করোনা ভাইরাস
জার্মানিতে লকডাউন বাড়ল, কমল বিধি-নিষেধ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আরোপিত লকডাউন ধীরে ধীরে তুলে নিচ্ছে জার্মানি। এ লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, জার্মানিতে চলমান লকডাউন ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে বেশকিছু বিধিনিষেধে ছাড় দেওয়া হয়েছে। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল জানান, পাঁচটি পদক্ষেপে ধীরে ধীরে লকডাউন তোলার ব্যবস্থা করা হবে। তবে লকডাউন তুলতে গিয়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারো ওই অঞ্চলে কড়া লকডাউন ফিরিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে টিকাদানে আরও গতি আনার কথাও জানান মার্কেল।
বুধবার জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রধানদের সঙ্গে টানা প্রায় ৯ ঘণ্টা বৈঠকের পর লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান দেশটির চ্যান্সেলর।
জার্মান চ্যান্সেলরের ঘোষণা;
বৈঠকের দেওয়া বিবৃতিতে মার্কেল জানান, জাতীয় এবং রাজ্য স্তরে পাঁচটি পদক্ষেপের মাধ্যমে লকডাউন শিথিল করা হবে।
প্রতি ১৪ দিনে নেওয়া হবে পদক্ষেপগুলো। তবে সংক্রমণ না কমলে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হবে না।
লকডাউন শিথিল করার পর তিন দিন সংক্রমণ একশর বেশি হলে আবারো কড়া লকডাউন ফিরিয়ে আনা হবে।
আগামী ৮ মার্চ থেকে জার্মানির সব নাগরিক সপ্তাহে একবার বিনামূল্যে র্যাপিড টেস্ট করাতে পারবে।
এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সবাইকে দেওয়া হচ্ছে না। ৬৫ বছরের নীচের বয়সীরা এই ভ্যাকসিন পাচ্ছে। এই নিয়ম বদলানো যায় কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি স্বাধীন কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রীন সিগন্যাল মিললে সবাইকেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হবে।
ঘোষিত পাঁচ পদক্ষেপ;
খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল ও ডে কেয়ার। কাজ শুরু করতে পারবে সেলুনগুলোও। গেল এক মার্চ থেকে চালু হয়ে গেছে এই নিয়ম। খুলে গেছে স্কুল, ডে কেয়ার।
আগামী ৮ মার্চ থেকে খোলা যাবে বই এবং ফুলের দোকান। তবে ১০ স্কয়ার মিটারের ব্যবধানে ক্রেতাদের থাকতে হবে। কঠোরভাবে পালন করতে হবে এই নিয়ম। খুলে দেওয়া হবে মাসাজ পার্লারও। তবে কর্মীদের করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলেই কাজ শুরু করতে পারবে তারা।
প্রতি এক লাখে সংক্রমণ ৫০-এর মধ্যে থাকলে ৮ মার্চ থেকে জাদুঘর, চিড়িয়াখানার মতো জায়গা খুলে দেওয়া হবে। খোলা হবে রিটেল স্টোরও। তবে ১০ স্কয়ার মিটারের ব্যবধান মানতে হবে। বাইরে খেলাধুলো করতে পারবে ১০ জন পর্যন্ত।
এই নিয়ম চালু হওয়ার পর সংক্রমণ বাড়তে থাকলে প্রতিটি নিয়মই বদলে ফেলা হবে। প্রি-বুকিং করে ঢোকা যাবে জাদুঘর, চিড়িয়াখানায়। অন্তত ৪০ স্কয়ার মিটারের ব্যবধান মানতে হবে। একসঙ্গে বাইরে খেলতে পারবে পাঁচজন।
আগামী ২২ মার্চ থেকে চতুর্থ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংক্রমণ ৫০-এর নিচে থাকলে থিয়েটার, আউটডোর রেস্তোরাঁ, অপেরা হাউসের মতো জায়গা খুলে দেওয়া হবে। কনট্যাক্টলেস ইনডোর এবং আউটডোর খেলায় কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে ৫০ থেকে এক শ’র মধ্যে হলে এই সব কিছুই প্রি-বুকিংয়ের মাধ্যমে করতে হবে।
৫ এপ্রিল থেকে নেওয়া হবে পঞ্চম পদক্ষেপ। সংক্রমণ ৫০-এর নিচে থাকলে এক জায়গায় জমায়েত হতে পারবে ৫০ জন। সব নিষেধ তুলে নেওয়া হবে খেলাধুলার ওপর থেকে। সংক্রমণ ৫০ থেকে এক শ’র মধ্যে থাকলে খোলা যাবে সব দোকান। তবে মানতে হবে ১০ স্কয়ার মিটারের দূরত্ব।
একই সঙ্গে টিকাদানেও গতি আনা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে পরীক্ষার সংখ্যা। দিনে দুই লাখ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মার্চের শেষ এবং এপ্রিলের শুরুতে জার্মানির সব চিকিৎসকের টিকা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাই যাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিতে পারে সে চেষ্টাও করা হচ্ছে।
এসএন
করোনা ভাইরাস
ফের ফিরে আসছে করোনা-আতঙ্ক!
মানুষ যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে, তখনই হঠাৎ করে আবার জেএন.১ নামের এক উপধরন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে এই ধরন পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে নতুন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। যদিও নতুন এ ধরনে বাংলাদেশে কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি।
নতুন ধরনের সংক্রমণ মোকাবেলায় আবারও হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল স্থানে মাস্ক ব্যবহারসহ চার দফা পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ৬৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকলের পরামর্শের আলোকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। সেগুলো হলো—
১। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি— যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো। কমিটি মনে করে কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটি সহায়ক হবে।
২। সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও দেশে নজরদারি জোরদার করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রুত চিকিৎসার সকল প্রস্তুতি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং এর প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩। কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৪। সভায় অস্ত্রোপচার অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কমিটি কেবলমাত্র কোভিডের লক্ষণ/উপসর্গ থাকলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যে একে ‘ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনটি অতিদ্রুত ছড়াচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ওমিক্রনের উপধরন হলো জেএন.১। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ায় জেএন.১ আরও অনেক বেশি কার্যকর। ফলে সংক্রমণের হার বেশি। তবে ঝুঁকি কম।
করোনা ভাইরাস
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০৪ জনের
গেলো ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বব্যাপী আরও ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫৯৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৫ জন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে করোনার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৬ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩২ জন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আফগানিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৪৮ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার ১৩৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ২২৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।
করোনা ভাইরাস
এক মাসে করোনা রোগী বেড়েছে ৫২%
বিশ্বজুড়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গেলো চার সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। এ সময় নতুন করে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুহারও। জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, আগের ২৮ দিনের তুলনায় গেলো চার সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মারা গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৭৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জনকে।
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের জেএন.১ ধরনটিকে পৃথক ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটিকে এতদিন করোনার বিএ.২.৮৬ ধরনের একটি অংশ হিসেবে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ গণ্য করা হতো। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, জেএন.১-এর কারণে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত কোনো বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে উত্তর গোলার্ধে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।