ডোজ প্রয়োগ স্থগিতের তথ্য জানিয়েছে ওকিনাওয়ার স্থানীয় সরকার।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মডার্নার টিকার দূষিত ডোজ নেওয়ার পর দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত শুরুর তথ্য জানানোর একদিন পর আবারো দূষণ শনাক্তের খবর এলো। এর আগে, দেশটিতে মডার্নার দূষিত ডোজ শনাক্ত হওয়ার পর প্রয়োগ স্থগিতের আগে টিকা নেওয়া দুইজনের মৃত্যুর কথা জানায় জাপান সরকার। যদিও তাদের মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি।
আজ রোববার টিকাদান কর্মসূচি আংশিকভাবে স্থগিত করার কথা জানিয়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ওকিনাওয়ার স্থানীয় সরকার। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মডার্নার কোভিড-১৯ টিকার কিছু ডোজে বিদেশি কণা শনাক্ত হওয়ায় এর প্রয়োগ স্থগিত করা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, গেল বৃহস্পতিবার জাপানে মডার্নার টিকায় যে দূষণ শনাক্ত হয়েছিল এবার তা ছিল ভিন্ন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ৩০ এবং ৩৮ বছর বয়সী দুই ব্যক্তি মডার্নার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর আগস্টের শুরুতে মারা যায়।
দূষণ শনাক্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার যে তিনটি লটের টিকা স্থগিত করা হয়েছিল সেই লটের একটি থেকে তারা টিকা নিয়েছিল। তাদের মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
গেল বৃহস্পতিবার টিকায় দূষিত উপাদান পাওয়ার পর জাপানের ৮৬৩টি টিকাকেন্দ্রে সরবরাহ করা মডার্নার ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডোজের প্রয়োগ স্থগিত রাখা হয়। মডার্নার স্থানীয় পরিবেশক তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কিছু শিশিতে দূষণের খবর পাওয়ার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর এসব টিকার প্রয়োগ স্থগিত করা হয়।
জাপান সরকার এবং মডার্না জানিয়েছে, তাদের টিকায় নিরাপত্তা বা কার্যকারিতা নিয়ে কোন সমস্যা শনাক্ত হয়নি। শুধুমাত্র পূর্ব-সতর্কতা হিসেবে টিকার ডোজ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার যৌথ এক বিবৃতিতে মডার্না এবং তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল বলেছে, মডার্নার টিকার কারণেই ওই দুইজন মারা গেছে এই মুহূর্তে সে বিষয়ে কোন প্রমাণ নেই। টিকার সঙ্গে তাদের মৃত্যুর কোন সম্পর্ক আছে কি-না তা জানতে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করাই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউরোপে মডার্নার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উৎপদিত টিকার শিশিতে পাওয়া কণার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। মডার্না এবং তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল বলেছে, শিশিগুলো বিশ্লেষণের জন্য একটি মানসম্মত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে মডার্নার উৎপাদনকারী স্প্যানিশ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান রোভি জানায়, টিকার নির্দিষ্ট ওই ব্যাচে দূষণের কারণ জানতে তদন্ত চলছে। টিকার এই ব্যাচ শুধুমাত্র জাপানেই বিতরণ করা হয়েছিল।
করোনার অতিসংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রাদুর্ভাবে জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ইতোমধ্যে দেশটির প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় পুরোপুরি আনা হয়েছে। মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে ১৫ হাজার ৮শ’ জনের বেশি। এখনও এই ভাইরাসের কঠোর বিধি-নিষেধের আওতায় রয়েছে দেশটির বেশিরভাগ এলাকা।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।