স্বাস্থ্য
‘বিনামূল্যে’ সেবা দিতে ক্যান্সার হাসপাতাল বানাতে চান সাকিবরা
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে সারা বিশ্বে যার পরিচিতি, সেই সাকিব আল হাসানকে এখন মানুষ চিনতে শুরু করেছে ভিন্ন এক পরিচয়ে। ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং আক্রান্তদের দ্রুততম সময়ে শনাক্তকরণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হওয়া তার মহতী উদ্যোগের নাম ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’।
ভবিষ্যতে দেশের গরীব ও অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দিতে বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে ফাউন্ডেশনটির।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশনটিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও এটির মূল উদ্যোক্তা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাবেক ক্রিকেটার কাফি খান। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সাবেক ছাত্র কাফি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন।
জানা গেছে, সাকিব-কাফির একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্রিকেটার জাফর সাদেক রাসেল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার স্মরণে এবং দেশের অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এ স্বপ্নের যাত্রা। মাঝপথে আরেক বন্ধু ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল এবং সাকিব আল হাসানের শ্বশুর-শাশুড়িও ক্যান্সারে মারা যান। তাদের মৃত্যু সেই স্বপ্নকে একটি ফাউন্ডেশন আকারে দাঁড় করানোর রসদ জুগিয়েছে। শুরুতে পরিকল্পনায় ছিল ফাউন্ডেশনটির নাম হবে ‘রাসেল স্মৃতি ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’। পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে নামকরণ করা হয় সাকিব আল হাসানের নামে।
সাবেক ও বর্তমান নয় ক্রিকেটার ২০১৭ সাল থেকে ফাউন্ডেশনটি তৈরির বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করেন। মাঝপথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মোশাররফ হোসেন রুবেল মারা যান। তার প্রয়াণে উদ্যোক্তার সংখ্যা দাঁড়ায় আটে। অলরাউন্ডার সাকিব (ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট) ছাড়াও তালিকায় আছেন কাফি খান (সেক্রেটারি), ক্রিকেটার নাঈম ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক রাজ, নাসিরুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী শুভ, কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও সারোয়ার ইমরান।
যেভাবে যাত্রা শুরু হয় সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের
ফাউন্ডেশনটির উদ্যোক্তা কাফি খান জানান, বিকেএসপিতে তার সহপাঠী ও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জাফর সাদেক রাসেল। তিনি মাত্র ৩১ বছর বয়সে মারা যান ক্যান্সারে। ক্যান্সার ধরা পড়তে পড়তে অনেক সময় পার হয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও চেন্নাইয়ে প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছেন তিনি।
কাফি বলেন, ‘২০১৬ সালে হঠাৎ করে রাসেলের ক্যান্সার ধরা পড়ে। এমনকি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে মারা যায়। ওই সময় ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা ছিল না। যে কারণে রোগটির বিষয়ে বুঝতে বুঝতে অনেক সময় চলে যায়। এমনকি দেশের দুই হাসপাতালে পরীক্ষায় তার রিপোর্ট দুই রকম আসে। যে কারণে আমরাও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। সবমিলিয়ে চিকিৎসায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়। সে সময় আমাদের করণীয় কী, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না!’
‘আমার বন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি শেষ সময়ে তার কী পরিণতি হয়েছিল! ওই সময় আমার কাছে মনে হয়েছে, ক্যান্সারে আমাদেরই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে অসহায়, গরীব বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তো চিকিৎসার কথা চিন্তাই করতে পারবে না।’
‘একটা পর্যায়ে যখন রাসেল মারা যায়, তখন সাধারণ মানুষদের নিয়ে আমাদের ভাবনাগুলো কোচ ফাহিম স্যার ও ইমরান স্যারের সঙ্গে আলোচনা করি। পরে ক্রিকেটার নাঈম ও সাকিবের সঙ্গেও আলোচনা করি। তাদের বোঝাতে সক্ষম হই যে ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা নিয়ে আমাদের কিছু করা উচিত। কারণ, অনেক মানুষ আছেন যারা আর্লি ডিটেকশনের কোনো সুযোগ পান না। এ অবস্থায় আমরা যদি একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন করতে পারি, তাহলে আমাদের মাধ্যমে অসংখ্য ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।’
মাঝপথে ক্যান্সারেই প্রাণ হারান অন্যতম উদ্যোক্তা রুবেল
কাফি খান বলেন, শুরুতে আমরা মোট নয়জন ছিলাম। ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল ছিলেন আমাদের সঙ্গে। তিনিও ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। রুবেল ভাই মারা যাওয়ার পর আমরা এখন আটজন আছি। এছাড়া আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন সাকিব আল হাসানের স্ত্রী শিশির। উনিও ক্যান্সারে মা-বাবাকে হারিয়েছেন।
‘শুরুতে ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন প্রসঙ্গে সবাই একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। পরে আমি বলি, মানুষ যদি তাদের যাকাত-সাদকাসহ বিশেষ কিছু ডোনেশন এখানে দেয় তাহলে আমরা কাজটি এগিয়ে নিতে পারি। বিষয়গুলো যখন আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করি তখন সবাই রাজি হয়। বিশেষ করে সাকিব, সবার আগে সে কাজটি করতে উৎসাহ দেয় এবং সঙ্গে থাকবে বলে জানায়।’
বিকেএসপির সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা ফাউন্ডেশন তৈরির বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকি। এরপর তো করোনা মহামারি চলে এলো। কাজগুলো আর এগিয়ে নিতে পারিনি। তবে, ২০২১ সালে আমরা আমাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি। এরপর থেকে আমরা পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করি।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা যেসব সেবা পাবেন
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা কী কী সেবা পাবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি বলেন, যারা অর্থের ভাবে ডায়াগনোসিস পর্যন্ত যেতে পারেন না, তাদের যদি অল্প সহযোগিতা করা যায় অন্তত রোগটি শনাক্ত হবে। অর্থাৎ শুরুতে আমরা ডায়াগনোসিসটার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। কেউ যদি এসে বলে এবং প্রমাণ দিতে পারে যে ক্যান্সার ডায়াগনোসিসে তার কোনো সামর্থ্য নেই, আমরা তখন তাকে নিয়ে কাজ করব। এক্ষেত্রে যখন আমাদের ফান্ডিংটা আরও মজবুত হবে, নিয়মিত ফান্ডিং আসতে থাকবে তখন আমরা চিন্তা করব এবং কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে মিলে এ কাজগুলো করতে পারি কি না।
‘এর বাইরে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব। কারণ, গ্রামাঞ্চলে এখনও অসংখ্য মানুষ ক্যান্সার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমাদের আলাদা একটি টিম থাকবে যারা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় এসব সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আমাদের টিমে কিছু চিকিৎসকও থাকবেন। সাধারণ মানুষ সরাসরি তাদের কথা শুনবেন এবং সচেতন হবেন।’
‘আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ হলো ফান্ডিং। প্রাথমিকভাবে আমাদের হয়তো ডায়াগনোসিসগুলো বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে করতে হবে। কিন্তু একটা সময় যখন আমাদের সক্ষমতা হবে, তখন আমরা চিন্তা করব নিজেরাই একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি করার। তখন আমরা নিজেরাই সরাসরি রোগীদের ডায়াগনোসিস করে দিতে পারব।’
সহযোগিতা পেতে যোগাযোগ ও রোগীদের করণীয়
সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের মূল উদ্যোক্তা কাফি খান বলেন, আমাদের ইচ্ছা আছে একটা কল সেন্টার করব। এটা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। কল সেন্টারে আমাদের যে টিম থাকবে, তাদের কিছু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া থাকবে। বিশেষ করে কিছু প্রশ্ন থাকবে, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই রোগীদের বাছাই করতে পারব। এরপর আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
ভবিষ্যতে ফাউন্ডেশনকে কোন অবস্থানে নিতে চান— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা বলছি শুধু সচেতনতা আর ডায়াগনোসিসের কথা। কিন্তু আমাদের আল্টিমেট গোল হলো ভবিষ্যতে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করা। যারা অর্থের অভাবে চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না, তাদের আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
‘একই সঙ্গে আমাদের হাসপাতালে ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার থাকবে, রেডিয়েশন থেরাপি ইউনিট থাকবে। একটা সময়ে এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজ নির্মাণেরও চেষ্টা থাকবে। তবে, সবকিছুর মূলে থাকবে ক্যান্সার চিকিৎসা ও গবেষণা’— যুক্ত করেন কাফি খান।
ক্যান্সার নিয়ে কাজ করতে পারায় খুশি সাকিব আল হাসানও
‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’ প্রসঙ্গে ক্রিকেটার সাকিব বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছি। চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকার। কিন্তু এবার আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু করতে চাই। ক্যান্সার ফাউন্ডেশন করার পেছনে সত্যিকার অর্থে এটাই প্রধান কারণ। এ উদ্যোগে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
‘ক্যান্সার এমন একটি অসুখ যাকে সবাই মরণব্যাধি বলে। কিন্তু এ মরণব্যাধির ভয়ে তো আর পিছিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের এ অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। মানুষকে সাহস দিতে হবে, ক্যান্সার আক্রান্তদের আশা দিতে হবে। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা এ কাজগুলো করতে চাই।’
‘ক্যান্সার নিয়ে আমার জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা আছে। দুই বছর আগে শিশিরের (সাকিবের স্ত্রী) বাবা ও মাকে আমরা ক্যান্সারে হারিয়েছি। আমরা চাই আর কোনো মা-বাবাকে ক্যান্সারে এভাবে যেন হারিয়ে ফেলতে না হয়।’
“আমাদের যাত্রা যত ক্ষুদ্র অবস্থা থেকেই হোক না কেন, ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’ ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের জন্য কাজ করতে চায়। আপনারা জানেন এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমরা কাজটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চাই। ক্যান্সার ডায়াগনোসিস করার সামর্থ্য যাদের নেই— এমন একজন, ১০০ জন বা হাজার জনকেও যদি আমরা সহযোগিতা করতে পারি, আমরা মনে করি সেটাই আমাদের জন্য বড় অর্জন হবে”— বলেন সাকিব আল হাসান।
ক্যান্সার ফাউন্ডেশন নিয়ে সাকিবের যত স্বপ্ন
সাকিব বলেন, আমাদের স্বপ্নটা অনেক বড়। আমরা চাই দেশে একটি উন্নতমানের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করতে। যেখানে ক্যান্সারের পরিপূর্ণ ও আধুনিক সব চিকিৎসা থাকবে। সেখানে একদম কম খরচে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে মানুষ হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে। এক সময় সবাই গর্ব করে বলবে বাংলাদেশে এমন একটি হাসপাতাল আছে। যা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করা হয়তো এখনই সম্ভব নয়, কিন্তু এক দিন অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে, ইনশাআল্লাহ।
‘এর আগে আমরা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করতে চাই। তারও আগে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি মনে করি, চিকিৎসার চেয়ে ক্যান্সার সচেতনতা অনেক বেশি জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা যদি আর্লি স্টেজে ডিটেকশন করতে পারি, তাহলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।’
ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট ও ডায়াগনোসিস খুবই ব্যয়বহুল। এজন্য আমাদের অনেক বেশি সহায়তা প্রয়োজন। আমার মতো ক্রিকেটের সঙ্গে যারা আছেন, সাধারণ মানুষ যারা আছেন বা দেশের বাইরে যারা আছেন এবং ক্যান্সার নিয়ে কাজ করতে চান, তারা সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।’
সাকিবদের পাশে থাকার ঘোষণা বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির
সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগের প্রশংসা করে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, ‘ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং শুরুর দিকে ধরতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যান্সার হলে যে মানুষ মারা যাবে, জীবন শেষ— এমন পরিস্থিতি এখন কিন্তু নেই। রোগটা যদি আমরা দ্রুত শনাক্ত করতে পারি এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারি, তাহলে এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব। প্রতি বছর অসংখ্য ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।’
‘ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতাটা খুবই জরুরি। সে লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে সাকিব আল হাসান ক্যানসার ফাউন্ডেশন। এখন থেকে ক্যান্সার সচেতনতার সঙ্গে দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম থাকবে— এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।’
বিসিবি সভাপতি বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরও বেশি কঠিন। তবে, আমরা যদি মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারি; সেই সঙ্গে দ্রুত শনাক্ত করতে পারি, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের হারও কমে আসবে।
এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক সচেতন। এর অন্যতম একটি কারণ, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আরেকটি কারণ হলো, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে মানুষ ক্যান্সারের নানা কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে পারছে। এখন যদি আমরা সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আরেকটু কাজ করতে পারি, বিশেষ করে মানুষের কাছে সচেতনতাকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে ক্যান্সার প্রতিরোধে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।’
সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে পাপন বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি। ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা ক্যান্সারের ওষুধগুলো বানাচ্ছে, তারাও যখন যা প্রয়োজন তা দিয়ে সহযোগিতা করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার তরফ থেকে শুধু সাকিব বলে নয়, সবার জন্য পুরোপুরি সাপোর্ট থাকবে।’
স্বাস্থ্য
মেডিকেল কলেজের মান বাড়লে আরও দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মেডিকেল কলেজগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। মেডিকেল কলেজগুলো ডাক্তার তৈরি করে। মেডিকেল কলেজগুলোর মান বাড়লে এবং উন্নত যুগোপযোগী শিক্ষা দিলে সুদক্ষ ডাক্তার পাওয়া যাবে। বলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
রোববার ( ১৪ জুলাই ) দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীবলেন, দেশে বিদ্যমান মেডিকেল কলেজগুলোর মান বৃদ্ধি পেলে আরও বেশি দক্ষ চিকিৎসক তৈরি হবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মেডিকেল প্রফেশনাল এবং রোগীদের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি শেষ পর্যায়ে আছে। ইতোমধ্যে অনেকবার এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে। এই আইন রোগী এবং ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের চিকিৎসকদের মান অনেক ভালো কিন্তু তাদের আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তাহলে চিকিৎসকরা একটা ভালোপর্যায় যেতে পারবে। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরাপ্রশ্ন তোলেন ডাক্তার নেই। সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ডাক্তার সংকট কাটানোর জন্য আরও নতুন করে কিছু চিকিৎসক নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, অচিরেই সংকট কাটিয়ে উঠবে।
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এএফএম নূরুউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ।
এএম/
রোগব্যাধি
পায়ের গোড়ালি ব্যথা কেন হয়, ব্যথা কমাতে করণীয়
অনেকের সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মেঝেতে পা ফেলার সময় ব্যথা লাগে। অথবা সারাদিনের কাজের পর রাতে পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ঘুমাতে কষ্ট হয়। অনেকের আবার অনেকক্ষণ বসে কাজ করার পর দাঁড়ালেও গোড়ালি ব্যথা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রকম ব্যথার কারণ পায়ের পাতার নিচে প্রদাহ বা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা কেন হয়?
আমাদের পায়ের সামনের দিকে ছোট ছোট কিছু হাড় আছে যেগুলো ব্যান্ডের মতো লিগামেন্ট দিয়ে পেছনের দিকে গোড়ালির হাড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই লিগামেন্টকে প্লান্টার ফাসা বলে। শরীরের ওজন যেন সরাসরি পায়ের হাড়ের উপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারে, সে জন্য এই ব্যান্ড কাজ করে। এই ব্যান্ডে প্রদাহ হলে গোড়ালিতে ব্যথা হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।
প্লান্টার ফ্যাসাইটিসে ভুগছেন কিনা যেভাবে বুঝবেন
# সকালে বিছানা থেকে নেমে পা ফেলার সাথে সাথেই গোড়ালিতে ব্যথা হলে
# দীর্ঘসময় বসে থাকার পর হাঁটার সময় ব্যথা হলে
# সকালে গোড়ালি শক্ত হয়ে প্রচন্ড ব্যথা হলে
# সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় ব্যথা বেড়ে গেলে
# কখনও কখনও গোড়ালি ফুলে যেতে পারে
# অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যথা বেড়ে গেলে
# পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা বা প্লান্টার ফ্যাসাইটিস
কোন কারণে এ সমস্যা হয়?
প্লান্টার ফাসাতে অতিরিক্ত টান পড়লে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হয়। সাধারণত পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের এই সমস্যা বেশি হয়। এছাড়াও আরও নানা কারণে এমনটি হতে পারে। যেমন-
১. কোনো কারণে প্লান্টার ফাসা মচকে গেলে
২. অতিরিক্ত ওজন
৩. হঠাৎ করেই বেশি ব্যায়াম করলে
৪. প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে থাকলে
৫. অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে
৬. উঁচু হিল পরে অভ্যাস থাকার পর হঠাৎ করে ফ্ল্যাট জুতা পরলে
৭. পায়ের পাতা সমতল থাকলে কিংবা অস্বাভাবিক বাঁকা থাকলে
৮. পায়ের পাতা অস্বাভাবিক অবস্থানে রাখলে
এই সমস্যার ঝুঁকিতে কারা আছেন?
১. ৪০-৬০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
২. দৌড়, নৃত্য ইত্যাদির কারণে গোড়ালিতে চাপ পড়ে। নিয়মিত যারা এগুলো করেন তাদের মধ্যে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
৩. ওজন বেশি হলে, দীর্ঘ সময় কোনো পেশাতে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলে এবং গর্ভবতী নারীদের ডেলিভারি হওয়ার কিছুদিন আগে এই সমস্যা হতে পারে।
৪. এছাড়া যারা আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডেলাইটিসে ভুগছেন, দীর্ঘদিন শক্ত হিলের জুতো ব্যবহার করছেন এমন ব্যক্তিও প্লান্টার ফ্যাসাইটিসের ঝুঁকিতে আছেন।
৫. অনেকের পায়ে গঠনগত সমস্যা থাকে, যেমন- ফ্ল্যাট ফুট সমস্যা। এটিও গোড়ালি ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।
সহজ কয়েকটি ব্যায়াম
রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিটের এই ব্যায়ামগুলো করলে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। সেই সাথে গোড়ালিতে ব্যথা হওয়ার চান্সও কমে যাবে অনেকটাই।
১. মেঝেতে একটা তোয়ালে বা কাপড় রাখুন। এবার ওটার উপর পা দিয়ে সামনের আঙুলগুলো দিয়ে তোয়ালেটিকে আঁকড়ে ধরুন এবং নিজের দিকে আনতে চেষ্টা করুন। অন্য পা দিয়েও ব্যায়ামটি করুন।
২. ব্যায়ামের পর একটা স্বস্তিকর আরামদায়ক ঘুমের জন্য খানিকক্ষণ পায়ের পাতায় মালিশ (ফুট ম্যাসাজ) করে নিন। সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো, ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বল মেঝেতে রেখে তার ওপর পায়ের পাতা দিয়ে চেপে ধরে নাড়ানো। দুই পায়ে ৩০ সেকেন্ড এই ব্যায়াম করুন। এতে পায়ের পাতা রিলাক্সড হবে।
ব্যথা কমাতে করণীয়
১) ঘরোয়াভাবে ব্যথা কমাতে তেল দিয়ে পায়ের পাতায় ম্যাসাজ করুন। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ল্যাভেন্ডার অয়েলের প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যথার জন্য ভালো কাজ করে। অলিভ বা নারকেল তেলের সাথে এক বা দুই ফোঁটা এই অয়েল মিশিয়ে পায়ের তলায় ম্যাসাজ করুন। তারপর একটি পাত্রে উষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল দিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন।
২) এমন জুতা পরার চেষ্টা করুন যেটা পায়ের গোড়ালিকে ভালো সাপোর্ট দেয়, বিশেষ করে যদি আপনার পায়ে চলাচল বেশি হয়ে থাকে।
৩) প্লান্টার ফ্যাসাইটিস এর সমস্যা কমাতে নাইট স্প্লিন্ট (night splint) বেশ কার্যকর। রাতভর পায়ের গোড়ালিকে নিউট্রাল পজিশনে রাখতে এটি হেল্প করে। কমপক্ষে ছয় মাস ধরে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস আছে এমন রোগীদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। বেশিরভাগই এক থেকে তিন মাসের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং নাইট স্প্লিন্ট হার্ড ও সফট দুটো মডেলেই পাওয়া যায়।
চিকিৎসা
- ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে
- প্রয়োজন অনুসারে ফিজিওথেরাপি, যেমন- ওয়াক্স, হাইড্রোথেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দিতে হবে
- ফিজিওথেরাপিস্টের দেখানো এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং করতে হবে
- বরফের ব্যবহারে ঘরোয়াভাবে ব্যথা কমানো যায়
- প্রয়োজন অনুসারে অনেক সময় অর্থোটিকস ব্যবহার করতে হয়
- যদি কোনোটাতেই ব্যথা না কমে, তাহলে অপারেশন করতে হতে পারে
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হলে হাঁটতে কষ্ট হতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন এই ব্যথা না হয়। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে আগে থেকেই। আর ব্যথা হলে ঘরোয়া উপায়ে চেষ্টা করুন কমানোর জন্য। যদি কোনোভাবেই ব্যথা কমানো না যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেএইচ
আন্তর্জাতিক
আবারও ভয়ংকর রূপে করোনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা
আবারও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাস। সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলো সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৭০০ মানুষের। করোনাভাইরাস এর এমন ভয়াবহ রূপ তুলে ধরেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।
শুক্রবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়,হঠাৎ এমন মৃত্যুর পর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অতিদ্রুত করোনারোধী টিকা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।এছাড়া ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের হার হ্রাসের বিষয়েও সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
সংস্থাটির মহাপরিচালক জানান, ক্রমাগত মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আসা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ভ্যাকসিনের কভারেজ হ্রাস পেয়েছে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তারাও রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকদের শেষ ডোজ নেয়ার ১২ মাসের মধ্যে আবারও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে ডব্লিউএইচও সুপারিশ করছে।
একইসঙ্গে ভাইরাস নজরদারি এবং সিকোয়েন্সিং বজায় রাখতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে এবং নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন