আন্তর্জাতিক
ফিলিস্তিনিদের সহায়তা স্থগিত করছে জাতিসংঘ
ফিলিস্তিনিদের খাদ্য সহায়তা স্থগিত করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তাকারী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তহবিলের ‘তীব্র’ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি। এতে করে সংকটের মুখে পড়তে পারেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
রোববার (৭ মে) ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর জন্য এই সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তহবিলের ‘তীব্র’ ঘাটতির কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) আগামী মাস থেকে ২ লাখ ফিলিস্তিনির খাদ্য সহায়তা স্থগিত করবে বলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোর দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির সিনিয়র এক কর্মকর্তা রোববার বলেছেন।
ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সামের আবদেলজাবের জেরুজালেম থেকে ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘তীব্র তহবিলের ঘাটতির কারণে বেদনাদায়ক এই বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে ডব্লিউএফপি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জুন মাস থেকে ডব্লিউএফপিকে ২ লাখেরও বেশি মানুষকে সহায়তা প্রদান স্থগিত করা শুরু করতে হবে। যা এই সংস্থাটির বর্তমান সহায়তাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ।’
খাদ্য সহায়তা পাওয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গাজা এবং পশ্চিম তীরে রয়েছে। এর মধ্যে গাজায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি।
রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘের এই সংস্থা দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি ১০.৩০ মার্কিন ডলার মূল্যের মাসিক ভাউচার এবং খাবারের প্যাকেট সহায়তা হিসেবে দিয়ে থাকে। তবে সহায়তা স্থগিতের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের কারণে উভয় কর্মসূচিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা শাসন করে আসছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। আর এই কারণে সেই সময় থেকেই ভূখণ্ডটি অন্যায়ভাবে অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি এবং জাতিসংঘের রেকর্ড অনুসারে, অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে। গাজার বিপুল সংখ্যক এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৫ শতাংশ বেকার এবং ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
আবদেলজাবের বলেছেন, ‘খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করা লাখ লাখ মানুষের ওপর অনিবার্য এবং কঠিন সিদ্ধান্তের প্রভাব বুঝতে পারছে ডব্লিউএফপি।’
মূলত হামাস শাসকদের বিষয়ে নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে গাজা ভূখণ্ডে মিশরকে সঙ্গে নিয়ে একত্রে অবরোধের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে ইসরায়েল। আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে গাজা ভূখণ্ডে মানুষ ও পণ্যের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে।
অবশ্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে জাতিসংঘের এই সংস্থা সহায়তা দেয়া অব্যাহত রাখবে বলে আবদেলজাবের বলেছেন। তার দাবি, যারা নিজেদের খাবার না পাওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের বাঁচানোর জন্যই সহায়তা স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এমনকি তহবিল না পাওয়া গেলে ডব্লিউএফপি চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করতে বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ডব্লিউএফপি অফিসের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা ‘নো টু হাঙ্গার’ স্লোগান দেন।
ফারাজ আল-মাসরি নামে দুই সন্তানের বাবা বলছেন, ‘অর্থ সহায়তার ভাউচার হলো জীবন। তারা আমাদের যে বার্তা পাঠিয়েছে তা মৃত্যুর সমান। কারণ এখানে আয়ের আর অন্য কোনও উৎস নেই।
ফারাজ আল-মাসরির পরিবার প্রতি মাসে ৪১.২০ মার্কিন ডলার মূল্যের সহায়তা ভাউচার পেয়ে থাকেন। এছাড়া গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়ার বাসিন্দা জামালাত এল-দাবরের পরিবার প্রতি মাসে ১৬৪.৮০ মার্কিন ডলার মূল্যের ভাউচার পেয়ে থাকেন।
তিনি বলছেন, সহায়তা স্থগিতাদেশের এই সিদ্ধান্তের ফলে তারা ‘অনাহারে মরবেন’, কারণ তার স্বামী অসুস্থ এবং বেকার।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন