বরিশাল
ববিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১২
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের মোট ১২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শনিবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল জাহিদ ফারুক শামীম অনুসারী রক্তিম- বাকি গ্রুপ ও অপরটি সাবেক মেয়রের সাদেক আবদুল্লাহ অনুসারী। রাতে মেয়রপন্থী রাফি-শরীফ গ্রুপ এবং রক্তিম-বাকি গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরে দুই গ্রুপের আহতদেরকে শেরে বাংলা মেডিকেলের একই ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। মেডিকেলেও মেয়রপন্থীদের ওপর হামলা করে রক্তিম-বাকি গ্রুপ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টায় প্রথমে শেরেবাংলা হলে প্রবেশ করে হেলমেট ও মাক্স পরিহিত ২০ থেকে ২২ জনের একটি দল। এসময় হেলমেট পরিহিতদের হাতে দেশিয় অস্ত্র, জিআই পাইপসহ লাঠিসোটা দেখা যায়। হলে ঢুকে হলের প্রধান গেট আটকে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলো বাইরে থেকে সিটকানি লাগিয়ে দেয়। পরে তারা চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করে।
এরপর শেরেবাংলা এবং বঙ্গবন্ধু হলের মধ্যবর্তী মাঠ পেরিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলায় প্রবেশ করে। সেখানে রক্তিম-বাকি গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মীদের রুম তল্লাশি করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে দুটি গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই গ্রুপের ৯ জন আহত হয়।
আহতরা হলেন রক্তিম-বাকি গ্রুপের সমাজবিজ্ঞান বিভগের ২০১৪-১৫ সেশনের মাইদুর রহমান বাকি, রসায়ন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের সাইমুন ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আয়াতউল্লাহ এবং ইরফান হোসেন রাজ, ইবনে গালিব, রাকিবুল হোসেন রনি ও সোহেল রানা।
রাফি-শরীফ গ্রুপে আহতরা হল- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফাত্তাউর রাফি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের হাসিবুল হাসান শান্ত, আল সামাদ শান্ত, মো. মঞ্জু ও শরীফুল ইসলাম।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রক্তিম হাসান তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। আহত মুয়ীদুর রহমান বাকি বলেন, আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের অধিকাংশই বিগত দিনে নানা অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। কিন্তু তারপরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এভাবে হামলা চালানোর সাহস পেয়েছে তারা।
রাফি-শরীফ গ্রুপের আহত আল সামাদ শান্ত বলেন, মাইদুর রহমান বাকি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়। হঠাৎ সে ক্যাম্পাসে এসে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী দাবি করে অবৈধভাবে হলে থাকে এবং মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাদের রুমে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মারধর করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, রাতে হামলার বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত আছে।
কেএস
বরিশাল
ববিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিটিংয়ে ছাত্রলীগের হামলা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা গেট থেকে বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আহতদের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১০ আহত শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ববি সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ২০ শিক্ষার্থী ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিং করছিলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠি, রড ও পাইপ নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগের মাহমুদুল হাসান তমাল, আল সামাদ শান্ত, খালেদ হাসান, শাহরিয়ার সান, সাব্বির, জাইফ, সাইফ, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামকে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। হামলার পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের মিটিংকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের সামনেই আমাদের বেধরক মারধর করে ছাত্রলীগ।
বরিশাল নগর পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিটিং শেষ দিকে ছিলো। তখন কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও অন্য এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তারা ছাত্রলীগ কিনা তা বলতে পারবো না, তবে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত একে আরাফাতের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অংকন করতে গেলে হামলার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
কেএস/
দেশজুড়ে
বিপৎসীমার ওপরে বরিশালের ১০ নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বরিশাল নগরীসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানি প্রবাহ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাউবো জানায়, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীতে ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা নদী ৮৯ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও উমেদপুর পয়েন্টে কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী বাসিন্দা আরশাদ আলী বলেন, মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যারা বেড়িবাঁধের বাইরে থাকেন তাদের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এজন্য বাধের কূলে এক ঘরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমলে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় কেবল উপকূলীয় এলাকা নয়। জেলা শহরের ভিতরেও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে।
আই/এ
বরিশাল
বরিশাল থেকে লঞ্চ ও বাস চলাচল শুরু
বরিশালে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা এবং মেট্রেপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ দিন বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে; সড়ক পথেও চলছে যাত্রীবাহী বাস।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে বুধবার (২৪ জুলাই) বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করেছে। তবে সন্ধ্যা ৬ টার কারফিউ কঠোর থাকায় ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল করেনি।
নগরবাসী জানান, নগরে গণপরিবহন চলছে এবং ব্যাংক-বিমা-অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়াতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা ব্যক্তিরা অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। পরিস্থিতি এমনই থাকুক, আর কোনো অস্থির বা অস্থিতিশীল পরিবেশ চান না নগরবাসী।
উল্লেখ্য, কারফিউ শুরুর পর গেলো ২০ জুলাই থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
জেডএস//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন