কৃষি
‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক’ পেলেন ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান
দেশের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩’ পেয়েছেন আট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক’ দেওয়া হচ্ছে। এবার তৃতীয় বারের মতো এই সম্মাননা দেওয়া হলো।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিতদের হাতে এই সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
পুরো আয়োজনটি আরটিভির পর্দায় শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে প্রচার করা হয়।
দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩ এ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
এ ছাড়া সেরা খামারি (মৎস্য) ক্যাটাগরিতে রাজশাহীর আবু হানিফ, সেরা কৃষাণী ক্যাটাগরিতে কিশোরগঞ্জের ইসরাতুন নাঈম, সেরা কৃষি উদ্যোক্তা চাঁদপুরের নুর মোহাম্মদ, সেরা কৃষক নরসিংদীর মো. হযরত আলী, সেরা উদ্যান চাষি ঝিনাইদহের মুছা মাস্টার, সেরা কর্মকর্তা ঝিনাইদহের হাসান আলী এবং আনোয়ার সিমেন্ট শিট সেরা খামারি (প্রাণী) ক্যাটাগরিতে রেহানা আক্তার আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে আনোয়ার সিমেন্ট শিট এবং কৃষি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পপি’কে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আরটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বাবলু বলেন, সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেই চমৎকার কৃষি উদ্যোগ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমি আমার পরিবারের একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের জানাতে চাই, সেটা হলো—খাওয়ার জন্য আমাদের কখনও চাল কিনতে হয় না। গত প্রায় ২০ বছর ধরে আমার মা কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীর সেনবাগে প্রতিবছর ধানচাষ করেন। সেই জমির ধান থেকেই আমাদের সারা বছরের চালের ব্যবস্থা হয়।
তিনি বলেন, আমি গ্রামে গেলে খুব অবাক হই এটা দেখে যে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা কতোটা বদলে গেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষির যান্ত্রিকিকরণ এমন ব্যাপকভাবে হয়েছে যে এখন আর কেউ গরু দিয়ে হালচাষ করে না, ধানও কেউ হাতে মাড়ায় না। এক খণ্ড জমিতে মিশ্র পদ্ধতিতে এখন ১০ থেকে ১২ ধরনের ফসল ফলানো হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে আম, আনারস, কলা ও বাদামের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েসন করা এমনকি বিদেশে পড়াশোনা করা ছেলে-মেয়েরাও এখন কৃষিকাজে ঝুঁকছে।
আরটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমাদের শিক্ষিত তরুণরা এখন গরু-ছাগল ও মাছের খামার করার মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। আমাদের নগরবাসীরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। তারা এখন ছাদবাগান করছেন, কেউ কেউ বারান্দায় সবজি বাগান করছেন।
তিনি আরো বলেন, ছোটো ছোটো এই উদ্যোগগুলো আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, উদ্ভাবন, গবেষণা ও সৃজনশীলতায় ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে দেশের কৃষি ব্যবস্থা, তাদের মধ্য থেকে আটজন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা ‘আরটিভি এনআরবিসি ব্যাংক কৃষি পদক-২০২৩’ প্রদান করছি। আমি মনে করে, আরটিভির এই উদ্যোগ কৃষিখাতে চলমান সবুজ বিপ্লবকে আরও গতিশীল করবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ও আরটিভির ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আজকে আমাদের অর্থনীতি ও বাংলাদেশের যেই অবস্থান, এর জন্য সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ প্রাপ্য আমাদের কৃষক এবং কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টরা। কারণ, করোনাভাইরাসের মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বে যখন টালামাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। এটি আমাদের কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্যই।
আরটিভির ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমানে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। স্বাধীনতার পর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। এই কৃষকদের এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নীতির কারণে আজকে আমাদের অনেকগুলো খাদ্যপণ্য উদ্বৃত্ত এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আমরা বিশ্বের অনেক জায়গায় স্থান করে নিয়েছি। আমাদের দেশের কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আরটিভি যে কৃষি পদক দিচ্ছে এটি আমাদের কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্তদের উৎসাহিত করার জন্য। এই কাজে এনআরবিসি ব্যাংক এবং আনোয়ার গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা করছেন। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আরটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ মোরশেদ আলম এমপি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের কৃষিখাতে এক ঐতিহাসিক সবুজ বিপ্লব শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের কালরাতে দুষ্কৃতিকারীরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাত। কৃষি এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার প্রধান উৎস। এ দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে কৃষি অবলম্বন করেই। দেশের কৃষিখাতে নিয়মিত গবেষণা ও উদ্ভাবন হচ্ছে। এসব মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে তুলে ধরার দায়িত্ব গণমাধ্যমের। সেই লক্ষ্যে আরটিভি তৃতীয়বারের মতো কৃষি পদক দিচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আরটিভি গতানুগতিক একটি টেলিভিশন চ্যানেল নয়। চ্যানেলটি সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। যেগুলো আমাদের বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আমাদের বর্ণাঢ্য সমস্ত সম্ভারকে সামনে নিয়ে আসে। কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান আমরা সপরিবারের দেখার ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। সেদিক থেকে আরটিভি একটি অনন্য অসাধারণ অবস্থান ইতোমধ্যে তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, শিষ্টাচার, পরিশীলতা এবং তার ভেতর থেকে সংস্কৃতিকে কতোটা উজ্জীবিত করে নিয়ে আসা যায়। যেমন—মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক বিভিন্ন নাটক-অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অনবদ্য অবদান রাখে, তাদের কীভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়, উৎসাহ দেওয়া যায়। নানানভাবেই আরটিভি এগিয়ে চলেছে। এজন্য আরটিভির অনলাইন ভিউয়ার্সের সংখ্যা সমকালীন সময়ে অন্যান্য টেলিভিশনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে অন্ধকারের বাংলাদেশ থেকে আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের কৃষি এক অপার বিস্ময়। টুঙ্গিপাড়ার বাগিয়ারবিলের পাশ থেকে উঠে আসা একজন শেখ হাসিনা গণভবনকে পরিণত করেছেন এক আনিন্দ্য সুন্দর কৃষিখামারে। পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কবুতর, কী নাই সেখানে। এটাই হচ্ছে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক।
স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের পথচলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। সেই বাংলাদেশ আজকে অন্যান্য দেশের দুঃসময়ে-দুর্দিনে অর্থবিত্ত দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতকে এগিয়ে নিতে ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর পাশাপাশি আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসায় আমরা আরও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি উর্বরতা নিয়ে আরটিভি যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে, এর জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আরটিভির যাত্রা আরও সমৃদ্ধ হোক ও উর্বর হোক।
অনুষ্ঠানে আরো ব্ক্তব্য রাখেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, আনোয়ার গ্রপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম জাবেদ প্রমুখ।
অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন। এর ফাঁকে ফাঁকে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
কৃষি
সবজির দাম কমলেও বেড়েছে চাল-মুরগির দাম
কারফিউ পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। কিন্তু চাল, মুরগি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজধানীর বেশ কয়েটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। তবে আগের মতো বেশী দামেই ভোক্তাদের চাল, মুরগি, পেঁয়াজ ও আলু কিনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। চালের দাম কেজি প্রতি ৩-৮ টাকা বেড়েছে । গেলো সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম আবার বেড়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পটোল, পেঁপে, চালকুমড়া, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, লাউ প্রভৃতি সবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে বরবটির দাম ২০ টাকা বেড়ে ৮০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
দুই সপ্তাহ ব্যবধানে বেগুনের দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা থেকে কমে গিয়ে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ১৪০ টাকার ওপরে থাকা করলার কেজি কমে হয়েছে ৮০-১০০ টাকা।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ১০০ টাকা ও আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৪০-২০০ টাকায়।
রাজধানীতে সোনালি মুরগি ২৬০-২৮০ টাকায় ও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে তিন দিন আগেও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা, সোনালি মুরগি ২০-৩০ টাকা মুল্য হ্রাস পেয়েছিলো। ।
এদিকে ঢাকার বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৮ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে মিনিকেট নামের পরিচিত পলিশ করা চাল ৭০-৮০ ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি কেজি স্বর্ণা ও ব্রি-২৮ সর্বনিম্ন ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ।
রাজধানীতে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিমের দাম ছিল ১৫০ টাকা। তবে তিন দিন আগেও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা, সোনালি মুরগি ২০-৩০ টাকা ও ডিমের ডজন ১০ টাকা কম ছিল। মাছের দাম এখনো চড়া। প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০-২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০-২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও এখনো মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে আগের থমথমে পরিস্থিতির রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। তবে পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
জেডএস/
কৃষি
কৃষিবান্ধব নীতির ফলে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী
বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি টেকসই কৃষি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়েছে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৭ জুলাই) কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ এআইপি সম্মাননা-২০২১ প্রদানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যারা এ স্বীকৃতি পাচ্ছেন তাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করি। সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা-২০০৯, জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, জাতীয় জৈব কৃষিনীতি-২০১৬, সমন্বিত ক্ষুদ্রসেচ নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতি-২০২০, বাংলাদেশ উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা-২০২০ সহ বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় ২ কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করেছি। প্রায় ১ কোটি কৃষকের ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা খামার যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ শুরু করেছি। বর্তমানে এ ভর্তুকি ৫০ শতাংশে এ উন্নীত করা হয়েছে এবং হাওড় এলাকার জন্য তা ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে চাষাবাদ পদ্ধতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এবং কৃষিজ উৎপাদন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাল, তেল, মসলা ও ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনে ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষিঋণ চালু করা হয়েছে। কীটনাশকের ব্যবহারকে কমিয়ে আনা হয়েছে। মাটি, জলবায়ু ও এলাকা উপযোগী ফসল নির্বাচন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘ক্রপ জোনিং ম্যাপ’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তার সরকার কৃষিকে জীবিকা নির্বাহের স্তর থেকে লাভজনক ও বাণিজ্যিক পেশায় উন্নীত করে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা শস্য বহুমুখীকরণ, জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, ঋতুভিত্তিক ফলের চাষ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ভূ-উপরিস্ত পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ, প্রাণিজ আমিষ চাহিদা পূরণে ডিম ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের কৃষি তথা গ্রামের সাথে সংযোগ বৃদ্ধি করেছি। আমরা কৃষিতে ই-কৃষির প্রবর্তন করেছি। কৃষি সেবাকে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তৈরি করেছি কৃষি বাতায়ন। স্থাপন করেছি কৃষি কল সেন্টার, কৃষি কমিউনিটি রেডিও, কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র। বিভিন্ন মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষি তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম অনুধাবন করেছিলেন জ্ঞাননির্ভর আধুনিক কৃষিই উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রথম সোপান। তাই তিনি স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি দেশের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফসহ উন্নত কৃষি উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ১০০টি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেন। তার নির্দেশে কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠন করা হয়। তিনি কৃষিবিদদের চাকরি প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করেন।
সরকারপ্রধান আরও বলেন,জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। আমরা ১৯৯৬ সালে কৃষি সম্প্রসারণ নীতি প্রণয়ন করি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির সংগ্রামের এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আমাদের গৌরবজনক ‘সেরেস’ পুরস্কার প্রদান করে। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশ আবার পূর্বের খাদ্য ঘাটতি এবং আমদানি নির্ভর অবস্থায় ফিরে যায়।
প্রধানমন্ত্রী এআইপি সম্মাননা ২০২১-এর জন্য মনোনীত সকলকে আবারও অভিনন্দন জানিয়ে অনুষ্ঠানের সার্বিক সফলতা কামনা করেন।
অর্থনীতি
করলা-বেগুনের সেঞ্চুরি, ঝাল কমেছে কাঁচা মরিচের
বৃষ্টি ও সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার অজুহাতে বেড়েছে সব ধরণের সবজির দাম। করলা ও বেগুন কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তবে গেল সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচের দাম এ সপ্তাহ এসেছে কমেছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখতে পায় গণমাধ্যম।
বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, প্রতি কেজি কচু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৪০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কলা প্রতি হালি ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ এবং লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কোরবানির আগেই বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম এবার কমেছে। কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিছুটা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে রাজধানীর মালিবাগ বাজারে আসা ক্রেতা রহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে করলা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা। আর বাকি সবজিগুলোরও বাড়তি দাম। বলতে গেলে ৬০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজি নেই। এত দাম দিয়ে সবজি কিনে খেতে সাধারণ মানুষের আসলেই সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। বাজারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেদিন যখন ইচ্ছে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারে।
বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ ব্যবধানে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা দোকানে বাছায় করা পেঁয়াজ এখন ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আকারে একটু বড়। সাধারণ মানের পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
পেঁয়াজ বিক্রেতা মেহেদি হাসান জানান, পেঁয়াজের মৌসুম (বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ) যত শেষের দিকে যাচ্ছে, দাম তত বাড়ছে। আগামীতে এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে বাজারে বেড়েছে আলুর দামও। গত সপ্তাহে খুচরায় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। তবে দরদাম করলে কোনো কোনো দোকানে ৬০ টাকায় মিলছে।
রামপুরা বাজারের দোকানি শাহাদাত বলেন, ৬০ টাকায় আলু বিক্রি করলে কোনো লাভ থাকে না। কারণ, পাইকারি কেনায় পড়ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে।
এদিকে অপরিবর্তিত আছে মুরগি ও গরুর মাংসের বাজার।
এখনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
ভরা মৌসুমে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দামে খুব একটা স্বস্তি দেখা যায়নি। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং এক কেজির ইলিশ এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন