বরিশাল
চোখ বেঁধে গোপন আস্তানায় নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ
দরিদ্র কিশোরীদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো গোপন আস্তানায়। এরপর বাধ্য করা হতো দেহ ব্যবসায়। সম্প্রতি বরিশালের কিছু দরিদ্র কিশোরীর সঙ্গে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক কিশোরী পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে অপহরণকারীদের সন্ধানে নামে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে এক ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এরপর বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন মহিলা কলেজ গলির হাবিব ভবনে গোপন আস্তানা থেকে অভিযুক্তদের আটক ও জিম্মিদশা থাকা কিশোরীদের উদ্ধার করা হয়।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, নির্যাতিত এক কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে চক্রটির সন্ধান পায়। সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরীসহ অভিযুক্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্যাতনের শিকার কিশোরী গণমাধ্যমকে জানায়, বরগুনার তালতলী উপজেলায় তার বাড়ি। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে একই এলাকার মেম্বার ও প্রতিবেশী এক নারী বরিশালে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় তাকে। এমনকি ওই নারী তাকে ১০ ফেব্রুয়ারি বাসে করে বরিশাল নগরীর রুপাতলীতে নিয়ে আসেন। সেখানে আনার পরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে আটকে রাখেন।
ওই কিশোরী বলে, গ্রামের সেই নারী তাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা বুঝতে পারে যখন ওই কিশোরীকে ফ্ল্যাটে নিয়ে মারধর করে। সে সেখানে গিয়ে দেখে তার চেয়েও বয়সে ছোট ৫/৬ জন কিশোরী আছে। তাদেরও এভাবে জিম্মি করে দেহ ব্যবসা করাচ্ছে। তাকে যে ব্যক্তি কিনেছেন তার নাম কালাম এবং তিনি ওই আস্তানা চালান। তার কথা না শুনলে মারধর এবং ধর্ষণ করতেন। যৌন সম্পর্কের সময় কিশোরীকে অমানবিক কষ্ট দিতেন।
১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরী বলে, তার মা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় মেম্বার ও প্রতিবেশী সেই নারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে বরিশালের আস্তানা থেকে একদিন ভোর রাতে ওই কিশোরীর চোখ বেঁধে মারধর করে গাড়িতে তুলে দেয়। মারধরের সময় তার তলপেটে একাধিকবার লাথি মেরে নির্যাতন চালান কালাম। ২২ ফেব্রুয়ারি সে তালতলি গ্রামের বাড়িতে যায়।
ওই কিশোরীর মা গণমাধ্যমকে বলেন, তার মেয়েকে কাজ দেয়ার কথা বলে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মারধর করা হতো। বাইরের লোকদের কাছে রাতযাপনের জন্য বাধ্য করা হতো। এসব কথা সে গিয়ে তাকে বলায় আমি থানায় গেলে তারা এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে মারামারির মামলা নেয়। পরে তিনি মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি মডেল থানায় গেলে পুলিশ তার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই আস্তনা খুঁজে বের করে আসামিদের আটক করে।
বরিশাল
ববিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিটিংয়ে ছাত্রলীগের হামলা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা গেট থেকে বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আহতদের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১০ আহত শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ববি সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ২০ শিক্ষার্থী ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিং করছিলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠি, রড ও পাইপ নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগের মাহমুদুল হাসান তমাল, আল সামাদ শান্ত, খালেদ হাসান, শাহরিয়ার সান, সাব্বির, জাইফ, সাইফ, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামকে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। হামলার পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের মিটিংকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের সামনেই আমাদের বেধরক মারধর করে ছাত্রলীগ।
বরিশাল নগর পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিটিং শেষ দিকে ছিলো। তখন কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও অন্য এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তারা ছাত্রলীগ কিনা তা বলতে পারবো না, তবে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত একে আরাফাতের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অংকন করতে গেলে হামলার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
কেএস/
দেশজুড়ে
বিপৎসীমার ওপরে বরিশালের ১০ নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বরিশাল নগরীসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানি প্রবাহ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাউবো জানায়, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীতে ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা নদী ৮৯ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও উমেদপুর পয়েন্টে কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী বাসিন্দা আরশাদ আলী বলেন, মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যারা বেড়িবাঁধের বাইরে থাকেন তাদের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এজন্য বাধের কূলে এক ঘরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমলে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় কেবল উপকূলীয় এলাকা নয়। জেলা শহরের ভিতরেও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে।
আই/এ
বরিশাল
বরিশাল থেকে লঞ্চ ও বাস চলাচল শুরু
বরিশালে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা এবং মেট্রেপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ দিন বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে; সড়ক পথেও চলছে যাত্রীবাহী বাস।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে বুধবার (২৪ জুলাই) বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করেছে। তবে সন্ধ্যা ৬ টার কারফিউ কঠোর থাকায় ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল করেনি।
নগরবাসী জানান, নগরে গণপরিবহন চলছে এবং ব্যাংক-বিমা-অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়াতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা ব্যক্তিরা অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। পরিস্থিতি এমনই থাকুক, আর কোনো অস্থির বা অস্থিতিশীল পরিবেশ চান না নগরবাসী।
উল্লেখ্য, কারফিউ শুরুর পর গেলো ২০ জুলাই থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
জেডএস//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন