জাতীয়
রাহুলের বাসায় লোক-ঐতিহ্যের আবহে ডুবে ছিলেন ম্যাক্রোঁ
ঢাকার ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায় সময় কাটিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রাহুলের স্টুডিওতে বসে তিনি গান শুনেছেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রসঙ্গে জেনেছেন। সেই সঙ্গে উপহার দিয়েছেন ও পেয়েছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সম্মানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিল্লির জি-২০ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রাত ৮টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান অবতরণ করে। এ সময় তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভা শেষে গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাহুল আনন্দের বাসায় হাজির হন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বাংলার লোক-ঐতিহ্যের আবহে ডুবে ছিলেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের জন্য বাসার ফটকের সামনের অংশ ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন রাহুল আনন্দ ও তার স্ত্রী শর্মিলা শুক্লা। এতে ছিল গোলাপ ও গাদা। ফুলের সাজসজ্জা দেখে বিমোহিত হয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে প্রথমে ফকির লালন সাঁইয়ের ‘আর কি বসবো এমন সাধুর সাধবাজারে/না জানি কোন সময় কোন দশা ঘটে আমারে’ গেয়ে শোনান রাহুল আনন্দ। এরপর তিনি পরিবেশন করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’।
গান পরিবেশন শেষে রাহুল আনন্দ বলেন, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আপনার এই আগমন আমাদের দেশের জন্য, আমার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য বিরাট আনন্দের।’
রাহুল আনন্দ যে একতারা বাজিয়ে গান গেয়েছেন সেটি উপহার দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। তিনি সেটি হাতে পেয়ে বাজানোর চেষ্টা করেন। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা’ গানটি গাইতে গাইতে রাহুল তাকে দেখিয়ে দেন কীভাবে বাজাতে হবে। তারপর দুই জন একসঙ্গে একতারা বাজাতে থাকেন। রাহুল বলেন, ‘এই পরিবেশনাকে বলতে পারেন বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দুই সংগীতশিল্পীর সম্মিলন! প্রেসিডেন্ট হলেও আপনি দারুণ সংগীতশিল্পী।’
রাহুল যোগ করেন, ‘আশা করি, এই উপহার (একতারা) আপনার কাছে বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেবে। এটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা। এটাই আমার স্টাইল।’
বিদায়ের আগে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি কলম উপহার দিয়েছেন রাহুল আনন্দকে। রাহুল প্রতিশ্রুতি দেন, কলমটি দিয়ে তিনি নতুন গান লিখবেন। তখন বেশ খুশি হয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনার গানের জন্য আমি অপেক্ষা করবো।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে অটোগ্রাফ চেয়ে নিয়েছে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার ছেলে তোতা।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বাসায় যাওয়ায় গানের দল ‘জলের গান’-এর সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দকে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যেকোনো দেশে সফরকালে স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের তত্ত্বাবধানে রাহুল আনন্দের স্টুডিও পরিদর্শন করলেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রোজ্যঁ।
গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা সফরে এসেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি উঠেছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। আজ (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ধানমন্ডি লেকে হেঁটেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। আজই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার। এরপর তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
এ সফরে ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে দুটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্স জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করবে।
৩৩ বছর পরে ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই প্রথম ঢাকা সফর। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী কেথেরিন কলোন্না।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ