জাতীয়
পণ্যের দাম কমাতে ক্যাবের ১৩ সুপারিশ
প্রতি বারের মতোই এবারও ঈদের এক মাস আগে থেকেই পণ্য বাজার অস্থিতিশীল। সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মসলার দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। পণ্যের দাম লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। তাই পণ্যের দাম কমাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ‘ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশগুলো করা হয়। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, সভাপতি এবং সংগঠনের সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চিনি, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মসলাপাতি ভারতে দাম কম কিন্তু বাংলাদেশে দাম লাগামীহনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম বাড়ানো হয়েছে।
১৩ দফা সুপারিশলো হচ্ছে-
১. পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ, সরবরাহ ও প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি মূল্য, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে ও তা বাস্তবায়নের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতকারীদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে ও তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. পেঁয়াজ, রসুন, আদার অধিকতর চাষাবাদের জন্য বীজ, সার ও লাগসই আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকদের নিকট সহজলভ্য করতে হবে।
৬. সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে সরিষার অধিকতর চাষাবাদের ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া রাইস ব্র্যান অয়েল এর সুলভ মূল্যে উৎপাদন ও ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রাণীজ পুষ্টির চাহিদা পূরণে গরুর মাংস সহজলভ্য করার জন্য খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
৮. পেঁয়াজ, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে এবং পণ্য আমদানির পর তা যেন নির্দিষ্ট দামে বাজারে বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সম্প্রতি চিনির দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত চিনিকল মালিকদের সংগঠন গ্রহণ করেছে তা কার্যকর না করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামেই খুচরা বাজারে খোলা চিনি ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১০. বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং করার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহকে যুগোপযোগী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১. সড়কে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন হয়রানি বন্ধ করার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য স্থল ও নৌ বন্দর হতে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৩. গরুর মাংসের দাম কমাতে ভারত থেকে ১ লাখ গরু আমদানি করা উচিত।
লিখিত বক্তব্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের বাজারের অবস্থা তুলে ধরে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া জানান─
ভোজ্যতেল:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ২.০৩ লাখ মে. টন। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ ভোজ্য তেল প্রতি বছর আমদানি করতে হয়। জুলাই ২০২২ হতে মে ২০২৩ পর্যন্ত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে প্রায় ১৯.৩২ লাখ মে. টন। গত বছর সয়াবিন বীজের আমদানি হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ১৪ হাজার মে. টন। ১১ জুন ২০২৩ তারিখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১৮৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৬৭ টাকা। পাম তেলের দাম লিটারে দুই টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। বাণিজ্য সচিব সে সময় আশ্বাস দিয়েছিলেন আগামী তিন দিনের মধ্যে ভোক্তারা এই দামে তেল পাবেন বাজারে। কিন্তু নতুন দাম নির্ধারণ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ১৭ জুন ২০২৩ তারিখে ঢাকার খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৯ টাকার স্থলে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খোলা সয়াবিন এখন ১৬৭ টাকার স্থলে ১৭৫-১৮৫ টাকা ও পাম তেল ১৩৩ টাকার স্থলে ১৩৫-১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে ১৫ জুন ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রির জন্য। কিন্তু রিফাইনারি ও ডিলার পর্যায়ে বিক্রির দর ঠিক করা হয়নি। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে ডিলারদের নিকট হতে ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে। তাই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে তাদের ভোজ্যতেল বিক্রি করতে হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। ফলে ভোক্তারা বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এ কারণে কতিপয় ব্যবসায়ী ভোক্তাদের নিকট হতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। সম্প্রতি সরকার সয়াবিনের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য সারাদেশে সরিষা চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
পেঁয়াজ:
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে চলতি বছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয় আর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ মে. টন। দেশে প্রায় ২৮ লাখ মে. টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। যদিও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭.৫০ লাখ মে. টন। সংরক্ষণকালে ও প্রক্রিয়াজাতকালে ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হয়। সে হিসাবে দেখা যায়, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনের সাথে চাহিদার বড় একটি ঘাটতি রয়েছে। ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারের ক্যাবের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন মাস আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৫-৪৫ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার ০৬ মার্চ তারিখে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ায় পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়। ঢাকার শ্যামনগর পাইকারি বাজারে ভারত হতে আমাদিনকৃত পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৩-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চিনি:
দেশে প্রায় ২০ লাখ মে. টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা আছে। জুলাই ২০২২ হতে মে ২০২৩ পর্যন্ত ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে অর্থাৎ দেশের চাহিদার তুলনায় সিংহ ভাগ চিনি আমদানি করতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১০ মে ২০২৩ তারিখে এক সভায় খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ক্যাবের বাজারদর সংগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় বর্তমানে খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১৩০-১৪০ টাকায় ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে না। গত বছর খোলা চিনি প্রতি কেজিতে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত ১ বছরে খোলা চিনির মূল্য ৫৭ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারের প্রতিনিধিগণ জানান, পাইকারি বাজার হতে চিনি তাদের অধিক দামে কিনতে হচ্ছে এবং সরকার খুচরা বাজারের মূল্য নির্ধারণ করেছে আমদানি ও পাইকারি পর্যায়ের মূল্য নির্ধারণ করেনি। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের সরকারের নির্ধারিত দামের অধিক দামে বাজারে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গত ১৯ জুন ২০২৩ তারিখে চিনিকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফানার্স অ্যাসোসিয়েশন চিনির দাম প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কথা বাংলাদেশ সুগার রিফানার্স অ্যাসোসিয়েশন চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে জানিয়েছে যা ২২ জুন ২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ক্যাব চিনিকল মালিকদের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, ভোক্তা-স্বার্থ বিরোধী ও অন্যায় বলে মনে করে। ক্যাব ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে। ক্যাব আশা করে সরকার ভোক্তাদের অবস্থা চিন্তা করে চিনিকল মালিকদের সংগঠনের এই মুনাফালোভী সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামেই খুচরা বাজারে খোলা চিনি ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করবেন।
রসুন:
ঢাকার খুচরা বাজারে বর্তমানে দেশি রসুন ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন মাস আগেও যা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ১০০-১৫০ টাকায়। গত এক বছরের তুলনায় দেশি রসুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশেরও অধিক।
জিরা:
বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা ৮০০-৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিন মাস আগে যা ছিল ৫৮০-৬৫০ টাকা। আবার ১ বছর আগে এই সময়ে ছিল প্রতি কেজি গড়ে ৪৮০ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে ৫৬ শতাংশের অধিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
গরুর মাংস:
দেশের বাজারে গরুর মাংস ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভারতের কলকাতায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ রুপিতে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪৫ টাকা। ভারতে প্রচুর গরু উৎপাদন করা হয় কিন্তু ধর্মীয় কারণে তাঁরা গরুর মাংস খান না। ফলে ভারতে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ার কারণে দাম কম।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি বলে এখানে গরুর মাংসের দাম বেশি। অর্থাৎ ভারতের তুলনায় প্রতি কেজিতে প্রায় ৪৫৫ টাকা হতে ৫০৫ টাকা বেশি। বাংলাদেশে অতিরিক্ত গরুর মাংসের চাহিদার কারণে এতো দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চড়া দামের কারণে নিম্ন ও নিম্ন-বিত্ত লোকেরা এখন গরুর মাংস খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। মাঝারি আয়ের সংসারের রান্নাঘরে গরুর মাংস এখন মাঝে মধ্যে হওয়ায় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতি বছর কোরবানির গরুর দাম অত্যধিক থাকে। এর কারণ হিসাবে গরুর খামারিরা বলেন, গরু লালন-পালনে খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গো-খাদ্যসহ অন্যান্য খরচ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হিসাবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে গরুর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ। এছাড়া কোরবানিকে উপলক্ষ্য রেখে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেক খামারিরা গরু উৎপাদন করে থাকে। আবার দেশীয় গরুর খামার ও চামড়া রক্ষার স্বার্থে সরকার ভারতীয় গরু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে দেশীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগানের ঘাটতির কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে বলে গরু ব্যবসায়ীরা জানান।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন