ছাত্র-শিক্ষক
নবীনবরণ-সিন্ডিকেটের দিনেই অস্থিতিশীল ইবি
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন বরণ ও সিন্ডিকেট সভার দিনে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। সোমবার দুপুরে নবীন বরণ চলাকালে অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে দুই দফায় মারামারিতে জড়ান ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে ভিন্ন দাবিতে বিকেল ৪টার দিকে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরেরদিন দুপুর ১২টায় প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সাথে বসে সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। যদিও ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ইঙ্গিতেই’ আন্দোলন শুরু ও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এসময় ছাত্রলীগের একাধিক সহ-সভাপতিসহ অন্য নেতাকর্মীরাও ছিলেন। এদিকে একই সময় অর্থাৎ বিকাল ৪টার দিকে উপাচার্যের বাঙলোতে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সিন্ডিকেটে ছাত্রলীগের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়েই এই আন্দোলনের সূত্রপাত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেষ্ঠ্য অধ্যাপকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মোহাম্মাদ আনান, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের রতন রায়, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের রাকিব, ইংরেজি বিভাগের সজিব, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আল আমিন সুইটসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এই আন্দোলনের ফলে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকূপাগামী বাসসমূহ আটকে পড়েন। এর ফলে নবীন শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আটকে পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে অনেকে লাইন বাসে শহরে ফিরেন। ‘পান থেকে চুন খসলেই’ ফটক আটকিয়ে আন্দোলনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন পরিবহন প্রশাসক। একইসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দও এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ঠিক কি দাবিতে আন্দোলন চলছে এ ব্যাপারে জানেন না আন্দোলনকারীরা। গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে একাধিক আন্দোলনকারী একেকরকম দাবির কথা জানিয়েছেন। শুরুতে ইতিপূর্বে প্রশাসনের কাছে দেওয়া ছাত্রলীগের ৩৩ দফার বিষয়টি জানালেও পরে তারা ৭ দফা দাবির কথা জানান। অন্যদিকে কয়েকজন নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের দাবি, গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, বিদ্যুত বিভ্রাট নিরসন, সুপেয় পানি ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সমস্যা ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। তবে পরে আবার তারা ৫ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন। এদিকে প্রক্টরের বলা দাবিগুলো ছিল আরো ভিন্ন। অন্যদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত জানিয়েছেন, ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাথে এই আন্দোলনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বলে জেনেছি। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। এটাও ঠিক যে যারা বাসে শহরে ফিরতে পারছেন না তারাও বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গেট আটকিয়ে আন্দোলন করে শুধু আমাদের ভোগান্তিই বাড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে যদি শিক্ষার্থীরাই ভোগান্তিতে পড়ে তাহলে এ আন্দোলন কাদের জন্য?’
এদিকে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার সময় ‘ভাই গেট ছেড়ে দিতে বলেছে’ এমন কথা শোনা যায় একাধিক সহ সভাপতির মুখ থেকে। তবে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে এক সহ-সভাপতি বলেন, আমি বিষয়টি জেনে প্রক্টরকে জানিয়েছিলাম। স্যার বললো আমরা সিন্ডিকেট নিয়ে ব্যস্ত আছি। পরে স্যারের সাথে গিয়েছিলাম। তাদের দাবি যৌক্তিক ছিল।’
গেট ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কোনো বিষয় না। আমি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ছেড়ে দিতে হবে বলিনি। এটা আমার এলাকায় বাসার ওখানে একটা গেটের বিষয়ে কথা বলছিলাম যে, আমার বড় ভাই বলেছে গেট ছেড়ে দিতে। আমার বাসায় মানুষজন এসেছে, তাই বাসার গেট খোলার কথা বলছিলাম। বাড়ির গেটে বাইরে থেকে লক করা থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলুক। কথায় কথায় এভাবে গেইট আটকানো উচিত না। শুধু শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। এটা এক প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি মনে করি এটা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। কথায় কথায় এভাবে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের গাড়ি আটকাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের শিক্ষকদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কখনো যদি শিক্ষকদের গাড়ি আটকানো হয় তাহলে আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করবো। বিষয়টি নিয়ে দুয়েকদিনের মধ্যে বিবৃতি দিব। কারা আন্দোলন করছে এটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। তারা আন্দোলন স্থগিত করেছে। তাদের নিয়ে আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বসবো।’
ছাত্র-শিক্ষক
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করায় সরকারকে ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিনন্দন
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এক যৌথ বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের সঙ্গে জামায়াতের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছিল। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় সরকারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অভিনন্দন জানাচ্ছে।
শিক্ষক নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রির গণহত্যা ও ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধনের নেতৃত্বদানকারী এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তে স্নাত, দুই থেকে ছয় লাখ নারীর সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতাকারী সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (তৎকালীন ছাত্র সংঘ)। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেও তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাজপথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার বহু ঘটনা ঘটিয়েছে।
তারা বলেন, এসব কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মনে করে। তবে এটিই যথেষ্ট নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।
জেএইচ
ছাত্র-শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন ও গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন এবং সংলাপের মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান আসবে বলে আশা করেন তারা।
রোববার (২৮ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টায় বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক জেরিন আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন যে আমাদের ছাত্র মো. আবুল হাসনাত (হাসনাত আবদুল্লাহ), কোটাবিরোধী আন্দোলনের এক সমন্বয়ক গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমরা তার এবং অন্য শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
এতে আরও বলা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সংযম প্রদর্শন এবং আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি এবং আশা করছি যে সংলাপের মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান আসবে।
এএম/
ছাত্র-শিক্ষক
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক আজ
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিষয়টি সুরাহার জন্য শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। পরে আজ বসার জন্য সময় দেন তিনি। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।
গেলো তিন দিন ধরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের ফলে কার্যত অচল হয়ে আছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গতকালও সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভাগ, হল, ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনিক ভবনের কোথাও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে অনেক শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা প্রত্যয় স্কিম করেছেন, তারা হয়তো মন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি তার জায়গা থেকে কথা বলেছেন। আমরা যখন তাকে বোঝাতে পারব, তখন হয়তো তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হবেন। তার বক্তব্যটি আমরা গ্রহণ করিনি।’
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন