পরামর্শ
নিয়মিত যে পানীয় পানে সুস্থ থাকবে ‘হার্ট ও লিভার’
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, ফলের রাজা হল আমলকী। তাই প্রায়দিন এই ফল খেলে যে একাধিক রোগবিরেতের ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারবেন। সুতরাং সুস্থ-সবল থাকার ইচ্ছে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আমলকীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিন।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, আমলকী হল একাধিক উপকারী ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আঁতুরঘর। তাই দেহে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, বেশি উপকার পেতে চাইলে রোজ সকালে এই ফলের জুস করে খেতে হবে। এই কাজটা করলেই ছোট-বড় রোগব্যাধির থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন বলে দাবি করছেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
তাই আর অহেতুক সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব এই প্রতিবেদন থেকে আমলকীর জুস পান করার একাধিক চমকে দেয়া উপকার সম্পর্কে জেনে নিন। আশা করছি, রোজ সকালে এই পানীয় গলায় ঢাললেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
এক. বাড়বে ইমিউনিটি
আমাদের আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। মুশকিল হল, একটু সুযোগ পেলেই কিন্তু এইসব রোগ জীবাণু শরীরের উপর হামলা চালাতে পারে। তাই যেন তেন প্রকারেণ ইমিউনিটি বাড়িয়ে রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আমলকীর রস। এই প্রসঙ্গে হেলথলাইন জানাচ্ছে, আমলকীর জুসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই একাধিক সংক্রামক রোগের ফাঁদ এড়াতে এই পানীয়ে চুমুক দিতে ভুলবেন না যেন!
দুই. লিভার থাকবে সুস্থ-সবল
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল লিভার। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের ভুল খাদ্যভ্যাসের দরুন এই অঙ্গের গুরুতর ক্ষতি হচ্ছে। এমনকী পিছু নিচ্ছে ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস এবং লিভার ফাইব্রোসিসের মতো জটিল অসুখ। তাই তো সুস্থ থাকার ইচ্ছে থাকলে লিভারের হাল ফেরাতে হবে। আর এই কাজে আপনার সহযোগী যোদ্ধা হতে পারে আমলকীর রস। কারণ এই ফলে এমন কিছু অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট মজুত রয়েছে যা লিভার ফাংশন বাড়তে পারে। তাই ফেরাতে যকৃতের হাল, এই পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দেয়া দরকার।
তিন. চাঙ্গা হবে হজমক্ষমতা
নিয়মিত গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো পেটের সমস্যায় ভুগতে হয় নাকি? তাহলে যে আগামীকাল থেকেই আমলা জুস গলায় ঢালতে হবে। এতেই আপনার পেটের হাল হকিকত বদলে যাবে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমলকীতে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা পাকস্থলীর আলসার অসুখটিকে প্রতিরোধ করতে পারে। এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা মেটানোর কাজেও এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার।
চার. হার্টের বন্ধু আমলার জুস
নিয়মিত আমলার জুস পান করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমবে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে। ফলে সুস্থ থাকবে হার্ট। এমনকী এড়ানো যাবে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারণ রোগের ফাঁদ। শুধু তাই নয়, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ প্রশমিত করার কাজেও আমলা জুসের জুড়ি মেলা মুশকিল। তাই তো হার্টের রোগে আক্রান্ত রোগী এবং যাঁদের বাড়িতে এই রোগের ইতিহাস রয়েছে, এই দুই দলকেই নিয়মিত আমলকীর জুস পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
পাঁচ. কিডনির স্বাস্থ্য ফিরবে
ডায়াবিটিস, হাই প্রেশারের মতো রোগের কারসাজিতে কিডনির বারোটা বাজতে সময় লাগবে না। তবে ভালো খবর হল, নিয়মিত আমলার জুস খেলে কিডনি সুস্থ-সবল থাকবে। এমনকী এই অঙ্গের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর হতেও সময় লাগবে না। তাই তো কিডনির অসুখের ফাঁদ এড়াতে আমলকীর রসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিন। এতেই ফল পাবেন হাতেনাতে।
এএম/
পরামর্শ
মুখে ঘা দূর করতে মেনে চলুন ৫ উপায়
খাওয়া দাওয়ার সময় বা কথা বলার সময়ে মুখে ঘা হলে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা দীর্ঘদিন সহ্য না করাই উত্তম। এই সমস্যা কিন্তু একসময় মুখে আলসারেরও লক্ষণ হতে পারে। মুখের আলসারকে সামান্য ঘা ভেবে অবহেলা করলেই বিপদে পড়বেন। কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোন জনিত সমস্যার কারণে মুখের ভিতরে আলসার হতে পারে। অনেকে আবার ব্রেসেস পড়েন, তাঁদেরও মাঝেমাঝে এই সমস্যা হয়। শরীরে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি, আয়রন, জিঙ্ক, ফোলেটের ঘাটতির কারণেও মুখের ঘা থেকে আলসার হতে পারে।
মুখে ঘা হলে কিছুদিনের জন্য ঝাল, টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। না হলে মুখে জ্বালা অনুভূত হবে। মুখে ঘা হলে মুক্তি পেতে পারেন ৫ উপায়ে ।
১) মুখের ঘা কমাতে হালকা গরম পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এতে আরাম পাবেন। দিনে তিন থেকে চার বার করলে ব্যথা ও ঘা দুটোই কমে আসবে।
২) ঘায়ের জায়গায় সামান্য মধু লাগিয়ে রাখতে পারেন, ভালো উপকার পাবেন। কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর মধু লাগালে সুফল পাবেন।
৩) ঘায়ের জায়গায় বিশুদ্ধ নারিকেল তেল লাগিয়ে রাখলেও বেশ আরাম পাবেন।
৪) যে কোনও ঘায়ের জন্য ভালো প্রাকৃতিক ঔষধ হতে পারে হলুদ। মুখে যে জায়গায় ঘা হয়েছে, সেই স্থানে হলুদ বাটা লাগিয়ে রাখতে পারেন। কিছু দিন ব্যবহার করলেই ঘায়ের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা কমে আসবে।
৫) বেকিং সোডা ঘা সারাতে দারুণ উপকারী একটি জিনিস। এক কাপ পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করলে ঘা কমে যাবে। এছাড়া বেকিং সোডার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। সেই পেস্ট ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখলেও বেশ উপকার পেতে পারেন।
জেডএস/
পরামর্শ
হাড়ের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য শিশুর খাদ্যতালিকায় যা রাখবেন
সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় থাকেন সব বাবা-মাই। শিশু কী খাবে, কতটা খাবে আর কখন খাবে- এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা নিয়ে তারা সারাক্ষণ অস্থির। শিশু রোজ যা যা খাচ্ছে, তার থেকে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছচ্ছে কি না এটি জানাও খুব জরুরি। বাড়ন্ত শিশুকে হাড়ের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য সুষম আহারই দিতে হবে। আর বিশেষ করে শিশুর খাদ্যতালিকায় রোজ ক্যালশিয়াম রাখতেই হবে। রোজ কোন কোন খাবার তালিকায় রাখলে শিশুর ক্যালশিয়ামের অভাব হবে না, তা জেনে নিন।
দুধ : সুষম আহারের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় দুধের কথা। এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপিকা সুর জানাচ্ছেন, দুধের মধ্যে থাকা ক্যালশিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। শিশুকে রোজ নিয়ম করে দুধ খাওয়ানো উচিত। তবে যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে বা দুধ হজম না হয়, তা হলে পনির, দই, ছানা, মাখন এ সব রাখুন তার খাদ্যতালিকায়।
মটরশুঁটি : মটরশুঁটির দানায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম। যা তার হাড়ের পুষ্টিতে বিশেষ সহায়ক। সাধারণত, শীতের সব্জি এটি, তাই শীতেই তার খাবারে মটরশুঁটি রাখতে হবে। ব্রোকোলিও তাই। অনেক শিশুই ব্রোকোলি খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে ব্রোকোলি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দিন। কয়েক টুকরো চিকেন সিদ্ধ দিয়ে দিন তাতে। অল্প করে মাখন দিয়ে গরম স্যুপ, সোনামুখ করে খেয়ে নেবে খুদে।
পিনাট বাটার : পিনাট বাটারেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম আছে। খেতে ততটা সুস্বাদু নয় বলে হয়তো শিশু খেতে চাইবে না। মায়েরা সে ক্ষেত্রে পাউরুটির মুচমুচে টোস্ট বানিয়ে তার মধ্যে পিনাট বাটার দিয়ে দিন। গরম আটার রুটি রোল করে ভেতরে পিনাট বাটার দিয়ে শিশুকে প্রাতরাশে দিন। সঙ্গে দিন ফ্রুট স্যালাড। ফল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নুন ও গোলমরিচ দিয়ে দিন। ফল এমন ভাবে সাজিয়ে দিন যে দেখেই খেতে চাইবে শিশু।
আমন্ড বাটার : বাড়িতে আমন্ড বাটারও এনে রাখতে পারেন। সাদা মাখন না দিয়ে পাউরুটিতে আমন্ড বাটার মাখিয়ে দিন। আমন্ড বা কাঠবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ক্যালশিয়াম। ১/৩ কাপ কাঠবাদামে প্রায় ২৬৪ মিলিগ্রাম মতো ক্যালশিয়াম মেলে। সন্তানকে দুধের সঙ্গেও দিন কয়েক টুকরো কাঠবাদাম। দুধ-কর্নফ্লেক্স খেলে উপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
মাছ : মাছে প্রচুর ক্যালশিয়াম আছে। শিশুর হাড়ের বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিতে হলে তার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন মাছ। কাতলা, ভেটকি, কই মাছে ভাল পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম কাতলা মাছ খেলে ৫৩০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে, ১০০ গ্রাম ভেটকিতে প্রায় ৪৮০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। ৫০ গ্রাম করে, অর্থাৎ দিনে দু’পিস মাছও যদি খুদে খায়, তা হলেও রোজের ক্যালশিয়ামের অনেকটাই পূরণ হবে।
ফলের রস : টাটকা ফলের রসও দিন শিশুকে। এক গ্লাস কমলালেবু বা মুসম্বির রস থেকে ৬০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে। প্রাতরাশে যে দিন দুধ দেবেন না, সে দিন ফলের রস দিন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাবার দিলে শিশুর অরুচি হবে না। মনে রাখতে হবে, শিশুকে একদম চা-কফি বা নরম পানীয় দেওয়া চলবে না। কারণ ক্যাফিন ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়। তখন যতই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান না কেন, তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। বেশি লবণ দেয়া খাবার, বেশি তেল ও মশলা দেওয়া খাবার শিশুকে দেয়া চলবে না।
জেএইচ
পরামর্শ
কিডনিতে পাথর হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে কারা?
অফিসে সারাদিন বসে যারা কাজ করেন, তাদের বিপত্তি বেশি। একেই সারাক্ষণ বসে থেকে পেট-কোমরের মেদ বাড়ে। তার উপরে শরীরচর্চার অভ্যাস নেই, পানি কম খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধতে থাকে কম বয়স থেকেই। চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হল পানি কম খাওয়া। তা ছাড়া স্থূলত্ব, বিশেষ কিছু ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলেও কিডনিতে পাথর জমতে পারে। এখন জেনে নিন, এ ক্ষেত্রে কাদের ঝুঁকি বেশি।
কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন— রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতেও এর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখা। কিডনিতে পাথর জমলে ভয়ের খুব বেশি কারণ না হলেও দ্রুত সেই পাথর শরীর থেকে বার না হলে সমস্যা বাড়তে পারে।
ঝুঁকিতে কারা?
১) দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খেতে হবে।
২) বেশি প্রাণিজ প্রোটিন যারা খাচ্ছেন, তাদেরও ঝুঁকি বেশি। খুব বেশি তেলমশলা দিয়ে কষিয়ে মাংস বা মাছ, ডিম প্রায় রোজ খেতে শুরু করলে তখন বিপদ বাড়বে। এমনকি, বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়বে।
৩) অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা থেকে ভ্যাসোপ্রেসিন নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মূত্রের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে।
৪) বাতের সমস্যা থাকলেও ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে দেখা গিয়েছে কিছু ক্ষেত্রে।
৫) রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে, খনিজ উপাদানগুলির ভারসাম্য বিগড়ে গেলে ঝুঁকি বাড়বে।
৬) খাদ্যে লবণ তথা সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৭) বেশি মাত্রায় মদ্যপানও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নরম পানীয়, বেশি মিষ্টি দেয়া প্যাকেটজাত পানীয় বেশি খাওয়াও বিপদের কারণ হতে পারে।
কেএস/