শিক্ষা
করোনাকালে একই বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ে সম্পন্ন। বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা কম বয়সেই এখন স্বামীর বাড়ীতে ঘর-সংসার করছে। সচেতনমহলের দাবি দারিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য এউপজেলায় বাল্যবিয়ের হার হু-হু করে বেড়েই চলেছে। কোন ক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে বাল্যবিবাহ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে জরিপ করে প্রকৃত বাল্যবিয়ে এবং শিশু শ্রমে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ণয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে-৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২, সপ্তম শ্রেণিতে ১১, অষ্টম শ্রেণিতে ১৭, নবম শ্রেণিতে ২৮, দশম শ্রেণিতে ১৪ ও চলতি বছরের এস এস সি পরীক্ষার্থী ১৩ জন। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্তিতি ৭০- থেকে ৯০ শতাংশ হলেও এখন উপস্থিতি হচ্ছেন ৪০-৫০ শতাংশ।
ঐ প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনি, নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানান, তারা ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই তাদের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনেক দিন পর বিদ্যালয় খোলার আনন্দের চেয়ে মন খারাবেই ছিল। বলতে তারাও খুব দুচিন্তায় ভুকছেন।
একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, অনেক পর স্কুল খুললো সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করবো, আনন্দ করবো কি আনন্দ। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলা আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলে আর আসলে না। খুবেই খুবেই মন খারাপ হলো। পরে জানতে পারি আমার ২৮ জন বান্ধবীসহ আমার স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে।
ঐ প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যান চালক বাদশা মিয়া জানান, বাহে আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা করি। জানেনতো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভাল একনা আলাপ আসছে তাই মোর মেয়েটা বিয়ে দিয়েছি।
একই প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিয়ের শিকার নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকার বাবলু মিয়া জানান, দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল ভাল করেই যা পাই তা দিয়েই কোন রকমেই চলে সংসার। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগীতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল দুচিন্তার যেন শেষ নেই। তা একনা ভাল সমন্ধ পাওয়ায় আর দেড়ি করি নাই। সাথে সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। বাল্যবিয়ে দেওয়াটা আমরা ভুল করেছি।
এ ব্যাপারে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা: মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছি। যে সব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়িও যাচ্ছি। ঐ সব শিক্ষার্থী যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাকদের সচেতন করছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মূখি করার জন্য কাজ করছি। প্রধান শিক্ষক করোনার আগেই গত দেড় বছরেই তার স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ জন্য শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। কিন্তু করোনা কালে খবর না পাওয়ায় গোপনে তার প্রতিষ্ঠানের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের শিকার হন।
ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.খয়বর আলী জানান, করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। যাতে প্রশাসনের সহযোগী আমরা পাড়ায় মহল্লায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায মোট ৭৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিয়ের প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদেও সাথে মতবিনিময় কওে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদেও নিদের্শ দেওয়া হয়ছে বলে জানান তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, তিনি বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছেন। বাল্যবিয়ে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেবিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজর প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মুখি করার কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শিক্ষা
চুয়েটে নিষিদ্ধ হলো ছাত্ররাজনীতি
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি।
বুধবার (০৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৩৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ১৩৬/১(ঘ) অনুযায়ী অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ করা হলো। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সে দাবি আরও জোরালো হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চুয়েট।
এসি//
শিক্ষা
আজ থেকে শুরু একাদশ শ্রেণির ক্লাস
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) হওয়ার কথা ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতিতে পিছিয়ে তা শুরু হচ্ছে আজ।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোকে বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) থেকে একাদশের ক্লাস শুরু করতে বলেছে। এরইমধ্যে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে পাঠানো চিঠিতে কমিটি বলছে, বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে।
এদিকে প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় বুধবার (০৭ আগস্ট) শেষ হয়েছে। তবে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির চতুর্থ ধাপের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তিন ধাপে আবেদন গ্রহণ ও শিক্ষার্থী নির্বাচনের পরও কিছু কলেজ মাদ্রাসায় সিট খালি থাকায় ও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে না পারায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির আবেদন করেননি বা আবেদন করে কলেজ সিলেকশন পাননি তারা এবং যেসব শিক্ষার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েও কলেজে ভর্তি হতে পারেননি বা নিশ্চায়ন করতে পারেননি তারা চতুর্থ ধাপে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://www.xiclassadmission.gov.bd) প্রবেশ করে নির্দেশিকা অনুসারে শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কলেজের আসন সংখ্যা দেখে ৫টি থেকে ১০টি কলেজে আবেদনের চয়েজ দিতে পারবেন। আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। ব্যাংক কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ফি পরিশোধ করতে হবে।
জানা গেছে, ১১ থেকে ১৪ আগস্ট (বুধবার) রাত ১০টা পর্যন্ত চতুর্থ বা সর্বশেষ ধাপের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৭ আগস্ট (শনিবার) রাত ৮টায় চতুর্থ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ১৮ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট (সোমবার) রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চায়ন করতে হবে। চতুর্থ ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ২০ আগস্ট (মঙ্গলবার) কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।
এসি//
শিক্ষা
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাগুলো। বুধবার (৭ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে সই করেছেন সরকারি মাধ্যমিক শাখা-২ এর উপসচিব সাইয়েদ এ. জেড মোরশেদ আলী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১১ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৪-এর পরীক্ষাসমূহ অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করে পরীক্ষা গ্রহণের বিস্তারিত সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে মর্মে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দফায় দফায় চলমান এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তিন দফায় আট দিনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বোর্ডগুলো। পরে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেয়ার কথা জানানো হয়।
চলমান পরিস্থিতিতে প্রথমে গেলো ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তৃতীয় দফায় ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সূচি অনুযায়ী যত পরীক্ষা ছিল, তা সব স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
গেলো ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন।
এসি//