অন্যান্য
হাওর অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা : প্রতিকূলতা ও উত্তরণের পথ
শিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। দেশের সার্বিক উন্নয়ন তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার জন্য ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার’ বিকল্প নেই। দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেই দিক থেকে পিছিয়ে নেই প্রাথমিক শিক্ষাও। দেশের শিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তবে তার হার এখনো শতভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার মূল বুনিয়াদ প্রাথমিক শিক্ষা। তাই প্রতিটি শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করা ও ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।যা হাওর অঞ্চলের জন্য অনেক কঠিন, এজন্য হাওর এলাকায় অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের উপস্থিতির হার কম এবং ঝরে পড়ার হার বেশি। হাওর অঞ্চলের বিদ্যালয় এগুলোতে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। হাওরের বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি ও জেলে। অনেক সময় পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারি ব্যক্তিটি পরিবারের ব্যয়ভার চালাতে হিমশিম খেয়ে ওঠে যার কারণে শিশুদেরকে তাদের সাথে যোগ দিতে হয়। তাছাড়াও হাওরে শিক্ষক সংকট ও অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যে-সকল বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়েছে , সে সমস্ত বিদ্যালয়গুলোতে প্রশিক্ষণ ঘাটতি অনেক বেশি।অনেক শিক্ষক প্রস্তুতি ও উপকরণ বিহীন ক্লাসে উপস্থিত হন এবং শিশুদেরকে মোটিভেশনের মাধ্যমে পাঠদান করান না। ফলে শিশুরা পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের টেকসই উন্নয়ন (এসটিজি) অর্জনে বদ্ধপরিকর যা শিক্ষার হার বৃদ্ধি ব্যতীত সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী “সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা” নিশ্চিত করতে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-
*শিক্ষকদের সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত নিশ্চিত করা,সময়মতো পাঠদান শুরু করা ও আন্তরিকভাবে পাঠদান করতে শিক্ষকদের মোটিভেট করা।
* যে সকল শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা ও হোম ভিজিটের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে উপস্থিত নিশ্চিত করা।
* অভিভাবকদের সচেতন করতে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রতিমাসে মা সমাবেশ নিশ্চিত করা।
*বিদ্যালয় এলাকার যে সকল ব্যক্তি পড়াশুনা করে দেশে ও দেশের বাহিরে সম্মানজনক পেশায় আছেন তাদের মাধ্যমে ওয়ার্কশপ তথা ওঠান বৈঠক করে সচেতনেতা গড়ে তুলতে হবে।
* হাওর এলাকার যে সকল শিশুর পরিবার তুলনামূলক দরিদ্র, তাদের কে নিয়মিত খাতা-কলম,স্কুল-ব্যাগ, স্কুল-ড্রেস, প্রদান করতে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
* বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে রাখতে শ্রেণীকক্ষে ,বারান্দায়, বিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সজ্জিত করতে হবে।
*শিশুরা যেন বাংলা,ইংরেজি শুদ্ধভাবে পড়তে পাড়ে তার জন্য রিডিং-ক্লাব গঠন করে রিডিং টেস্ট গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়াও গণিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিকের চার নিয়ম ও সংখ্যার ধারণার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
*শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং দেশপ্রেমে সচেতন করতে “মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের” পাশাপাশি “মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার” স্থায়ীকরণ করতে হবে।
* যে সকল বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সে সকল বিদ্যালয়ে মাঠ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
*প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর করতে বাগান করণ নিশ্চিত করতে হবে,প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের বারান্দা ও ছাদ ব্যবহার করতে হবে ,এবং শিশুদের কে বৃক্ষের গুরুত্ব বুঝাতে হবে।
*কৃতি-শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দিতে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
* ৩য়-৫ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের ডাইরি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
*শিশুদের কথা বলার জড়তা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার জন্য ,প্রতিটি ক্লাস শেষে ধন্যবাদ দেওয়ার রীতি চালু করতে হবে, সেই সাথে শিশুদেরকে ও তা শিখাতে হবে।
উপরের বিষয়সহ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে অচিরেই শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত হবে,শিক্ষার গুণগত মান আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ঝরে পরার হার শূন্যে নেমে আসবে ।ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের টেকসই উন্নয়ন (এসটিজি) অর্জন অনুযায়ী সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
লেখক : মাসুদুজ্জামান মনির
সহকারী শিক্ষক, পশ্চিম আব্দুল্লাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অষ্টগ্রাম,কিশোরগঞ্জ।
অন্যান্য
ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাবির শিক্ষার্থীরা
কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
এর আগেও শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গেলো ১, ২, ৩ ও ৪ জুলাই টানা চার দিন যথাক্রমে ১০ মিনিট, ২০ মিনিট, ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ও ৩৫ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
টিআর/
অন্যান্য
কোটা বাতিলের দাবিতে আজ শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আজ সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন কোটা পদ্ধতি বাতিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলন করছেন তারা।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টায় দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবরোধ শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদি বাধ্য করা হয়, আমরা প্রয়োজনে সারা দেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আজকের ছাত্রসমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি না খোলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে খুলে নিতে বাধ্য হবো।
জেএইচ
অন্যান্য
৪র্থ দিনের মতো চলছে কোটা বিরোধী আন্দোলন, শাহবাগ অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার দাবিতে চতুর্থদিনের মতো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান গ্রহণ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে শাহবাগ অচল হয়ে পড়ে।
শনিবার (৪ জুলাই) বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব হলের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি-বুয়েট, ইডেন কলেজ হয়ে বেলা পৌনে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। আজকের বিক্ষোভে সর্বোচ্চ উপস্থিতি হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা যোগদান করেন।
এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ৩ দিন ব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির শুক্রবার ১ম দিনের কর্মসূচিতে অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় ৭০টিরও অধিক বিভাগ ও ইন্সটিটিউট। ফলে আজ বিভিন্ন বিভাগ থেকেও পৃথক পৃথক ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সরজমিনে শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড়ে বসে স্লোগান দিতে দেখা যায়। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সাধারণ জনগণ গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে থাকেন। তবে এম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷
আরও পড়ুন: যবিপ্রবিতে ৭ দিন ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা কোটা আন্দোলনকারীদের
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা নিজেদের অবস্থান গ্রহণ করেছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচির আলোকে আজকে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আগামীকাল আমাদের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হবে। আজ শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিরভপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ৪ দফা দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রসমাজ। ৪ দফা দাবিগুলো হলো-
১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২। ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ছাড়া);
৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
টিআর/
মন্তব্য করতে লগিন করুন লগিন