খুলনা
যশোরে ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
যশোরের আদালতে ‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে প্রথম মামলা হয়েছে। অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে নেয়ার অভিযোগে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ইউপি চেয়ারম্যান ও খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলার তেলিধান্যপুড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল হাই সোমবার (২৬ জুন) যশোর আদালতে মামলাটি করেন।
‘হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ’ আইনে প্রথম করা মামলায় বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় সিভিল সার্জনকে নির্যাতনের চিহ্ন উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল এবং পুলিশ সুপারকে মামলা গ্রহণপূর্বক আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মীর্জা সাহেদ আলী চঞ্চল।
মামলার আসামিরা হলেন- বাঘারপাড়া থানার ওসি শাহাদৎ হোসেন, খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই অভিজিৎ সিংহ রায়, বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান ও ফরিদপুরের সদরপুর গ্রামের মৃত হাজী রোকনুদ্দিন শরীফের ছেলে সরওয়ার শরীফ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী বৃদ্ধ আব্দুল হাই এজমা, মেরুদণ্ড, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগী। ২১ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল হাইয়ের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান, বাঘারপাড়া থানার ওসি তাকে বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের দ্রুত গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। এরপর আব্দুল হাই বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখেন চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান, ওসি শাহাদৎ হোসেন, খাজুরা ক্যাম্পের এসআই অভিজিৎ রায় এবং অপরিচিত এক ব্যক্তি সেখানে বসে আছেন।
ওসির আত্মীয় সারওয়ার শরীফ আব্দুল হাইয়ের ছেলে ইফতেখারের কাছে ৫ লাখ টাকা পাবে বলে তাৎক্ষণিক টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এরমধ্যে ওসি ও এসআই অভিজিৎ ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। একইসঙ্গে তারা আব্দুল হাইকে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করের এবং তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের প্যাডে আগে থেকেই লেখা ‘আব্দুল হাইয়ের ছেলে ইফতেখারের কাছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাবে’ বলে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেন। ওই অঙ্গীকারনামায় লেখা ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ না করলে আব্দুল হাই ও তার ছেলে ইফতেখারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।
বাদীর অভিযোগ, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিশ্চিত এবং টাকা আদায়ের জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়ি এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মুশফিকুর রহমানের চিকিৎসা নেন। বিষয়টি তিনি সাক্ষীদের জানিয়ে আদালতে মামলাটি করেছেন। হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এ যশোর আদালতের এটি প্রথম মামলা।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দ্বারা বাদী আব্দুল হাইয়ের দেহে নির্যাতন এবং জখমের চিহ্ন পরীক্ষা পূর্বক সম্ভাব্য সময় উল্লেখ পূর্বক রিপোর্ট প্রস্তুতের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সেই প্রতিবেদনের কপি অভিযোগকারী অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিকে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এছাড়া নির্যাতনের ঘটনার পর তার কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন অনতিবিলম্বে পুলিশ সুপারকে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদন পেয়ে পুলিশ সুপার হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা রুজু করে আদালতকে জানাবেন বলে আদেশ দেয়া হয়েছে।
খুলনা
কুষ্টিয়া কারাগার থেকে পালাল অর্ধশতাধিক আসামি
কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক আসামি পালিয়েছে গেছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়েন কারারক্ষীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনার পর সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
তবে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা গণমাধ্যমে বলছেন, ১২-১৩ জনের মতো আসামি পালিয়েছেন। পলাতকদের তালিকা করার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জামিন পান। দুপুর আড়াইটার দিকে বের হওয়ার কথা ছিল। তাদের সঙ্গে বের হতে হট্টগোল শুরু করেন কারাবন্দীরা। এ সময় কারারক্ষীরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালান। তবে এর আগেই অর্ধশত আসামি পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার আবু মুসা গণমাধ্যমে জানান, কারাগার থেকে ঠিক কত জন কয়েদি পালিয়ে গেছে তা সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
এএম/
খুলনা
মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১০
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্যসহ ১০ জন।
রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখিন হয়। ঘটনাস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করলে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী নিহত হন।
জেলা শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে জানান, ‘রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।’
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেডএস/
খুলনা
কনস্টেবল সুমন হত্যায় মামলা, অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি ১২০০
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় খুলনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামী হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
লবণচরা থানার এসআই মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে লবণচরা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান লবণচরা থানার ওসি মমতাজুল হক।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার বিকেলে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।
নিহত সুমন ঘরামীর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নগরীর বয়রা এলাকায়। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন তিনি। সমুনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস। তাদের ৬ বছর বয়সি স্নিগ্ধা নামে এক মেয়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত্তি দিয় পুলিশ জানায়, বিকেলে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরে আবার সোনাডাঙ্গা এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন গুরুতর আহত হন। পরে রাতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা গেছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের আরও ৩০ সদস্য।
এসি//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন