খুলনা
ত্রিভুজ প্রেম সঙ্গে ভণ্ড কবিরাজির খেল
খুলনায় তিন বছর আগে রবিউল মোল্যা নামে এক যুবকের হাত-পা বাঁধা মরদেহ মিলেছিল নিজ ঘরে। গলায় ছিল শ্বাসরোধের চিহ্ন। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল গোলাপজলের বোতল, আগরবাতি ও কালো সুতা। তবে কে বা কারা কেন তাকে হত্যা করেছে, তা উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয় পুলিশ। চার তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অবশেষে জট খুলেছে খুলনার তেরখাদার ওই হত্যা রহস্যের।
সবশেষে মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল ত্রিভুজ প্রেম ঘিরে জটিলতা, তিন বিয়ে আর ভণ্ড কবিরাজের কারসাজি। রবিউলের দ্বিতীয় স্ত্রী শামীমা ওরফে পুঁটি এবং তার তৃতীয় স্বামী ইশারত শেখের পরিকল্পনায় ঘটে হত্যাকাণ্ড। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে। আর তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় রবিউলের প্রথম স্ত্রীসহ ৯ জনকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই খুলনার এসআই নয়ন চট্টোপাধ্যায় বলেন, বহুমুখী সম্পর্কের জটিলতায় ঘেরা এ হত্যার জট খুলেছে ধাপে ধাপে। একটি সূত্র ধরে এগিয়ে যেতেই মিলেছে পরের সূত্র। শেষ ধাপে এসে দেখা যায়, ঘটনায় জড়িত নিহত যুবকের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুরো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
তদন্ত সূত্র জানায়, রবিউল কখনও বিক্রয়কর্মী, আবার কখনও শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি মাঝেমধ্যে ঢাকায় এসে থাকতেন। প্রথম স্ত্রী সালমা বেগম ওরফে বালিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। এক পর্যায়ে শ্যালকের স্ত্রী শামীমার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা বিয়ে করে ঢাকায় সংসার পাতেন। তবে কিছুদিন পর তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও মনোমালিন্য হলে রবিউল ফেরেন প্রথম স্ত্রীর কাছে।
এদিকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান শামীমার ভাই মিকাঈল। সেখানে তার সঙ্গে আরেক কারাবন্দি ইশারত শেখের পরিচয় এবং সখ্য গড়ে ওঠে। জামিন পাওয়ার পর মিকাঈলের বাসায় গেলে ইশারত ও শামীমার পরিচয় এবং ফোন নম্বর বিনিময় হয়। কথোপকথনে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে জানালেও দ্বিতীয় বিয়ের কথা চেপে যান শামীমা। এর মধ্যে রবিউল আবারও কথা বলে শামীমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। দেড় মাস পর আবার তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে শামীমা নড়াইলের নড়াগাতিতে বাবার বাড়িতে ফেরেন। এর পর ইশারতের সঙ্গে আবারও কথোপকথন শুরু হয়। কিছু দিন পর ঢাকায় এসে তারা বিয়ে করেন।
এর মধ্যে বিয়ের কথা জানতে পেরে শামীমাকে ফোন করেন রবিউল। কথোপকথন শুনে ইশারত স্ত্রীর আগের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তাকে মারধর করেন। এতে রাগ করে শামীমা বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে থেকে তিনি রবিউল ও ইশারত দু’জনের সঙ্গেই ফোনে কথা চালিয়ে যান। এর পর আবার ঢাকায় রবিউলের কাছে ফেরেন। তখন ইশারত তাকে কল করলে তা রিসিভ করেন রবিউল। তিনি শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করলে ক্ষিপ্ত হন ইশারত। এর মধ্যে রবিউলের সঙ্গে শামীমার আবারও কলহ হয় এবং তিনি ফিরে যান। এর পর ইশারতের সঙ্গে কথা বলে রবিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইশারত কবিরাজ পরিচয়ে রবিউলের শ্যালক মোজাহিদকে ফোন করে বলেন, শামীমা তার কাছ থেকে তন্ত্রমন্ত্রের ‘তদবির’ নিয়ে রবিউলকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি অনুতপ্ত। তার পরামর্শ মেনে চললে রবিউল ও তার বোনের (প্রথম স্ত্রী সালমা) সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যাবে। পরে তিনি সালমার সঙ্গে দেখা করে একটি ওষুধ (ইঁদুর মারার বিষ) দেন। ২০২০ সালের ২৩ জুন ঘটনার দিন ইশারতের পরামর্শে কবিরাজি ওষুধ ভেবে স্বামীকে বিষ খাওয়ান সালমা। রবিউল অচেতন হয়ে পড়লে কবিরাজবেশী ইশারত ওই বাড়িতে যান। তিনি বিষ মেশানো কোমল পানীয় বাড়িতে উপস্থিত সবাইকে খেতে দেন। কিছুক্ষণ পর তারাও অচেতন হয়ে পড়লে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে রবিউলকে হত্যা করে পালিয়ে যান।
খুলনা
কুষ্টিয়া কারাগার থেকে পালাল অর্ধশতাধিক আসামি
কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক আসামি পালিয়েছে গেছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়েন কারারক্ষীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনার পর সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
তবে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা গণমাধ্যমে বলছেন, ১২-১৩ জনের মতো আসামি পালিয়েছেন। পলাতকদের তালিকা করার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জামিন পান। দুপুর আড়াইটার দিকে বের হওয়ার কথা ছিল। তাদের সঙ্গে বের হতে হট্টগোল শুরু করেন কারাবন্দীরা। এ সময় কারারক্ষীরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালান। তবে এর আগেই অর্ধশত আসামি পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার আবু মুসা গণমাধ্যমে জানান, কারাগার থেকে ঠিক কত জন কয়েদি পালিয়ে গেছে তা সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
এএম/
খুলনা
মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১০
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্যসহ ১০ জন।
রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখিন হয়। ঘটনাস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করলে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী নিহত হন।
জেলা শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে জানান, ‘রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।’
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেডএস/
খুলনা
কনস্টেবল সুমন হত্যায় মামলা, অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি ১২০০
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় খুলনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামী হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
লবণচরা থানার এসআই মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে লবণচরা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান লবণচরা থানার ওসি মমতাজুল হক।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার বিকেলে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।
নিহত সুমন ঘরামীর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নগরীর বয়রা এলাকায়। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন তিনি। সমুনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস। তাদের ৬ বছর বয়সি স্নিগ্ধা নামে এক মেয়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত্তি দিয় পুলিশ জানায়, বিকেলে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরে আবার সোনাডাঙ্গা এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন গুরুতর আহত হন। পরে রাতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা গেছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের আরও ৩০ সদস্য।
এসি//
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন