স্বাস্থ্য
মানবতার সেবায় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে পাঠিয়েছেন
মানবতার সেবায় কাজ করতেই যেন সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন। দেশের কোনো চিকিৎসক হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে ১৩০৫টি কিডনি প্রতিস্থাপনে (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) তিনি মাইলফলক গড়েছেন। সাফল্যের হার শতকরা ৯৫ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমকক্ষ।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম যদিও কোনো পদক বা পুরস্কারে বিশ্বাসী নন। তারপরও সরকার চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখার জন্য ২০২২ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন। চিকিৎসা সেবায় ডা. কামরুল ইসলামের এত সব অর্জনের পরও তিনি একজন মিডিয়া বিমুখ মানুষ। সব কৃতিত্বের প্রতিদান তিনি সৃষ্টিকর্তা থেকে পেতে চান।
কিডনি প্রতিস্থাপনে মাইলফলক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু প্রশ্নে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, কোনো সফলতা আসলে সবার মতো ভালোই লাগে। এজন্য সবার আগে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি মহান রবের, যিনি আমাকে এত বিরাট একটি কাজ করার জন্য জ্ঞান দান করেছেন। তিনি আমাকে সামর্থ্য দিয়েছেন বলেই কাজটি আমি চালিয়ে নিতে পারছি। তবে, আমার প্রত্যাশা এতটুকুই নয়।
আমি যখন পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাই, তারা প্রতিদিন একটি-দুটি করে করছে। আমি ভাবি, বাংলাদেশে অন্তত একটি হাসপাতাল তো থাকা উচিত যেখানে প্রতিদিন অন্তত একটি করে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে। সেই লক্ষ্য এখন আমরা প্রায় পূরণের কাছাকাছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমার চাওয়া হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই পূরণ হবে। তারপরও একটি আফসোস থেকে যাবে, কারণ প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তার খুবই ক্ষুদ্র অংশ প্রতিস্থাপনের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম: আমাদের দেশে অনেক কিডনি রোগী আছেন, এর মধ্যে প্রতি বছর নতুন করে আরও প্রায় ১০ হাজারের অধিক কিডনি রোগী যুক্ত হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশেরই দুটি কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে, এমনকি ডায়ালাইসিস লাগছে, ট্রান্সপ্ল্যান্টও করতে হচ্ছে। এত রোগীর মধ্যে আমরা গত বছর মাত্র ২১৪টি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছি। দেশে মোট রোগীর তুলনায় আমাদের এ সংখ্যা ভাবতেই অপ্রতুল মনে হয়।
দেশে বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা অনুপাতে সিকেডি হাসপাতাল কতটুকু চাহিদা পূরণ করতে পারছে?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : আমরা যখন ২০০৭ সালে এ হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট (প্রতিস্থাপন) শুরু করলাম, তখন আমাদের শঙ্কা ছিল আমরা পারব কি না, আমাদের মিশন সফল হবে কি না? এরপর আমরা ২০০৯-১০ সালের দিকে দেখলাম যে আমরা পারছি, এমনকি দিনদিন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
প্রথমদিকে আমরা মাসে একটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতাম, এরপর দুটি থেকে তিনটি। এমনকি এক পর্যায়ে সপ্তাহে একটি, দুটি করে করতে শুরু করলাম। এখন আমরা সপ্তাহে পাঁচটি করে কিডনি প্রতিস্থাপন করছি। প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি করে করলে এক মাসে ২২০ থেকে ২৩০টির মতো হয়। কিন্তু আমরা যদি প্রতি সপ্তাহে ছয়টি করে করতে পারি তাহলে প্রতি মাসে আড়াইশোর বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারব।
কিডনি প্রতিস্থাপনে আমাদের দেশে খরচটা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন হয় তামিলনাড়ুর ভেলোরে। সেখানে শুধু হাসপাতাল খরচই চলে যায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আমাদের দেশে অর্থাৎ আমাদের সিকেডি হাসপাতালে লাগে মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকা।
দেশের বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে তুলনামূলক কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ কেমন? আর সিকেডি হাসপাতালে খরচ কেমন?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম: আমার কাছে মনে হয়, কিডনি প্রতিস্থাপনে আমাদের দেশে খরচটা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন হয় তামিলনাড়ুর ভেলোরে। সেখানে শুধু হাসপাতাল খরচই চলে যায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আমাদের দেশে অর্থাৎ আমাদের সিকেডি হাসপাতালে লাগে মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকা।
সরকারি কিডনি হাসপাতালে যদি যন্ত্রপাতি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে প্রতিস্থাপনে কোনো খরচ লাগার কথা নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভবত এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাগে, যদিও সেখানে সরকারি অনেক বরাদ্দ থাকে। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর মধ্যে কিডনি ফাউন্ডেশনে দুই লাখ ৫০ থেকে ৭০ হাজারের মতো হতে পারে। বারডেম হাসপাতালে তিন লাখের বেশি, পপুলারে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এভারকেয়ারে আট থেকে নয় লাখের মতো খরচ পড়ে।
কম খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে চিকিৎসার মানের বিষয়ে ছাড় দিতে হয় কি না?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : তামিলনাড়ুর ভেলোরে যেই মানের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়, আমাদের হাসপাতালের মান কিন্তু কোনো অংশেই কম নয়। দুই হাসপাতালেই কাজ কিন্তু একই, ফলাফলও একই। গত বছর ২১৪টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছি, এগুলোর মধ্যে মাত্র ছয়টি কাজ করেনি। সেগুলো ফেলে দিয়ে আবারও প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে, কাজ না করার হার দাঁড়াবে তিন শতাংশের মতো।
সবমিলিয়ে আমাদের দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে সফলতার হার ৯৫ শতাংশের মতো। এটা কিন্তু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। কাজেই আমার মনে হয়, মানের দিক থেকে আমাদের কোনো কমতি নেই। আমাদের সীমাবদ্ধতাটা হলো, আমরা পোস্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফলোআপে কিছুটা পিছিয়ে আছি। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন যদি দেশের সব প্রাইভেট হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের হাসপাতালের মানের তুলনা করেন, তাহলেও কিন্তু দেখবেন অন্যদের চেয়ে কোনো অংশেই আমরা কম নই বরং বেশি।
আমরা হয়তো এত সুন্দর পরিবেশ দিতে পারি না, সুন্দর বিছানা, ভালো মানের এসি হয়তো দিতে পারি না। কিন্তু আমরা চিকিৎসা সেবার দিকটা ভালো করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে সার্জিক্যাল দিকটা যেন ভালো হয়, সার্জারির ফলাফলটা যাতে ভালো হয়, সে লক্ষ্যে সমস্ত যন্ত্রপাতি আমরা ব্যবহার করি। গত দুই বছরে আমরা অনেক যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছি, যাতে ট্রান্সপ্ল্যান্ট-পরবর্তী রোগীদের আরও ভালো সেবা দেয়া সম্ভব হয়।
কিডনি প্রতিস্থাপনের পর অনেক ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এর কারণ ও পরবর্তীতে করণীয় কী?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : কিডনি প্রতিস্থাপনের পর যে সব জটিলতা তৈরি হয়, এগুলোর অধিকাংশই সার্জারি রিলেটেড। এক্ষেত্রে যিনি কাজ করেন তাকে প্রতিষ্ঠানে একটু বেশি সময় দিতে হয়। একটি ট্রান্সপ্ল্যান্টে প্রায় সময়ই তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়, কিন্তু আমি এর বাইরেও আরও চার-পাঁচ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকি। দেখা গেল যে, ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর হঠাৎ একজন রোগীর ব্লিডিং হচ্ছে, সেই সময় তাকে আবারও ওটিতে নিতে হয়। জাস্ট ব্লিডিংটা বন্ধ করে দিলে রোগী আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কাজটি যদি দেরিতে করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এজন্য আমার মনে হয়, একজন চিকিৎসককে লম্বা সময় হাসপাতালে অবস্থান করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর বডি এটাকে গ্রহণ করছে না। সেক্ষেত্রে কারণটা খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। এ সময়টায় যদি চিকিৎসক কাছে না থাকেন, যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা যায় প্রতি চার থেকে পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনেরই এসব সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নিলে ৮০ শতাংশ রোগীকেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কিডনির ওষুধের লাগামহীন দামে অসংখ্য রোগী নিঃস্ব হচ্ছেন। অনেক রোগী ট্রান্সপ্ল্যান্ট-পরবর্তী সময়ে ওষুধ কিনতে না পেরে মাঝপথে চিকিৎসা থামিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এক্ষেত্রে কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : কিডনি রোগের চিকিৎসার ওষুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বক্ষেত্রেই আমাদেরকে ওষুধ কিনতে হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানকে কিনতে হয়, আবার রোগীর যখন ছুটি হয়ে যায় তখন তাকে কিনতে হয়। কিন্তু কিডনি রোগের ওষুধ আমাদের দেশে খুবই ব্যয়বহুল। কারণ, বেশির ভাগ ওষুধই এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে কিনতে হয়। তাই আমাদের ওষুধ উৎপাদনের ওপর নজর দেয়া উচিত। আগে কিডনির ওষুধগুলো ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আসত। তখন একজন রোগীর প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা ওষুধের পেছনে যেত। এখন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে আসে, ফলে খরচটাও কিছুটা কমে এসেছে। তারপরও ট্রান্সপ্ল্যান্ট-পরবর্তী সময়ে একজন রোগীর এখন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। চিকিৎসাটা যেহেতু দীর্ঘ সময়ের একটি প্রক্রিয়া, তাই আমরা বলব যে খরচটা কীভাবে আরও কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
আগে দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা কম ছিল, ফলে ওষুধের পরিমাণ কম লাগত। যে কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো কিডনি রোগের ওষুধ উৎপাদনে এগিয়ে আসত না। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় ছিল। বর্তমানে দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা অনেক, আমরা কয়েকটি কোম্পানিকে বলে বলে কিছু ওষুধ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছি। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে কিছু আসছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় এগুলো খুবই অপ্রতুল। কাজেই আমাদের দেশে এগুলো উৎপাদন হওয়া দরকার।
ওষুধগুলো এতটাই জীবনরক্ষাকারী যে এক দিনও যদি ওষুধের গ্যাপ পড়ে, তাহলে কিডনিটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো আমাদের দেশের রোগীরা গরিব, যে কারণে প্রতিনিয়ত তাদের জন্য ওষুধ কেনা কষ্টকর। এখন আমাদের ভাবতে হবে ওষুধের দামটা কীভাবে কমানো সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিকে বলেছিলাম, আপনারা অন্যান্য অনেক ওষুধ তো বিক্রি করেন, কিডনির ওষুধ একটু লাভ কম করলে রোগীদের জন্য ভালো হতো। প্রয়োজনে অন্যান্য ওষুধে লাভ একটু বেশি করে সেটি ব্যালেন্স করে নিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার প্রতিষ্ঠানেও এভাবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করি।
যেমন- আমার হাসপাতালে ট্রান্সপ্ল্যান্টকে আমি ভর্তুকি খাত হিসেবে বিবেচনা করি। এর বাইরেও আমার হাসপাতালে কিডনি স্টোন সার্জারি হচ্ছে, ক্যান্সার সার্জারি হচ্ছে, প্রোস্টেট সার্জারি হচ্ছে, অন্যান্য নেফ্রোলজিক্যাল সার্জারিগুলো আমরা করছি। সেগুলো থেকে যে আয়টা আসে, সেখান থেকে একটা অংশ আমরা ট্রান্সপ্ল্যান্টে খরচ হয়। প্রতি মাসে আমাদের হাসপাতালে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী ফলোআপে আসছেন, তাদের সম্পূর্ণ পরীক্ষা আমরা বিনা মূল্যে করে থাকি।
প্রতি মাসে আমরা প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার ওপরে পরীক্ষা বিনা মূল্যে করে দিচ্ছি। টাকাটা কিন্তু আমাদের লস হচ্ছে না, অন্যান্য খাত থেকে চলে আসছে। ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে আমি এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আপনি অন্য খাত থেকে বেশি আয় করেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা যেহেতু অত্যন্ত ব্যয়বহুল, এখান থেকে আয় একটু কম করেন। এ দায়িত্ব যে শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোর তা কিন্তু নয়, সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আমদানি করা ওষুধ ও কাঁচামালের ওপর সরকার ট্যাক্স কমাতে পারে। এতে ওষুধের দাম কিছুটা কমতে পারে। আমি সবসময় বলি, আমাদের সার্বজনীন হওয়া দরকার। ওষুধের দাম কমলে সব মানুষই উপকৃত হবেন।
কিডনির ওষুধের দাম কমাতে আর কী কী উদ্যোগ নেয়া যায়?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রত্যেককে ভাবতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আবারও কথা বলার চেষ্টা করব। তারা তো নিয়মিতই আমাদের চেম্বারে আসেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দাম কমানোর প্রস্তাব জানালে হয়তো কিছুটা কমে আসবে। আমি বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কাজ করব। আমার প্রথম টার্গেট হলো ওষুধ কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে এক টেবিলে বসা।
দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। ওষুধের দামের পাশাপাশি দেশের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায়ও আপনি দেশের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন, কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। এর পেছনের রহস্য কী?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র শ্রেণির। এমন অনেকেই আছেন যাদের সারা মাসের ওষুধ কেনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অর্থের অভাবে অসংখ্য রোগী মাঝপথে চিকিৎসাই ছেড়ে দেন। অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বিশেষ করে যারা কিডনি রোগী, চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়ায় জীবনের কাছে তাদের হার মানতে হয়েছে। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে আমি কিছু করার চেষ্টা করি।
বড় লোকদের জন্য তো দেশে অসংখ্য হাসপাতাল রয়েছে, বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যারা গরিব তারা কোথায় যাবে? তাদের কথা মাথায় নিয়ে হাসপাতালটি করা হয়েছে।
আমি যে কাজটি করছি হয়তো এটি করে আরও অনেক বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু আমার তো এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন নেই। যেটুকু আসছে সেটুকু দিয়েই ভালোভাবে আমি চলতে পারছি। অন্য একজন চিকিৎসক একটি সার্জারি করে যে টাকা উপার্জন করেন, আমি না হয় দুটি বা তিনটি সার্জারি করে তার সমপরিমাণ উপার্জন করলাম। এতে হয়তো আমার একটু খাটুনি বাড়বে, কষ্টটা বেশি হবে। কিন্তু আমার উপার্জন তো কমছে না। আপনি চাইলে কর্পোরেট হাসপাতালে একজন চিকিৎসক যে টাকা উপার্জন করছেন, আপনিও সেটি করতে পারেন। শুধু কাজের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেন।
আরেকটি বিষয় হলো, আমি সবসময় নিজেকে তুলনা করি নিচের দিকের মানুষের সঙ্গে। হাদিসে এসেছে, ‘তুমি সবসময় নিচের দিকে খেয়াল রাখ। এতে করে তোমার মনে শান্তি বেশি আসবে। ওপরের দিকে খেয়াল কর না, তাহলে অশান্তি বেশি আসবে।’ একজন রিকশাওয়ালা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে, রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে অর্থ উপার্জন করছেন। সেই তুলনায় আমি এসি রুমে বসে কাজ করছি, বলতে গেলে আমি তো রাজার হালেই আছি।
দেশে করোনা শুরু হলো, ওই সময় এবং এখনও আমার হাসপাতালে কোনো চিকিৎসার ব্যয় বাড়েনি। কারণ, একটা হাদিসে আছে- মহামারির সময় কোনো জিনিসের দাম বাড়াতে নেই। আমিও ভেবেছি, দাম বাড়াব না। দেখি না, যা হওয়ার হবে।
করোনার প্রথমদিকে আমাদের অনেক নতুন নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হলো। তারপর আবার করোনার রোগী কমে গেল। একটা সময়ে ভাবতে লাগলাম হাসপাতাল খরচ কীভাবে চালাব, স্টাফদের বেতন কীভাবে দেব। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমাদের সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলেছে। করোনায় কোনো স্টাফের বেতন আমি কমায়নি বা কর্তন করিনি। বরং প্রতি বছর বাড়িয়েছি। আমি চিন্তা করেছি, ভর্তুকি দিয়ে হলেও কাজটি চালিয়ে যাব। কিন্তু আল্লাহ পাক আমাকে সেই পরিস্থিতিতে ফেলেননি, এতটা ভর্তুকিও আমাকে দিতে হয়নি। চলেই তো যাচ্ছে, তাই আমি আর চিকিৎসার ব্যয় বাড়ানোর চিন্তা করিনি।
যতটুকু জেনেছি, কিডনি প্রতিস্থাপনে হাসপাতাল থেকে আপনাদের ভর্তুকি দিতে হয়। সেই ভর্তুকির পরিমাণ কত আর কীভাবে আপনারা এ সেবা চালিয়ে নিচ্ছেন?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : কিডনি প্রতিস্থাপনে আমাদের ভর্তুকি দিতে হয়, কিন্তু সেই পরিমাণটা খুব বেশি নয়। মোটা দাগে বলতে গেলে, আমাদের প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার পরীক্ষা ফ্রি হচ্ছে। হয়তো পরীক্ষার মূল্যমান হিসাবে এ টাকার অঙ্কটা বলা যায়, কিন্তু এটা তো পুরোপুরি আমার পকেট থেকে যাচ্ছে না। সর্বোচ্চ হয়তো ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো যাচ্ছে। কারণ, আমি যে মেশিনে ফ্রি পরীক্ষা করছি, সেই মেশিনে তো অন্য পরীক্ষাও হচ্ছে। যে লোকটা পরীক্ষাগুলো করছেন, অন্য পরীক্ষাও তাকে করতে হচ্ছে। ফ্রি ওই পরীক্ষাগুলোর জন্য তাকে বেতন বেশি দিতে হচ্ছে না। আমার হাসপাতালের যে ভাড়া, বিনা মূল্যে পরীক্ষাগুলো না করলেও তো সেই ভাড়া আমাকে দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার শুধু বিদ্যুতের খরচটা বাড়ছে, আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহৃত রি-অ্যাজেন্টগুলো আমাকে কিনতে হচ্ছে। এ খরচটাই শুধু আমার পকেট থেকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, ১০ টাকা দিয়ে যদি ১০০ টাকার লাভ মানুষকে দিতে পারি, সেটি তো আমার জন্য অনেক বড় অর্জন।
কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশে মাইলফলক গড়েছেন। আর কত দূর যেতে চান? এ পথচলা কোথায় গিয়ে থামবে?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : আমি কখনওই থামতে চাই না। এটা থামার জায়গা নয়। কারণ, রোগী তো কমে আসছে না। হয়তো রোগটা যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন আমার থামার সময় হবে। আমি না থাকলেও যেন প্রতিষ্ঠানটি অনেক রোগীকে সুস্থ জীবন দিতে পারে সেটাই আমার চাওয়া। আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি সবসময় এ দোয়া করি। শত বর্ষ ধরে যেন এ হাসপাতাল মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে পারে।
সিকেডি হাসপাতাল নিয়ে ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম : আমি সবসময় চিন্তা করি, এখন আমরা যে পর্যায়ে আছি এর গুণগত মান কীভাবে আরও বাড়ানো যায়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা হয়তো এখনও পিছিয়ে আছি, বিষয়গুলো নিয়ে আমার কাজ করার ইচ্ছা আছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। আরেকটি বিষয় হলো, যে সব কাজ আমাদের দেশে ভালোভাবে হচ্ছে না অথবা কম হচ্ছে, বিশেষ করে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট, বোনম্যারু ট্রান্সপ্ল্যান্ট— এগুলোও আমাদের দেশে বেশি করে করা দরকার। কিন্তু কাজগুলো কে করবে?
আমি কখনওই থামতে চাই না। এটা থামার জায়গা নয়। কারণ, রোগী তো কম আসছে না। হয়তো রোগটা যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন আমার থামার সময় হবে। আমি না থাকলেও যেন প্রতিষ্ঠানটি অনেক রোগীকে সুস্থ জীবন দিতে পারে সেটাই আমার চাওয়া। আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি সবসময় এ দোয়া করি। শত বর্ষ ধরে যেন এ হাসপাতাল মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে পারে
আমার অনেক চিকিৎসক বন্ধু রয়েছেন যারা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট, বোনম্যারু ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে আগ্রহী। এমন কিছু চিকিৎসককে নিয়ে একটা গ্রুপ করে কাজগুলো আমরা করতে পারি কি না, এটি আমার চেষ্টায় থাকবে। এতে অসংখ্য রোগীকে আর বিদেশে যেতে হবে না।
অর্থাৎ সামনের দিনে আমরা দুটি কাজ করতে চাই। প্রথমত, আমাদের গুণগত মান বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয়ত হলো, চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেতে বিশ্বে যা চলছে, আমাদের দেশেও তেমনটি করা। সবসময় আমার চেষ্টা থাকবে দেশের গরিব জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
এক নজরে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম
ব্যক্তিজীবনে কামরুল ইসলাম তিন কন্যাসন্তানের জনক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা আমিনুল ইসলাম পাকশী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করায় স্থানীয় রাজাকার ও বিহারিরা তাকে হত্যা করেন।
১৯৮০ সালে তিনি পাবনার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং মেধা তালিকায় রাজশাহী বিভাগে ১৫তম স্থান অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০ম স্থান অর্জন করেন।
কামরুল ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে আটটি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস এবং ২০০০ সালে বিএসএমএমইউ থেকে ইউরোলজিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ থেকে তিনি এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
কামরুল ইসলাম ১৯৯৩ সালে বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজ করেন। জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক থাকাকালে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্যামলীতে কিডনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল।
চিকিৎসা বিদ্যায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০২২ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
স্বাস্থ্য
মেডিকেল কলেজের মান বাড়লে আরও দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মেডিকেল কলেজগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। মেডিকেল কলেজগুলো ডাক্তার তৈরি করে। মেডিকেল কলেজগুলোর মান বাড়লে এবং উন্নত যুগোপযোগী শিক্ষা দিলে সুদক্ষ ডাক্তার পাওয়া যাবে। বলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
রোববার ( ১৪ জুলাই ) দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীবলেন, দেশে বিদ্যমান মেডিকেল কলেজগুলোর মান বৃদ্ধি পেলে আরও বেশি দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মেডিকেল প্রফেশনাল এবং রোগীদের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি শেষ পর্যায়ে আছে। ইতোমধ্যে অনেকবার এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। এই আইন রোগী এবং ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের চিকিৎসকদের মান অনেক ভালো কিন্তু তাদের আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তাহলে চিকিৎসকরা একটা ভালোপর্যায় যেতে পারবে। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরাপ্রশ্ন তোলেন ডাক্তার নেই। সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ডাক্তার সংকট কাটানোর জন্য আরও নতুন করে কিছু চিকিৎসক নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, অচিরেই সংকট কাটিয়ে উঠবে।
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এএফএম নূরুউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ।
এএম/
রোগব্যাধি
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন হয়, ব্যথা কমাতে করণীয়
অনেকের সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মেঝেতে পা ফেলার সময় ব্যথা লাগে। অথবা সারাদিনের কাজের পর রাতে পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ঘুমাতে কষ্ট হয়। অনেকের আবার অনেকক্ষণ বসে কাজ করার পর দাঁড়ালেও গোড়ালি ব্যথা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রকম ব্যথার কারণ পায়ের পাতার নিচে প্রদাহ বা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা কেন হয়?
আমাদের পায়ের সামনের দিকে ছোট ছোট কিছু হাড় আছে যেগুলো ব্যান্ডের মতো লিগামেন্ট দিয়ে পেছনের দিকে গোড়ালির হাড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই লিগামেন্টকে প্লান্টার ফাসা বলে। শরীরের ওজন যেন সরাসরি পায়ের হাড়ের উপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারে, সে জন্য এই ব্যান্ড কাজ করে। এই ব্যান্ডে প্রদাহ হলে গোড়ালিতে ব্যথা হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।
প্লান্টার ফ্যাসাইটিসে ভুগছেন কিনা যেভাবে বুঝবেন
# সকালে বিছানা থেকে নেমে পা ফেলার সাথে সাথেই গোড়ালিতে ব্যথা হলে
# দীর্ঘসময় বসে থাকার পর হাঁটার সময় ব্যথা হলে
# সকালে গোড়ালি শক্ত হয়ে প্রচন্ড ব্যথা হলে
# সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় ব্যথা বেড়ে গেলে
# কখনও কখনও গোড়ালি ফুলে যেতে পারে
# অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যথা বেড়ে গেলে
# পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা বা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস
কোন কারণে এ সমস্যা হয়?
প্লান্টার ফাসাতে অতিরিক্ত টান পড়লে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হয়। সাধারণত পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের এই সমস্যা বেশি হয়। এছাড়াও আরও নানা কারণে এমনটি হতে পারে। যেমন-
১. কোনো কারণে প্লান্টার ফাসা মচকে গেলে
২. অতিরিক্ত ওজন
৩. হঠাৎ করেই বেশি ব্যায়াম করলে
৪. প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে থাকলে
৫. অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে
৬. উঁচু হিল পরে অভ্যাস থাকার পর হঠাৎ করে ফ্ল্যাট জুতা পরলে
৭. পায়ের পাতা সমতল থাকলে কিংবা অস্বাভাবিক বাঁকা থাকলে
৮. পায়ের পাতা অস্বাভাবিক অবস্থানে রাখলে
এই সমস্যার ঝুঁকিতে কারা আছেন?
১. ৪০-৬০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
২. দৌড়, নৃত্য ইত্যাদির কারণে গোড়ালিতে চাপ পড়ে। নিয়মিত যারা এগুলো করেন তাদের মধ্যে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
৩. ওজন বেশি হলে, দীর্ঘ সময় কোনো পেশাতে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলে এবং গর্ভবতী নারীদের ডেলিভারি হওয়ার কিছুদিন আগে এই সমস্যা হতে পারে।
৪. এছাড়া যারা আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডেলাইটিসে ভুগছেন, দীর্ঘদিন শক্ত হিলের জুতো ব্যবহার করছেন এমন ব্যক্তিও প্লান্টার ফ্যাসাইটিসের ঝুঁকিতে আছেন।
৫. অনেকের পায়ে গঠনগত সমস্যা থাকে, যেমন- ফ্ল্যাট ফুট সমস্যা। এটিও গোড়ালি ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
সহজ কয়েকটি ব্যায়াম
রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিটের এই ব্যায়ামগুলো করলে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। সেই সাথে গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার চান্সও কমে যাবে অনেকটাই।
১. মেঝেতে একটা তোয়ালে বা কাপড় রাখুন। এবার ওটার উপর পা দিয়ে সামনের আঙুলগুলো দিয়ে তোয়ালেটিকে আঁকড়ে ধরুন এবং নিজের দিকে আনতে চেষ্টা করুন। অন্য পা দিয়েও ব্যায়ামটি করুন।
২. ব্যায়ামের পর একটা স্বস্তিকর আরামদায়ক ঘুমের জন্য খানিকক্ষণ পায়ের পাতায় মালিশ (ফুট ম্যাসাজ) করে নিন। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো, ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বল মেঝেতে রেখে তার ওপর পায়ের পাতা দিয়ে চেপে ধরে নাড়ানো। দুই পায়ে ৩০ সেকেন্ড এই ব্যায়াম করুন। এতে পায়ের পাতা রিলাক্সড হবে।
ব্যথা কমাতে করণীয়
১) ঘরোয়াভাবে ব্যথা কমাতে তেল দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যাসাজ করুন। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ল্যাভেন্ডার অয়েলের প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যথার জন্য ভালো কাজ করে। অলিভ বা নারকেল তেলের সাথে এক বা দুই ফোঁটা এই অয়েল মিশিয়ে পায়ের তলায় ম্যাসাজ করুন। তারপর একটি পাত্রে উষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল দিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন।
২) এমন জুতা পরার চেষ্টা করুন যেটা পায়ের গোড়ালিকে ভালো সাপোর্ট দেয়, বিশেষ করে যদি আপনার পায়ে চলাচল বেশি হয়ে থাকে।
৩) প্লান্টার ফ্যাসাইটিস এর সমস্যা কমাতে নাইট স্প্লিন্ট (night splint) বেশ কার্যকর। রাতভর পায়ের গোড়ালিকে নিউট্রাল পজিশনে রাখতে এটি হেল্প করে। কমপক্ষে ছয় মাস ধরে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস আছে এমন রোগীদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। বেশিরভাগই এক থেকে তিন মাসের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং নাইট স্প্লিন্ট হার্ড ও সফট দুটো মডেলেই পাওয়া যায়।
চিকিৎসা
- ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে
- প্রয়োজন অনুসারে ফিজিওথেরাপি, যেমন- ওয়াক্স, হাইড্রোথেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দিতে হবে
- ফিজিওথেরাপিস্টের দেখানো এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং করতে হবে
- বরফের ব্যবহারে ঘরোয়াভাবে ব্যথা কমানো যায়
- প্রয়োজন অনুসারে অনেক সময় অর্থোটিকস ব্যবহার করতে হয়
- যদি কোনোটাতেই ব্যথা না কমে, তাহলে অপারেশন করতে হতে পারে
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হলে হাঁটতে কষ্ট হতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন এই ব্যথা না হয়। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে আগে থেকেই। আর ব্যথা হলে ঘরোয়া উপায়ে চেষ্টা করুন কমানোর জন্য। যদি কোনোভাবেই ব্যথা কমানো না যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেএইচ
আন্তর্জাতিক
আবারও ভয়ংকর রূপে করোনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা
আবারও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাস। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলো সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৭০০ মানুষের। করোনাভাইরাস এর এমন ভয়াবহ রূপ তুলে ধরেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।
শুক্রবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়,হঠাৎ এমন মৃত্যুর পর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অতিদ্রুত করোনারোধী টিকা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।এছাড়া ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের হার হ্রাসের বিষয়েও সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
সংস্থাটির মহাপরিচালক জানান, ক্রমাগত মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আসা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ভ্যাকসিনের কভারেজ হ্রাস পেয়েছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তারাও রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকদের শেষ ডোজ নেয়ার ১২ মাসের মধ্যে আবারও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে ডব্লিউএইচও সুপারিশ করছে।
একইসঙ্গে ভাইরাস নজরদারি এবং সিকোয়েন্সিং বজায় রাখতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে এবং নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন