খুলনা
বেনাপোল দিয়ে এলো রুপিতে কেনা ৩৬ পিকআপ
এবার আর ডলার নয় নতুন পদ্ধতিতে ভারতীয় টাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য বাণিজ্য পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন দুদেশের ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় ভারতীয় টাটা মোটরসের ৩৬টি পিকআপের প্রথম চালানটি ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বেনাপোল বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে দিয়ে শুরু হলো ডলারের বিকল্প রুপির বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে বাংলাদেশ ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। আমদানি-রপ্তানির বড় ধরনের গ্যাপ হলেও এতে বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে জরুরি আমদানির জন্য প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও সংকট কাটার পরিবর্তে আরও বাড়ছে। ভ্রমণ, চিকিৎসা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করেন। রুপিতে লেনদেন হলে এখানেও ডলার সাশ্রয় হবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে দু’দেশের মধ্যে এতদিন ডলারের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি চলে আসছিল।
বাণিজ্যক্ষেত্রে বৈশ্বিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যম মার্কিন মুদ্রা ডলার। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ডলারেই। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের পর থেকে দেশে ডলার সংকট চরমে। ক্রমে কমছে রিজার্ভ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় ডলারের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে এখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে রুপি ব্যবহার করা যাবে।
১১ জুলাই থেকে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রপ্তানি ও আমদানির লক্ষ্যে এলসি খোলার মাধ্যমে এ লেনদেন শুরু হয়। বাংলাদেশ থেকে তামিম এগ্রো লিমিটেড ১৬ মিলিয়ন রুপির বেশি রপ্তানি এলসি এবং নিতা কোম্পানি লিমিটেড প্রায় ১২ মিলিয়ন রুপির আমদানি এলসি খোলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) রুপিতে লেনদেনের জন্য নস্ট্রা হিসাব খুলতে অনুমোদন পায়। ইবিএল ও এসবিআইকে গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) অনুমোদন দেয়।
রুপিতে বাণিজ্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দু‘দেশের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে। এটা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে ভারতেও বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার প্রচলনের কথা বলছেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এর মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে খরচও কমে আসবে। ডলারও সাশ্রয় হবে।
তারই পরীক্ষামূলক হিসেবে মঙ্গলবার ভারতের রপ্তানিকারক টাটা মোটরসের লিমিটেড থেকে এক কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৬০ রুপির ৩৬টি পিকআপ কার্গো ভ্যানের একটি চালান বেনাপোল বন্দরে এসেছে। যার আমদানিকারক ঢাকার নিতা কোম্পানি লিমিটেড। নিতা কোম্পানি ১০ জুলাই ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া শাখায় এ পণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলেন। ১৫ দিনের মধ্যে এলসির পণ্য বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করলো।
ভারতর পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, আগে শুধুমাত্র ডলারে বাংলাদেশে পণ্য পাঠানো যেত। বাংলাদেশে ডলারের অভাব দেখা দেওয়ায় ভারতীয় রুপিতেও পণ্য পাঠানো যাবে বলে নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম এক কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৬০ রুপির পণ্য বাংলাদেশে গেলো। পুরনো পদ্ধতিতেও (ডলারে) পণ্য পাঠানো যাবে।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। আর্থিকভাবে উপকৃত হয় ভারত সরকার। নতুন পদ্ধতিতে কিছুটা সুবিধাই হবে। নতুন পদ্ধতিতে ব্যাংকে দুই বারের বদলে একবার টাকা কাটবে। সময়ও কম লাগবে। তবে পুরোটা চালু হতে সময় লাগবে। পরীক্ষামূলক মঙ্গলবার টাটা মোটরসের কাজ শুরু হলো। এ পদ্ধতি পুরোপুরি চালু হলে সীমান্ত বাণিজ্যের আরও উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়। একইসঙ্গে আমদানির পাশাপাশি রপ্তানির ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি চালুর দাবি করেন তিনি।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, মঙ্গলবার ভারত থেকে নিতা কোম্পানির নামে ৩৬টি পিকআপ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এ পণ্যটি ভারতীয় রুপিতে আমদানি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১১ জুলাই রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা যৌথভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ওই দিন দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি, ভারতীয় হাইকমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসি/
খুলনা
কুষ্টিয়া কারাগার থেকে পালাল অর্ধশতাধিক আসামি
কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক আসামি পালিয়েছে গেছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়েন কারারক্ষীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনার পর সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
তবে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা গণমাধ্যমে বলছেন, ১২-১৩ জনের মতো আসামি পালিয়েছেন। পলাতকদের তালিকা করার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জামিন পান। দুপুর আড়াইটার দিকে বের হওয়ার কথা ছিল। তাদের সঙ্গে বের হতে হট্টগোল শুরু করেন কারাবন্দীরা। এ সময় কারারক্ষীরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালান। তবে এর আগেই অর্ধশত আসামি পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার আবু মুসা গণমাধ্যমে জানান, কারাগার থেকে ঠিক কত জন কয়েদি পালিয়ে গেছে তা সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
এএম/
খুলনা
মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১০
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্যসহ ১০ জন।
রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখিন হয়। ঘটনাস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করলে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী নিহত হন।
জেলা শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে জানান, ‘রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।’
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেডএস/
খুলনা
কনস্টেবল সুমন হত্যায় মামলা, অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি ১২০০
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় খুলনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামী হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
লবণচরা থানার এসআই মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে লবণচরা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান লবণচরা থানার ওসি মমতাজুল হক।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার বিকেলে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।
নিহত সুমন ঘরামীর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নগরীর বয়রা এলাকায়। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন তিনি। সমুনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস। তাদের ৬ বছর বয়সি স্নিগ্ধা নামে এক মেয়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত্তি দিয় পুলিশ জানায়, বিকেলে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরে আবার সোনাডাঙ্গা এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন গুরুতর আহত হন। পরে রাতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা গেছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের আরও ৩০ সদস্য।
এসি//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন