ফিচার
ঝাল খাবার খেলে শরীরে হয় যে প্রতিক্রিয়া
অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত ঝাল খাবার খেতে পছন্দ করেন। লক্ষ্য করে দেখবেন ঝাল খাবার গ্রহণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাধারণত শরীর তাৎক্ষণিকভাবে ঘেমে যায়। মূলত ঝাল খাবারের কয়েকটি উপাদান মুখ থেকে শুরু করে পাকস্থলী পর্যন্ত থাকা স্নায়ু রিসেপ্টরগুলোতে উষ্ণ অনুভূতি সৃষ্টির ফলে এমনটি ঘটে থাকে।
কিন্তু ঝাল খাবার খেলে শরীরে ঠিক কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা বেশিরভাগেরই অজানা। আন্তজার্তিক সংবাদ সংস্থা নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল সেরকমই কিছু তথ্য।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ফিজিওলজিস্ট ডেভিড জুলিয়াস বলেন, “ঝাল খাবার গ্রহণের ফলে দেহে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। জিহ্বা ও ঠোঁটে অসাড় অনুভূতি থেকে শুরু করে শরীর ঘেমে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম।”
তবে ঝাল খাবার গ্রহণের ফলে দেহে সৃষ্ট সবধরনের প্রতিক্রিয়াই যে ইতিবাচক, এমনটি নয়। এমনকি কেউ যদি ঝাল খেতে ভালোবাসে তবুও সেটি নেতিবাচক হতে পারে। কেননা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেহে ঝাল খাবারের উপকারিতা ও ক্ষতিকারক উভয় দিকই রয়েছে।
শরীর ঘেমে যাওয়া
ঝাল খাবার গ্রহণের পর তাৎক্ষণিকভাবে শরীরঘেমে যায়। মূলত ঝাল খাবারের কয়েকটি উপাদান মুখ থেকে শুরু করে পাকস্থলী পর্যন্ত থাকা স্নায়ু রিসেপ্টরগুলোতে উষ্ণ অনুভূতি সৃষ্টির ফলে এমনটি ঘটে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বহুল প্রচলিত ঝাল খাবার মরিচের কথাই বলা যাক। এতে ক্যাপসাইসিন নামের এক প্রকার যৌগ থাকে যা খাওয়ার সময় পরিপাকতন্ত্রের স্নায়ু রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে। ফলে রিসেপ্টরগুলো মস্তিষ্কে এক প্রকার পীড়াদায়ক সংকেত পাঠায়।
বাস্তব জীবনে আগুনের আশেপাশে থাকলেও স্নায়ু ব্যক্তির মস্তিষ্কে একই ধরনের সংকেত পাঠায়। যার ফলে শরীর ঘেমে যায় এবং এই প্রক্রিয়ায় দেহ ঠান্ডা করার চেষ্টা করা হয়।
এ বিষয়ে ডেভিড জুলিয়াস বলেন, “ক্যাপসাইসিন স্নায়ুকোষে এমন বার্তা দেয় যে, দেশের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। তাই মস্তিষ্ক তখন তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজন অনুভব করে। আর এই তাপমাত্রা কমাতেই শরীর বেশিরভাগ সময় ঘেমে যায়।”
পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা
পাকস্থলীতে সমস্যা না থাকলে পরিমিত মাত্রায় ঝাল খাবার গ্রহণে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এসব খাবার পরিপাকতন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি থেকে শুরু করে বুকজ্বালা, পেটে ব্যাথা ও ডায়রিয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
দেহের জন্য ঝাল হতে পারে উপকারী
দেহে ঝাল খাবার গ্রহণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে করা বেশ কয়েকটি গবেষণায় স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এর উপকারিতা পাওয়া গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ক্যাপসাইসিন গ্রহণের ফলে দেহে বিপাকীয় কার্যক্রম গতি লাভ করে। একইসাথে গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ ক্যালরি শক্তি বেশি ব্যয় হয়।
অন্যদিকে ২০২২ সালে ৬ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেহে ঝাল খাবার করোনারি আর্টারিতে ক্যালসিয়াম জমতে দেয় না। ফলে বাধাহীনভাবে হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল করতে পারে।
প্রতিনিয়ত ঝাল খাবার গ্রহণের ফলে স্থূলতা, হার্ট এটাকের প্রবণতা কমে বলেও বহু বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। তবে এটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তাই অধিকতর গবেষণা জরুরী।
আবার দেহে ক্যান্সারের সাথে ঝাল খাবারের সম্পর্ক নিয়েও রয়েছে পরস্পরবিরোধী মতামত। কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিনিয়ত ঝাল খাবার গ্রহণের ফলে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের প্রবণতা বেড়ে যায়।
অন্যদিকে গবেষণাগারে কোষের ওপর করা বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, গোলমরিচে থাকা ক্যাপসাইসিনের মতো রাসায়নিক স্তন ক্যান্সার রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি ঝাল খাবারের এই প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায় কি-না সেটাও ভাবা হচ্ছে।
২০১৫ সালে চীনে প্রায় ৫ লাখ লোকের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব ব্যক্তি সপ্তাহে একবার ঝাল খাবার গ্রহণ করে, তাদের তুলনায় যারা বহুদিন ধরে সপ্তাহে গড়ে ৬ থেকে ৭ বার ঝাল খাবার গ্রহণ করে তাদের মৃত্যুঝুঁকির পরিমাণ ১৪ ভাগ কম।
মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও আছে
অত্যাধিক ঝাল মরিচ দেহে প্রচণ্ড মাথাব্যাথা ও বমির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে সাধারণ মরিচ হলে কিংবা ঝাল খাবারে অভ্যস্ততা থাকলে এমনটি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
ব্যক্তি যদি নিজের সহ্য ক্ষমতার চেয়ে বেশি ঝাল খাবার খেয়ে ফেলে তবে তা প্রশমনে উচ্চমাত্রার ফ্যাটজাতীয় খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ কিংবা এক চা-চামচ টকজাতীয় খাবার বেশ কার্যকরী।
এ বিষয়ে জুলিয়াস বলেন, “ফ্যাটজাতীয় খাদ্য পরিপাকতন্ত্রের টিস্যু থেকে ক্যাপসাইসিন যৌগটিকে সরিয়ে ফেলে। ফলে ঝালের কারণে যে অস্বস্তিকর অনুভূতি, সেটিও কমে আসে। এক্ষেত্রে ফ্যাটজাতীয় খাদ্যের মতো পানি ততটা কার্যকরী নয়।”
জুলিয়াস জানান, একজন ব্যক্তির দেহ ঠিক যতটুক ঝাল খাবার সহ্য করতে পারে তার ঠিক ততটুক ঝালই গ্রহণ করা উচিত। এতে করে খাবার তৃপ্তিদায়ক মনে হয়। আর কেউ যদি ঝাল খেতে পছন্দ করে এবং শরীর তা সহ্য করতে পারে তবে ঝাল খাবার এড়িয়ে চলার কোনো প্রয়োজন নেই।
ফিচার
ফিলস লাইক তাপমাত্রা মাপা হয় যেভাবে!
বছরের মাঝামাঝি সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলে গরমের তীব্রতা। তাপমাত্রা এমন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন আজ বিদ্ভস্ত। চলতি বছরে দেশের কয়েক জেলায় তাপমাত্রার রেকর্ড মাপা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি। আর এ কারণেই জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে মানুষ এখন আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য বসে না থেকে ঘন ঘন মোবাইল ঘেটে দেখে নেয় তাপমাত্রার আপডেট। ধরুন, গুগলে সার্চ দেয়ার সময় তাপমাত্রা দেখা গেলো ৩৮ ডিগ্রিতে তবে এর অনুভুতি হচ্ছে যেন ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা।
এই যে ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কি? গরমের এই সময়ে কোন এক এলাকার যে নির্দিষ্ট যে তাপমাত্রার হিসাব দেয়া থাকে তার চেয়ে ফিলস লাইক তাপমাত্রা বেশিই থাকে। এই যেমন গুগল বলছে, এখন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু ফিলস লাইক ৪২, অর্থাৎ চার ডিগ্রি বেশি!
কীভাবে এই ফিল্স লাইক মাপেন আবহাওয়াবিদরা? ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ফিল্স লাইক মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ মেপে।
তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরুলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। পরিবেশেরও একটা বিরাট প্রভাব আছে এতে।
কীভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি?
আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ-ভারতে যখন তাপদাহে পুড়ছে, তখন মরুর দেশ আরব আমিরাত আর সৌদি আরবের রুক্ষ দেশে অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। এতোটাই বৃষ্টি যে দেশগুলো রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি। আবার ইউরোপেও এবার অস্বাভাবিকভাবে প্রত্যক্ষ করছে বন্যা, যা এক সময় তাদের চিন্তারও বাইরে ছিলো।
ফিচার
জীবনযোদ্ধার আরেক নাম ‘বাবা’!
শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যে মানুষটা সন্তানের একটু সুখের জন্য, পরিবারের চাওয়া-পাওয়া পূরণের জন্য নিজের সব সুখ ও স্বপ্ন বিসর্জন দেন, তিনি আর কেউ নন, ‘ বাবা’।
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন আর নতযানু হওয়ার দিন। শব্দটি ছোট, অথচ এর অর্থ অনেক বিস্তৃত। ভাষা আর স্থানভেদে ছোট্ট একটি শব্দের উচ্চারণ বদলে গেলেও অর্থ, বদলায় না রক্তের টান।
বাবা শব্দের মাঝেই জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, মায়া, নির্ভরতা। বাবা হলেন সেইজন যার শক্ত কাঁধ সন্তানকে সামনে চলতে শেখায়। যার অক্লান্ত পরিশ্রম সন্তানকে সুন্দর একটা জীবন দেয়। যার অসীম ত্যাগ একটা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত এনে দেয়।
‘বাবা’ ডাকলেই কেমন এক শান্তি আর আস্থার নিঃশ্বাস যেন অনুভূত হয়। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা এক মায়ার নাম, এক ছায়ার নাম, চোখের সামনে ভেসে ওঠা এক জীবনযোদ্ধার নাম।
বাবা মানেই সব আবদারের জায়গা। সন্তানের জন্য এক পৃথিবী সমান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বাবা নামের বটবৃক্ষ। জীবনের সব রং-চাওয়া পাওয়া হাসি মুখে বিসর্জন দিতে পারেন বাবারাই। বাবার আর্দশ সন্তানকে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখায়।
প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। সে হিসেবে আজ রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ প্রায় ১১১টি দেশে এ দিনেই বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথশ রোববার বাবা দিবস পালন করে থাকে।
বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ঠিক কবে থেকে এ দিবসটির প্রচলন হলো তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ বলেন, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাংকুবারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। ১৮৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন। তার পিতা উইলিয়াম জেকসন স্মার্ট (১৮৪২-১৯১৯) ছিলেন কৃষক। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডোডের মা অ্যালেন ভিক্টোরিয়া চেক স্মার্টসহ পুরো পরিবার চলে যান ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। সেখানেই জন্ম হয় সোনার স্মার্ট ডোডের। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এরপর থেকে তিনি নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব তুলে নেন। সোনারা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলেই পুরো জীবন পার করে দেন।
বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন। যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রীজোটের কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রীজোট ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হয়নি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন।
১৯ জুন ১৯১০। প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেনস শহরে। শহরের তরুণ-তরুণীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সবাই মিলে এই ভাবনার প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে তা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও এটাকে জাতীয়ভাবে পালনে কংগ্রেসের নানা দ্বিধা ছিল। কেননা তারা ভাবছিলেন এতে বাবা দিবস একটি বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিষয়টি অনুমোদন করেন। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কোলিজ এটিকে জাতীয় দিবসে রূপ দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস উদযাপনের ঘোষণা দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেয়া হয়। সোনারা ডোড মারা যান ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৯৬ বছর।
ফিচার
বর্ষার ছন্দে এসেছে আষাঢ়ে মেঘের ভেলা!
বাংলা পঞ্জিকা না খুললেও প্রকৃতি যেন একটু একটু করে বলছে আষাঢ় এসে গেছে। সকালে আকাশ মেঘলা জানিয়ে দিয়ে আজ শনিবার (১৫ জুন) বাংলা তৃতীয় মাসের আর্বিভাব ঘটে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে মেঘলা মেঘলা একটা অনুভূতি কিন্তু আছে।
আর তাই হয়তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। ‘
ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। আষাঢ় মানে বিশাল আকাশে কালো মেঘের পালকিতে ভেসে বেড়ানো মুহুর্মুহু ডঙ্কা-নিনাদ, ঝমঝম বৃষ্টি। বর্ষার শীতল জলে নবজীবন লাভ করে পল্লবপুঞ্জ। প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত, সতেজ ও শত সহস্র মনের প্রেমে ভিজিয়ে রাখার সাধ্য যে একমাত্র আষাঢ়েরই আছে, তা অস্বীকার করার সাধ্যি কার। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি।
আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।
বছরভর বাংলার প্রকৃতি হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ সাজে। তার মধ্যে বর্ষার সজল, শ্যামল রূপ অনন্যতায় ভরপুর। ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-হাওয়ার লুকোচুরির মতো অপার্থিব দৃশ্য আর কখন মেলে! আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাসজুড়ে ব্যাপ্তি বর্ষার। মাস দুয়েক নানা মাত্রায় বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর। টিপটিপ, ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি, মুষলধার—বর্ষার বারিধারার কতই না নাম! কবিরা তার মধ্যে শোনেন নূপুর, মৃদঙ্গ আর মাদলের বোল। আকাশের চেহারারও সে কী বৈচিত্র্য! সারাদিন ঘোলাটে থেকে শুরু করে ছাইরঙা হয়ে মোষের মতো কালো। বর্ষার প্রকৃতিতে ডাকাতের মতোই দৌরাত্ম্য চলে মেঘেদের। কখনো কখনো বর্ষণ শেষে সেই মেঘের ফাঁকে হঠাৎ উঁকি দেয় আকাশজোড়া স্বর্গীয় রঙধনু।
একালে অবশ্য আমাদের কেবল বর্ষা নিয়ে কাব্যকথায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলে না। বিশেষ করে নগরে বর্ষা মানে মাথায় রাখতে হয় যানজট আর জলজটের কথা। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে বেড়ে চলেছে বজ্রপাত আর তাতে হতাহতের সংখ্যাও।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন