উত্তর আমেরিকা
গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করায় ১০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত থাকায় মধ্য-আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার ১০০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলোর শাসনামলে নিকারাগুয়ানদের মানবাধিকার সীমিত করার সাথে ওই ১০০ কর্মকর্তা জড়িত। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, নাগরিক স্বাধীনতার ওপর নির্বিচার আক্রমণের ঘটনায় ওর্তেগা-মুরিলো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কর্মকর্তারা সুশীল সমাজের সংস্থাগুলোকে দমন, নাগরিক পরিসর বন্ধ করার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন। তারা অন্যায়ভাবে সরকারের সমালোচকদের আটক করেছেন। আটককৃতদের মধ্যে দেশটির সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত বিশপ রোলান্ডো আলভারেজও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে, ওর্তেগার শাসনামলে একাধিক ক্যাথলিক রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করায় গত বছর দেশটিতে আলভারেজসহ একাধিক পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) বলছে, সরকারি কর্মকাণ্ডে বাধা, সরকারের কাজের অবমূল্যায়ন, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং অবাধ্যতার দায়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আলভারেজকে ২৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই সময় তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি তার নিকারাগুয়ান নাগরিকত্বও বাতিল করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া এক বার্তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, আমরা নিকারাগুয়ার সরকারের প্রতি নিঃশর্ত ও অবিলম্বে বিশপ আলভারেজ এবং অন্যায়ভাবে আটক সকল বন্দিকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
নিকারাগুয়ার সরকার দেশটিতে জেসুইট-পরিচালিত বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সন্ত্রাসের কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে; যা দেশটির ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে সরকারের সর্বশেষ হুমকিমূলক পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। নিকারাগুয়ার সরকারের এমন পদক্ষেপের কয়েকদিন পরই মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
দেশটিতে ২০২১ সালের নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার আগে ড্যানিয়েল ওর্তেগা কয়েক ডজন বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠান। দেশটির বিরোধীদলীয় অনেক নেতা ও সরকারের সমালোচক ওই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ড্যানিয়েল ওর্তেগার প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণের আগ মুহূর্তে নিকারাগুয়ার ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় মার্কিন অর্থবিভাগ। একই সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাবাহিনী, টেলিকম এবং খনি খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদও জব্দ করা হয়।
এর আগে, ২০২১ সালে নিকারাগুয়ার রাজনীতি ও বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত ১০০ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন নিকারাগুয়ার সংসদ জাতীয় পরিষদের কিছু সদস্য, বিচারক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
গত ১৯ জুলাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে মধ্য আমেরিকার চারটি দেশের ৩৯ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মধ্যে নিকারাগুয়ারও ১৩ জন ছিলেন। এছাড়া বাকিরা হলেন গুয়াতেমালার ১০ জন, হন্ডুরাসের ১০ জন এবং এল সালভাদরের ছয়জন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা চিহ্নিত বিদেশি এই ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রাপ্তিতে ও দেশটিতে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ইতিমধ্যে তাদের নামে কোনও ভিসা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার ও অন্য কোনও বৈধ ভিসা বা প্রবেশের নথিপত্রও বাতিল করা হবে।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
উত্তর আমেরিকা
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিলেন কামলা হ্যারিস
গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ প্রয়োগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ( ২৫ জুলাই) হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে নেতানিয়াহুকে চাপ প্রয়োগ করেন। এর মধ্য দিয়ে কামলা প্রেসিডেন্ট হলে ইসরাইল ইস্যুতে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আনবেন তা স্পষ্ট হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কামলা বলেন, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু সেটি কীভাবে করা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি গাজায় ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার উৎকণ্ঠা জানিয়েছে। আমি চুপ করে থাকব না।’
হ্যারিসের এই তীক্ষ্ণ ও জোরালো মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি কিভাবে নেতানিয়াহুকে মোকাবেলা করছেন সে বিষয়ে বাইডেনের সঙ্গে তার পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
এর কয়েক ঘন্টা আগে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠক করেন। গেলো ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর বাইডেনের ইসরাইলে সফর শেষে এটিই নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার প্রথম মুখোমুখি আলোচনা। এই আলোচনায় গাজায় ৯ মাস ধরে চলা সংঘাতে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুকে চাপ দেন বাইডেন।
এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ব্যবধান রয়ে গেছে তবে আমরা আগের চেয়ে এখন চুক্তির কাছাকাছি আছি। যা আগে কখনও ছিলাম না।
নেতানিয়াহুর এই সফর এমন সময় হলো যখন মার্কিন রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। রোববার ( ২১ জুলাই) ৮১ বছরের বাইডেন ডেমোক্র্যাটদের চাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এবং দলের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের জন্য হ্যারিসকে সমর্থন করেন।
জেএইচ
উত্তর আমেরিকা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌঁড়ে ‘শেষ পর্যন্ত’ থাকছেন বাইডেন
২০২৪ সালের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে জো বাইডেন সরে যাচ্ছেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দৌঁড় থেকে কেউ তাকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে না। তিনি দলের মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সব চাপ উপেক্ষা করে লড়াইয়ে ‘শেষ পর্যন্ত’ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকার এই প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩ জুলাই) ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে থাকা কিছু কর্তা ব্যক্তির সঙ্গে এক ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
জো বাইডেন গেলো সপ্তাহে তার দুর্বল বিতর্কের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নির্বাচনী দৌঁড় থেকে সরে যেতে তার ওপর চাপ কার্যত বেড়েই চলেছে। এমনকি নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতর থেকেও চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই বাইডেনের এই ফোনকল।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার তার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলেন এবং ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসময় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গেলো বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত দুর্বল। অনেকেই বলছেন, ৮০ বছরের বেশি বয়সী বাইডেনের এবার আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত নয়। কারণ, তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। বিতর্কের সময় প্রতিপক্ষের কথার জবাবও দিতে পারছেন না।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বাইডেনের বয়স এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
এমন অবস্থায় বুধবার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত গেলো সপ্তাহের বিতর্কে নড়বড়ে পারফরম্যান্সের পরে তাকে নির্বাচনী লড়াই বাদ দেয়ার আহ্বানগুলো ঝেড়ে ফেলেন।
তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই মনে করছেন, দলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জো বাইডেনের আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত হবে না।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন