উত্তর আমেরিকা
ভিয়েতনাম যুদ্ধের তথ্য ফাঁসকারী এলসবার্গের মৃত্যু
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত গোপন তথ্য ফাঁস করে দেশটির ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’র খেতাব পাওয়া ড্যানিয়েল এলসবার্গ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ৯২ বছর বয়সী এই মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কেনসিংটন শহরে মারা গেছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালে ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট বিদ্রোহী ও গণতন্ত্রপন্থীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরে সেই যুদ্ধ পার্শ্ববর্তী লাওস এবং কম্বোডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই যুদ্ধে একসময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নও জড়িয়ে পড়ে।
তবে এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা যে অনেক বেশি ছিল। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তর পেন্টাগন থেকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ সংক্রান্ত ৭ হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথি ফাঁস করেন ড্যানিয়েল এলসবার্গ, যা পরে পরিচিতি পায় পেন্টাগন পেপার্স নামে।
ড্যানিয়েল এলসবার্গ ‘পেন্টাগন পেপার্স’ ফাঁসের আগ পর্যন্ত মার্কিন জনগণের বিশ্বাস ছিল— ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহায়তাপুষ্ট তথাকথিত গণতন্ত্রপন্থীরাই জয়ী হবে। মার্কিন রাজনীতিবিদ, সংবাদমাধ্যম এবং অন্যান্য প্রচার-প্রচারণাযন্ত্রও সেই বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে সদা তৎপর ছিল।
কিন্তু মার্কিনীদের এই ধারণা বড় ধরনের ধাক্কা দেন ড্যানিয়েল এলসবার্গ, ১৯৬৯ সালে পেন্টাগন পেপার্স ফাঁসের মাধ্যমে। তার এই কাণ্ডের পরই জানা যায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে দেশের জনগণের সঙ্গে মিথ্যাচার করছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তারপর থেকেই ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়ে আসার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে উঠতে থাকে জোরে শোরে।
মার্কিন সংবাদামাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে গোপন সেসব প্রতিরক্ষা তথ্য প্রকাশের পর তাকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই সঙ্গে দেশবিরোধী তৎপরতা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
সেই মামলা গড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এবং তাতে জয়ী হন ড্যানিয়েল। সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ড্যানিয়েল এলসবার্গ কোনো অপরাধ করেননি, বরং মার্কিন সরকারেরর দায়ের করা এই মামলা ভুল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
পেশাগতভাবে মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হলেও অন্যান্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিলেন এলসবার্গ। বাইরের দেশে মার্কিন সেনা পাঠানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে সারাজীবন যুক্ত ছিলেন পরমাণু অস্ত্র ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারাভিযানে।
পেন্টাগন পেপার্স ফাঁস প্রসঙ্গে নিজের ডায়রিতে ড্যানিয়েলস এলসবার্গ লিখেছেন, ‘১৯৬৯ সালে যখন আমি পেন্টাগন পেপার্স ফাঁস করলাম, সে সময় অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম যে এই ঘটনার দায়ে বাকি জীবন হয়তো আমাকে কারাগারে কাটাতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল— একটি অন্যায় যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে হলে যদি আমাকে সারা জীবন কারাগারে কাটাতে হয়, তবে তা ই সই।’
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
উত্তর আমেরিকা
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিলেন কামলা হ্যারিস
গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ প্রয়োগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ( ২৫ জুলাই) হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে নেতানিয়াহুকে চাপ প্রয়োগ করেন। এর মধ্য দিয়ে কামলা প্রেসিডেন্ট হলে ইসরাইল ইস্যুতে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আনবেন তা স্পষ্ট হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কামলা বলেন, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু সেটি কীভাবে করা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার উৎকণ্ঠা জানিয়েছে। আমি চুপ করে থাকব না।’
হ্যারিসের এই তীক্ষ্ণ ও জোরালো মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি কিভাবে নেতানিয়াহুকে মোকাবেলা করছেন সে বিষয়ে বাইডেনের সঙ্গে তার পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
এর কয়েক ঘন্টা আগে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠক করেন। গেলো ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর বাইডেনের ইসরাইলে সফর শেষে এটিই নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার প্রথম মুখোমুখি আলোচনা। এই আলোচনায় গাজায় ৯ মাস ধরে চলা সংঘাতে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুকে চাপ দেন বাইডেন।
এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে তবে আমরা আগের চেয়ে এখন চুক্তির কাছাকাছি আছি। যা আগে কখনও ছিলাম না।
নেতানিয়াহুর এই সফর এমন সময় হলো যখন মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। রোববার ( ২১ জুলাই) ৮১ বছরের বাইডেন ডেমোক্র্যাটদের চাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এবং দলের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের জন্য হ্যারিসকে সমর্থন করেন।
জেএইচ
উত্তর আমেরিকা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে ‘শেষ পর্যন্ত’ থাকছেন বাইডেন
২০২৪ সালের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে জো বাইডেন সরে যাচ্ছেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দৌঁড় থেকে কেউ তাকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে না। তিনি দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সব চাপ উপেক্ষা করে লড়াইয়ে ‘শেষ পর্যন্ত’ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকার এই প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ জুলাই) ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে থাকা কিছু কর্তা ব্যক্তির সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
জো বাইডেন গেলো সপ্তাহে তার দুর্বল বিতর্কের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নির্বাচনী দৌঁড় থেকে সরে যেতে তার ওপর চাপ কার্যত বেড়েই চলেছে। এমনকি নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতর থেকেও চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই বাইডেনের এই ফোনকল।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার তার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলেন এবং ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসময় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গেলো বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত দুর্বল। অনেকেই বলছেন, ৮০ বছরের বেশি বয়সী বাইডেনের এবার আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত নয়। কারণ, তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। বিতর্কের সময় প্রতিপক্ষের কথার জবাবও দিতে পারছেন না।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বাইডেনের বয়স এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
এমন অবস্থায় বুধবার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত গেলো সপ্তাহের বিতর্কে নড়বড়ে পারফরম্যান্সের পরে তাকে নির্বাচনী লড়াই বাদ দেয়ার আহ্বানগুলো ঝেড়ে ফেলেন।
তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই মনে করছেন, দলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জো বাইডেনের আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত হবে না।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন