ফুটবল
স্পেনে বেড়ে ওঠা মেসির আর্জেন্টাইনদের স্বপ্ন পূরণের গল্প
যুগটা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। খুব সহজেই আজকে যারা বিশ্বকাপজয়ী মেসির শত শত ছবি ভিডিও চোখের পলকেই দেখতে পারে! তারা কি জানে ইউটিউব ফেসবুক সহজলভ্য হওয়ায় আগের মেসিতেও লুকিয়ে আছে পিক্সেল পিক্সেল মুগ্ধতা।
পত্রিকার ঘোলাটে সাদাকালো কিংবা রঙ্গিন ছবি কেটে কেটে মেসির যে ভক্তটা যত্ন করে রেখে দিত। সে তো জানে লিওনেল মেসি শুধু একটা নাম নয়, লিওনেল মেসি তাঁর বেড়ে ওঠা।
আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহন করা মেসি ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সেই সময় আর্জেন্টিনার কোন ক্লাবের পক্ষে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়ায় ১৩ বছর বয়সে তিনি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং স্পেনে পাড়ি জমান।
ম্যারাডোনা ফুটবল বিশ্বকাপ জেতানোর পর কোন ট্রফি যেতে না আর্জেন্টিনা। ঠিক সেই সময় লিওনেল মেসি নামে একটা ফুটবলারের নাম শোনা যাচ্ছিল চারিদিকে। তাঁর ফুটবল কারুকার্যও না কি ম্যারাডোনার মতো নান্দনিক। কিন্তু আর্জেন্টাইনদের মনে সংশয় ঐ বেটে ছোট ছেলেটা বেড়ে উঠলো স্পেনে, সে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলবে তো। তাঁকে স্পেনে খেলার জন্য প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
কিন্তু মেসি তা প্রত্যাখ্যান করেন অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ঐ জার্সি গায়ে মেসি যেদিন ফুটবলে লাথি দিয়েছেন সেদিন থেকেই হয়তো আর্জেন্টাইনরা মেসির কাছে একটা বিশ্বকাপ পাওনা। মেসি তা পূরণও করেন, তবে সেই পথটা যে একবারেই মসৃণ ছিল না।
মেসির ২০০৬ বিশ্বকাপে অভিষেক হয়। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এবং গোলও করেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে কোচ জোসে পেকারম্যান মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন। আর্জেন্টিনা হেরে বিদায় নেয়।
২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা খেলতে নামেন, ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে ট্রফি জেতার সুযোগ নষ্ট হয়। তবে মেসি টুর্নামেন্টের কনিষ্ঠ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
২০১০ বিশ্বকাপ মেসির ঝাঁকড়া চুল। আর্জেন্টাইন ডাগাউটে তখন কিংবদন্তী দিয়াগো ম্যারাডোনা। কিন্তু দলটা ছিল যে একেবারেই নড়বরে। আবারও কোয়াটার ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে এক হালি গোল হজম করে বিদায়।
মেসি ক্লাব ফুটবলে বার্সায় ফেরেন। রেকর্ড ভাঙ্গেন রেকর্ড গড়েন। ঐ সময়টাতেই মেসি বাংলাদেশে আসেন, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ঘাসে নিজের পায়ের ছাপ রেখে যান।
তারপর ঘনিয়ে আসে আরও একটি বিশ্বকাপ। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে একক নৈপূন্যে দলকে ফাইনালে তোলেন। কিন্তু গোল্ডেন বল কি আর বিশ্বকাপের স্বাদ মেটায়।
এরপর আরও দুই ফাইনালে একই দৃশ্য। মেসি চোখের জল ভিজিয়ে ফেরেন, মেসি তাঁর ভক্তদের কাঁদিয়ে ফেরেন। আবেগী হয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিকে বিদায়ের ঘোষণা দেন।
কিন্তু মেসির তো আর্জেন্টাইনদের কাছে একটা বিশ্বকাপের জন্য ঋণী হয়ে আছেন। সেটা না পূরণ করে কীভাবে বিদায় জানান।
২০১৯ কোপা আমেরিকায় আবারও সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নেন। তবে বিনয়ী মেসি একটু অন্যরূপ ধারণ করেন। ঠোটে ঠোট কামড়িয়ে বলেন তাদের সাথে অবিচার করা হয়েছে।
পরের বার আবার কোপা খেলতে ব্রাজিলেই যান। মারাকানায় বিশ্বকাপ জয় না করা হলেও ছুয়ে ফেলেন জীবনের প্রথম ট্রফি। আর্জেন্টাইনরা যে দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করেছিল সেটি পূর্ণ হয়। বিশ্বাসের ফেরিওয়ালা মেসির উপর আর্জেন্টাইনদের বিশ্বাস দীর্ঘ হয়। মেসি এনে দেবেন ৩৬ বছরের অধরা সোনালি ট্রফিটা।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কাতার বিশ্বকাপ, যার গল্প কারো অজানা নয়। যার আমেজ এখনো সবার মনের ভিতরে আছে। ফুটবলের কাছে লিওনলে মেসির আর কিছু পাওনা থাকলো না।
মেসিরও সময় ঘনিয়ে আসছে বুট জোড়া তুলে রাখার। ৩৫ থেকে ৩৬ এ পা রাখলেন মেসি, হয়তো গুণে গুণে আর কয়েকটা বছর মাঠে দেখা যাবে ফুটবলের জাদুকরকে। আপনি মেসির ভক্ত হন কিংবা না হন মেসি মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে এই ভাবনা আপনাকে ব্যাথিত করবেই।
শুভ জন্মদিন লিওনেল মেসি।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন