অর্থনীতি
‘করব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করতে হবে’
আগামী অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এক আলোচনায় দেশের করব্যবস্থা আরও সহজ করার সুপারিশ এসেছে। আলোচকদের অনেকই বলেছেন, করব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করতে হবে। তারা বর্তমান বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশে তার প্রভাব এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।
‘প্রাক-বাজেট আলোচনা ২০২৩-২৪: বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শিরোনামের এ আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। সমাপনী বক্তব্য দেন সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন।
আয়কর ও ভ্যাট, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অবকাঠামো খাত– এই চার বিষয়ের ওপর নির্ধারিত আলোচকরা বক্তব্য দেন। প্রত্যেক বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে ঢাকা চেম্বারের প্রস্তাবের ওপর প্রতিবেদন প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ. রহমান বলেন, যাদের আয় করযোগ্য, তাদের সবাইকে কর দিতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর উচিত এ কাজে এনবিআরকে সহযোগিতা করা। তিনি মনে করেন, করব্যবস্থা অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় হতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। তবে কর অব্যাহতি এবং ছাড় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে না।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং সময়। কভিডের সংকট সরকার সামাল দিয়েছে। বিশ্বে এখন আরেক সংকট চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও ব্যাংক বসে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী অর্থবছরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট করার সুযোগ নেই। আবার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে এনবিআরের ঊর্ধ্বতনদের কেউ নেই। এনবিআরকে ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। বিতর্কের মাধ্যমেই সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখার সুপারিশ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আয় বাড়ানো দরকার, আবার ব্যবসা–বাণিজ্যও চালু রাখা দরকার। তিনি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বেশিরভাগ কর আদায় হয় উল্লেখ করে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ব্যবসার ওপর অগ্রিম আয়করের চাপ কমানোর সুপারিশ করেন।
এ. কে. আজাদ বলেন, গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চহারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল। উদ্যোক্তারা তাতে রাজি ছিলেন। এখন বিশ্ববাজারে দাম অনেকটা কমে এসেছে। ফলে দেশে দাম সমন্বয় করা উচিত। তিনি রপ্তানি খাতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ার উৎপাদন এবং বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেলের জন্য বাজেটে সহায়তা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনায় প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, সামগ্রিক কর ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। যৌক্তিক করতে হবে। নতুন কোনো কর আরোপ না করে উদারভাবে চিন্তা করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। সব রপ্তানি খাতকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দিতে হবে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের পাশে থাকবে আইএমএফ
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে শপথ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকতে আইএমএফ ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রাণহানি ও মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায়’ আইএমএফ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ ও দেশটির মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সংস্থাটি পাশে থাকবে।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ। ইতোমধ্যেই তিন কিস্তিতে ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে সংস্থাটির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমতুল্য। সুতরাং, তাদের সমর্থন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এসি//
অর্থনীতি
আজ ব্যাংক থেকে এক লাখের বেশি টাকা তোলা যাবে না
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আজ (০৮ আগস্ট)। সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য হবে।
বুধবার (০৭ আগস্ট) রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিদের এক জরুরি বার্তায় এ নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে যেকোনো পরিমাণ নগদ টাকা স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজকের জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে শাখায় টাকা দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছে। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় গত রাতে এ সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে কোনো সরকার নেই এবং আজ নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে। এই সময়ে কেউ যাতে নগদ টাকা নিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
এসি//
অর্থনীতি
এনবিআর চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।আর বিক্ষোভের মধ্যেই চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুঞ্জন চলছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকেই এনবিআর এর প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
এনবিআরের কর্মচারীরা জানান, তারা দীর্ঘ দিন থেকে তাদের নানা দাবি ও অসুবিধা এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এসব দাবি তিনি পূরণ করেন নাই। বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনবিআর কর্মচারীদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছে মত করে চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়।
এসময়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৯ দফা দাবি জানান।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন করা যাবে না।
২। স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে আয়কর/কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
৩। অবিলম্বে স্বৈরাচারী চেয়ারম্যানের দোসর এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
৪। দুই বছর পর পর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে।
৫। অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
৬। সব কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে।
৭। আয়কর অনুবিভাগের ১০তম-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনো পদ ব্লক রাখা যাবে না।
৮। কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না।
৯। সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নেবে।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন