অর্থনীতি
টিকফা বৈঠক: ওয়াশিংটনের কাছে যেসব সুবিধা চাইবে ঢাকা
রাজধানীতে বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্টের (টিকফা) বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরবে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার, বাণিজ্যনীতি, মেধাস্বত্ব ও বিনিয়োগের পরিবেশসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকা ও ওয়াশিংটন আলোচনা করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বায়ান্ন টিভিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বুধবার বেলা ১২টায় শুরু হতে যাওয়া ওই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ। অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন দেশটির বাণিজ্য বিভাগের (ইএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী ব্রেডন লিঞ্চ। প্রতিনিধি দলে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ ১৩ সদস্য থাকবেন বলে দূতাবাস ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়,টিকফা বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি পোশাক ওইদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা শ্রম অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। এছাড়া শ্রম অধিকার, ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য এবং শ্রমবিষয়ক অন্যান্য অন্যায্য বিষয়, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনসহ বেশকিছু ইস্যু আলোচনার টেবিলে তুলবে মার্কিন প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে পোশাক তৈরির পর যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে, এটা অনেকটা বাইব্যাকের মতো। তাই তৈরি পোশাকের পুরো মূল্যের ওপর শুল্কারোপ যৌক্তিক নয়। এ কারণেই আমরা শুধু বাংলাদেশে মূল্য সংযোজনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করব। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রলণালয়ের ওই সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকফা বৈঠকে মোট ২০টি এজেন্টা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজার সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রেজিস্ট্রেশন সহজ এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া শুল্কমুক্ত, কোটা ফ্রি এক্সেস সুবিধা চাইবে ঢাকা। পাশাপাশি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও ৬ বছর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ও ট্রিপস বেনিফিট অব্যাহত রাখার বিষয়ে আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় ডাব্লিউটিও-এর মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে এলডিসির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইবে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে,বাংলাদেশে যেসব মার্কিন কোম্পানি বিনিয়োগ করছে সেসব কোম্পানির মুনাফা বাংলাদেশ থেকে নিজেদের দেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও দেশটি কৃষি বায়োটেকনোলজি ডায়ালগ এবং বাংলাদেশের বীজ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেবে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর টিকফা স্বাক্ষর হয়। এর আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরের তাগিদ দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। টিফাই পরে টিকফা হয়। চুক্তি অনুযায়ি, বছরে কমপক্ষে একবার এই ফোরামের বৈঠক হতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম বেঠক হয়। এভাবে গত দশ বছরে ৬টি বৈঠক হয়েছে। তবে ওই বৈঠকগুলোর দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যায়নি।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের পাশে থাকবে আইএমএফ
ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে শপথ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকতে আইএমএফ ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘প্রাণহানি ও মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায়’ আইএমএফ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ ও দেশটির মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সংস্থাটি পাশে থাকবে।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ। ইতোমধ্যেই তিন কিস্তিতে ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। আর ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে সংস্থাটির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমতুল্য। সুতরাং, তাদের সমর্থন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এসি//
অর্থনীতি
আজ ব্যাংক থেকে এক লাখের বেশি টাকা তোলা যাবে না
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আজ (০৮ আগস্ট)। সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য হবে।
বুধবার (০৭ আগস্ট) রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিদের এক জরুরি বার্তায় এ নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে যেকোনো পরিমাণ নগদ টাকা স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজকের জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে শাখায় টাকা দেয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ বেড়েছে। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় গত রাতে এ সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে কোনো সরকার নেই এবং আজ নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে। এই সময়ে কেউ যাতে নগদ টাকা নিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
এসি//
অর্থনীতি
এনবিআর চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।আর বিক্ষোভের মধ্যেই চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুঞ্জন চলছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকেই এনবিআর এর প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
এনবিআরের কর্মচারীরা জানান, তারা দীর্ঘ দিন থেকে তাদের নানা দাবি ও অসুবিধা এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এসব দাবি তিনি পূরণ করেন নাই। বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনবিআর কর্মচারীদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছে মত করে চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়।
এসময়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৯ দফা দাবি জানান।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন করা যাবে না।
২। স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে আয়কর/কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
৩। অবিলম্বে স্বৈরাচারী চেয়ারম্যানের দোসর এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
৪। দুই বছর পর পর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে।
৫। অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
৬। সব কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে।
৭। আয়কর অনুবিভাগের ১০তম-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনো পদ ব্লক রাখা যাবে না।
৮। কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না।
৯। সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নেবে।
আই/এ