অপরাধ
১৮ কোটি টাকার সম্পদে ফাঁসলেন ওসি, স্ত্রী-শাশুড়ি
ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ক্রাইম শাখার পুলিশ পরিদর্শক ও পিরোজপুর মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল্লাহ, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে সোয়া ১৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অনুসন্ধানে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহর নিজ নামে ২টি প্লট, স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে রাজধানীতে ২টি ফ্ল্যাট, ১টি বাণিজ্যিক স্পেস, শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে ১টি ফ্ল্যাট খোঁজ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ বাদী হয়ে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধান কাজের তদারককারী কর্মকর্তা ও পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহ ১৯৯১ সালে সাব-ইনস্পেক্টর পদে পুলিশে যোগ দেন। তিনি ২০০৭ সালে ইনস্পেক্টর পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুন। সৈয়দ আব্দুল্লাহ মঠবাড়িয়া থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ও চোরাকারবারিদের সাথে সখ্যতা, মিথ্যা মামলার রেকর্ড ও অনৈতিকভাবে বিপুল সম্পদের অর্জনের অভিযোগ ওঠে। আর অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ২০২০ সালে কমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আব্দুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশে তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুটি এনআইডি কার্ড তৈরি করে এর বিপরীতে পৃথক দুটি ট্যাক্স শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ করেন। যা ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫ টাকা, ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩১ লাখ টাকায় গাড়ী ক্রয়সহ মোট ৩ কোটি ৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ ক্রয় করেন।
এছাড়া সৈয়দ আব্দুল্লাহ নিজ নামে ২টি প্লট, স্ত্রীর নামে ২টি আবাসিক ফ্ল্যাট, ১টি বাণিজ্যিক স্পেস, স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ পরিশোধ করে শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে ১টি আবাসিক ফ্ল্যাট বাবদ মোট ১৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩২ টাকার অধিক মূল্যের স্থাবর সম্পদ ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধানে এসব স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী হিসাবে পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে নিজের নামে, তার স্ত্রীর নামে ও শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে সম্পদ গড়েছেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার চেষ্টা করেছেন। যেখানে তার স্ত্রী ও শাশুড়ি সরাসরি সহযোগিতা করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানকালে চলতি বছরের ২৮ মে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের আদেশে সৈয়দ আব্দুল্লাহর অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত মোট ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নিজ নামের ট্যাক্স ফাইলগুলো জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলায় দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহ, তার স্ত্রী ও শাশুড়ির অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে
আব্দুল্লাহর শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে গুলশানে নাভানা রিয়েল এস্টেটের নাভানা এসিলমন প্যালেস নামরে ১৩তলা ভবনের ১২তম তলায় ৩ হাজার ৯০৯ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারে নামে কাকরাইলে আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেডের ১৪তলা বাণিজ্যিক ভবন গ্রিন সিটি রিজেন্সির তৃতীয় তলায় ২ হাজার ১২০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস ও ২৬৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিংসহ মোট ২ হাজার ৩৮৬ বর্গফুট, স্ত্রীর নামে ঢাকার বড় মগবাজারে এবিসি রিয়েল এস্টেটের দ্য ওয়েসিস কমপ্লেক্সের টাওয়ারে ১০ম তলায় ২ হাজার ১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও গাড়ি পার্কিং, স্ত্রী ফারহানা আক্তারে খিঁলগাওয়ের পশ্চিম নন্দীপাড়া ২ হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট ও গ্যারেজ এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহর নিজ নামে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির ৬ কাঠার দুটি প্লট।
এছাড়া স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, ফিনিক্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত, খুলনা অগ্রণী ব্যাংকের বয়রা বাজার শাখায় ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত। এছাড়াও ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিজয়নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিস শাখা ও বয়রা বাজার শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড শাখা, সোনালী ব্যাংকের ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল শাখা এবং খুলনার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিভিন্ন আমানত হিসাবে ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৪ টাকার তথ্য রয়েছে।
অপরাধ
রাজধানীতে বস্তা ভর্তি টাকাসহ একটি গাড়ি আটক করলেন শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর উত্তরায় একটি প্রাইভেটকার থেকে এক বস্তা টাকাসহ একটি শটগান উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (৭ আগস্ট) এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমে জানান, রাজধানীর উত্তরার একটি বাসার গ্যারেজ থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। এ সময় তিনজনকে হেফাজতে নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরে গাড়ি থেকে এক বস্তা টাকা উদ্ধার করে হেফাজতে নেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীরা উল্লাস করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আওয়ামী লীগ ঘরোয়ানার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এমডির গাড়ি থেকে এ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়ি থেকে এক বস্তা টাকাসহ একটি শটগান উদ্ধার করে উত্তরা টাউন কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এএম/
অপরাধ
কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়েছে ২০৯ বন্দি, নিহত ৬
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়েছেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জন বন্দি নিহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান,গেলো মঙ্গলবার বিকেলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। বন্দিদের কেউ দেয়াল ভেঙে, কেউ দেয়াল টপকে, আবার কেউ দেয়ালের সঙ্গে বিদ্যুতের পাইপ লাগিয়ে কারারক্ষীদের মারধর করে পালিয়ে যেতে চান।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন।এসময়ে বন্দিদের মধ্যে ২০৯ জন দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে।বন্দিদের ঠেকাতে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহতদের নাম পরিচয় পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার।
আই/এ
অপরাধ
কাশিমপুর কারাগারে তীব্র উত্তেজনা, সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থান
গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দিরা মুক্তির দাবিতে উত্তেজনা শুরু করেছেন। কারারক্ষীদের জিম্মি করে অনেকে দলবদ্ধভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছেন। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরের দিকে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে। এসময়ে ওই এলাকার আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়।
কারা কর্তৃপক্ষ জানান, কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে পৃথক চারটি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি বন্দিরা রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার অনেক নেতাকর্মীও ওই কারাগারে রয়েছে।
জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে কিছু বন্দি কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা কারারক্ষীদের জিম্মি করে মুক্তির দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে। এসময়ে কারারক্ষীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আগে থেকেই সেখানে অল্প সংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে দুপুর দেড়টার দিকে অতিরিক্ত সেনা সদস্য হেলিকপ্টার যোগে কারা অভ্যন্তরে এসে বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
প্রসঙ্গত, কারা অভ্যন্তরে বিদ্রোহের খবর পেয়ে বন্দিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের সামনে অবস্থান করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করে। কারাগারের বাইরে একটি ঝুট গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে সেনা সদস্যরা বাইরের বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
আই/এ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন