জাতীয়
স্বদেশে ফেরার দাবিতে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার সমাবেশ
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের আজ (২৫ আগস্ট) ছয় বছর। দিনটিকে রোহিঙ্গারা ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন।
আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনকে স্মরণ করেছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
তারা মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে কক্সবাজারের ১২টি ক্যাম্পে আলাদাভাবে সমাবেশ করেছেন। এসব ক্যাম্পে শিশুসহ প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নেন। তারা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সমাবেশ থেকে।
সকাল ১০টায় উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ মো. হারুন মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। এ সময় তাদের নিজস্ব ভাষার তারানা (গানের) মাধ্যমে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে তার পাশে আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে ২০২১ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবউল্লাহকে। এর আগে এমন সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গারা সমাবেশে যোগ দেন। নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সের রোহিঙ্গারা সমাবেশে অংশ নেন। মিয়ানমারে ফিরে যেতে সমাবেশ থেকে দাবি জানান তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার মো. জোবায়ের, মাস্টার মোহাম্মদ মাস্টার কামাল, সৈয়দ উল্লাহ, মোহাম্মদ মুছা, মো. রফিক, মো. সোয়েব ও রোহিঙ্গা নারী সামিদা উয়েন প্রমুখ। বক্তারা দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান।
মাস্টার মো. কামাল তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার বাহিনী যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা দেখে পুরো দুনিয়া রোহিঙ্গা মজলুমদের জন্য কেঁদেছেন। আমরা সেই গণহত্যার বিচার চাই। সেদিন মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে ভেবেছিল তারা রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের জন্মভূমি আরাকান কাউকে লিজ দিয়ে আসেনি। যেকোনোভাবে রোহিঙ্গারা আরাকান ফিরতে চায়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দাবি থাকবে রোহিঙ্গাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিন।
রোহিঙ্গা যুবনেতা মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ দেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনের ছয় বছর কেটেছে, ভাসমান এ জীবন থেকে মুক্তি চাই।
সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মিয়ানমারের জান্তারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। আমরা আরকানে নিজ ভিটায় ফিরতে চাই।
সমাবেশে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এপিবিএন পুলিশ টহল জোরদার করে। ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান জানান, সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষ করেছে। আমাদের অধীনে পাঁচটি ক্যাম্পে আলাদাভাবে ৯ হাজার রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশে নেয়। রোহিঙ্গারা সমাবেশে শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের দাবি জানান।
এপিবিএন পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গারা ‘গণহত্যা’র ছয় বছর উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১২, ১৩, ৮, ১৯, ২০, ২২, ২৪ নম্বর ক্যাম্পসহ ১২ জায়গায় শুক্রবার একসঙ্গে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করেন। তাঁরা সেখানে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এসব ক্যাম্পে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি ও প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, ১৩৫ জনগোষ্ঠীদের মতো স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ নানা দাবি উত্থাপন করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন