বাংলাদেশ
স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে শমসেরনগরে ‘বঙ্গবন্ধু টাওয়ার’
মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনন্য ভালোবাসার নজির স্থাপনের ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে। অজপাড়াগাঁয়ের তার প্রতি এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ খুব কমই দেখতে পাওয়া গেছে। গ্রামের একটি কলেজ মাঠে ১২৩ ফুট উচ্চতায় বানানো হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু টাওয়ার’। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘দ্য স্ট্যাচু অব স্পিচ অ্যান্ড ফ্রিডম টাওয়ার’।
গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার জানান দিতে মহান রাষ্ট্রনায়কের ১২৩ ফুট উঁচু ভাস্কর্য স্থাপন করে সৃষ্টি করেছেন নতুন এক উদাহরণ, যা দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকার শমসেরনগর গ্রামে এই ভাস্কর্য স্থাপন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল সরকারি মহাবিদ্যালয়। দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বুড়িভৈরব নদীর পাশে। ফলে যোগ করেছে বাড়তি সৌন্দর্য। তাই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে আসে এখানে।
প্রকল্পের উদ্যোক্তা ডা. রাশেদ শমসের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের ১০০ বছর এবং ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ২৩ বছরকে কেন্দ্র করে ভাস্কর্যটির মূল বিষয়বস্তু হিসেবে ধরা হয়েছে। ৬ তলাবিশিষ্ট এই টাওয়ারটিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের জন্য ২০টি আবক্ষ ভাস্কর্য (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারে যারা নিহত হন) তৈরি করা হয়েছে। টাওয়ারটির চারদিক ২৩টি পিলার সম্পূর্ণ গ্লাস দিয়ে পুরো টাওয়ার মোড়ানো হবে।
প্রথম তলায় ক্যাফেটিরিয়া, দ্বিতীয় তলায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারে মারা যাওয়া সব শহীদের ভাস্কর্য, তৃতীয় তলায় স্বাধীনতাসংগ্রামী বীরশ্রেষ্ঠদের ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, চতুর্থ তলায় বঙ্গবন্ধুর মতো সারা বিশ্বের স্বাধীনতাসংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন নেতাদের ভাস্কর্য, পঞ্চম তলায় বঙ্গবন্ধু পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, ষষ্ঠ তলায় প্রজন্ম একাত্তরের অফিস থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দর্শনার্থীরা গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বাঁ দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য দেখত পাবে। এরপর প্রথম বেদিতে থাকবে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভাস্কর্য; তারপর শেখ রাসেল, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, শ্রীমতি ইন্দ্রীরা গান্ধীর ভাস্কর্য, একাত্তরের আত্মসমর্পণের দৃশ্য এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্য। তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে উঠবে।
৬ তলার টাওয়ারটির একেক তলায় ১১ ফুট করে ৬৬ ফুটের ৬ দফা। একতলা থেকে আরেক তলায় উঠতে ২৩টি ধাপ আছে। সেটিতেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্যই আমাদের এত আয়োজন।
দর্শনার্থী রাকিবুল ও সায়ান জানান, তারা নাটোর থেকে ১২৩ ফুট উঁচুতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেখতে এসেছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গেছেন কিন্তু এত উঁচুতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন কখনো দেখেননি বলে জানান। তাদের মতে, এখানে এলে বর্তমান প্রজন্ম এবং পরবর্তী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে পারবে বলেও জানান তারা।
গ্রামের সাইদুল ইসলাম ও রইচ উদ্দীন জানান, তাদের পাড়াগাঁয়ের একটি গ্রামে এমন একটি স্থাপনা নিজেদের কাছে গর্বের বিষয় বলে মনে করেন। গ্রামের মানুষ কখনো ধারণাই করতে পারেনি যে এখানে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসবে এগুলো দেখতে।
জাতির জনক শেখ মুজিব মেমোরিয়াল সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম ডাবলু জানান, এই টাওয়ারে ১২৩ ফুট ওপরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। ভাস্কর্যটির ডিজাইন করেছেন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার কীর্তিবাস রায় ও আজাদ রানা। এত বেশি উচ্চতায় কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাস্কর্য স্থাপন বিশ্বে এটিই প্রথম। ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন একটি স্থাপনা সত্যিই নজর কাড়ার মতো। জাতির পিতার এই সম্মান দিতে পেরে শমসের নগরের মানুষ খুবই আনন্দিত।
গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা জানান, নতুন প্রজন্ম শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানাতে শমসেরনগরে আসে। সেই চিন্তাভাবনা আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসাতেই ২০১৯ সালের দিকে এই কার্যক্রম হাতে নেয় তারা। এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ মুক্তিযোদ্ধা পবিারের নিজেদের অর্থায়নে শেষ হবে ২০২২ সালের শেষের দিকে।
তারা জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, পরিকল্পনামন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৯৯৮ সালে বারবাজার এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলীর খোঁজে ওই এলাকায় যান। তখন তিনি জানতে পারেন মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী মারা গেছেন। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলীর নামের সঙ্গে মিল রেখে গ্রামের নামকরণ করেন শমসেরনগর। তখন থেকেই শমসেরনগরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে থাকে।
মুক্তা মাহমুদ
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ