বাংলাদেশ
দুটি ডিমে লাখপতি জেসমিন
একদিকে সংসারের ঘানি অন্যদিকে নিজের স্বপ্ন , প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারী উদ্যোক্তা (গৃহিনী) জেসমিন নাহার ময়না। স্বামী-সংসারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে হাঁস পালন শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন হাঁস পালনে।
জেসমিন নাহারের বাড়ী উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের রোশন শিমুলবাড়ী গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের কৃষক সামসুল হকের স্ত্রী। সাথে ২০০২ সালে জেসমিন নাহার ময়না ও সামচুল হকের বিয়ে হয়। জেসমিন নাহার এইচএসসি পাশ করেছেন। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জননী। বড় মেয়ে সাকিরা ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়ে সাদিয়া ৭ম শ্রেণীতে পড়ে ও ছোট মেয়ে সাবিহা শিশু শ্রেণীতে পড়ে। তার বাবার বাড়ীর রংপুর শহরে হওয়ায় জেসমিন বিয়ের আগেই ২০০১ সালে পোল্টি, ডেইরী, মৎস্য রংপুর বি,সি.ই ট্রেইনিং সেন্টার ও রংপুর যুব উন্নয়ন থেকে বেইজিং হাঁস পালনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও করোনাকালে তিনি অনলাইনে এক নারীর হাঁস পালন দেখেন। স্বামীর সংসারে অভাব না থাকলেও তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের যথাযথ প্রয়োগের সুযোগ কাজে লাগান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বামীর দেওয়া টাকা ও নিজের জমানো টাকা দিয়েই ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি বিভিন্ন প্রজাতির ৪২০ টি হাঁসের বাচ্চা দিয়েই বাণিজ্যিক ভাবে হাঁস পালনের যাত্রা শুরু করেন জেসমিন। ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যে এক দিনের হাঁসের বাচ্চা ৪২০ টি বাচ্চা ও খামার তৈরিতে ঘর নির্মাণ ও মাটি কাঁটাসহ প্রায় ১ লাখ টাকা। মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করেই হাঁসের খামারের যাত্রা শুরু করেন তিনি। তিনি এর আগে বাড়ীতে কাপড়ের ব্যবসা করলেও সাফল্যের মুখ দেখতে না পারলেও করোনাকালে গত ১৪ মাসে হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন।
বর্তমানে জেসমিন নাহার ময়না খামারে ১০ টি রাজ হাঁস, ১৫ টি চিনা হাঁস, ১০ টি বেইজিং হাঁস, ১৫ টি রুপালী হাঁস, ১০০ টি নতুন জাতের কাকলী হাঁস রয়েছে। এই হাঁস গুলো প্রতিনিয়ত ডিম দিচ্ছে। ছাড়াও তিনি হাঁস বিক্রির টাকায় ৪০ টি কবুতর ও ৫০০ টি লেয়ার মুরগীর বাচ্চা নতুন করে পালন করছেন। এক মাসের মধ্যে লেয়ার মুরগীর ডিম দেওয়াও শুরু করবে। স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তার স্বামী সামচুল হক স্ত্রীর কাজে আর্থিক ভাবে সহায়তা করেছেন। মাঝে মধ্যে স্বামী সামচুল হকও হাঁসের খামার দেখাশুনাও করেন। এ ছাড়ার দুই মেয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি মায়ের কাছে সহযোগিতা করেন। এর মধ্যে খামার শুরু থেকে ৫ হাজার টাকা বেতনে একজন নারী শ্রমিক নিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে সফল নারী উদ্যোক্তা জেসমিন নাহার ময়না।
নারী শ্রমিক আনোয়ারা বেগম জানান, ময়না ভাবীর খামারে ১৩ থেকে ১৪ মাস থেকে কাজ-কর্ম করছি। হাঁস-মুরগী, লেয়ার ও কবুতর পালন-পালনের জন্য প্রতি মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা বেতন দেন এবং পাশাপাশি হাঁস-মুরগী লালন-পালন করাও শিখতেছি। ভবিষ্যতে আমিও ময়না ভাবীর মতো খামার দিয়ে কর্ম করি খাইতে পারি।
জেসমিন নাহার ময়নার স্বামী সামসুল হক জানান, জেসমিন খুবেই মেধাবী একজন নারী। তার ইচ্ছা সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া। আমার সংসারে অভাব নেই। আল্লাহের রহমতে ১৪ বিঘা জমি আছে। ভালই চলছি। তবে স্ত্রীর ইচ্ছা সে নিজে কিছু করবে। আমি তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছি এবং তাকে টাকাও দিয়েছি। প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করলেও আলোর মুখ দেখতে না পারলেও হাঁস পালনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। সে সংসার দেখাশুনার পাশাপাশি হাঁস-মুরগীসহ পালনে কঠোর পরিশ্রম করছেন এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের। আমি তার সাফল্য কামনা করছি।
নারী উদ্যোক্তা জেসমিন নাহার ময়না জানান, প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু কাপড়ের ব্যবসায় সফল হতে না পারলেও হাঁস পালনে ভাল লাগায় সংসারের ঘানি টেনেও স্বামী ও ভাইয়ের সহযোগিতায় ৪২০ টি হাঁস দিয়েই খামারে যাত্রা শুরু করি। হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করেই ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করেছি। আয়ের টাকায় অন্যান্য প্রজেক্ট যেমন গরু-ছাগল,মৎস্য,পোল্ট্রি ও কবুতর বাড়াচ্ছি। এখন আমার আত্মনির্ভরশীল হতে হবে এবং আমাকে দেখি গ্রামের আট দশ জন মহিলা আত্ম কর্মস্থানের সৃষ্টি করবে এটাই আমি চাচ্ছি। কোন ব্যাংক অথবা কোন সংস্থা থেকে বড় ধরণের ঋণ সহায়তা পায় তাহলে প্রজেট বাড়ালে ১০-২০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটা আমার চাওয়া।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ময়না একজন সফল নারী খামারি। করোনা কালে তিনি নিজ বাড়ীতে হাঁস-মুরগী পালন শুরু করেন। তার খামারে ৬ প্রজাতির হাঁস রয়েছে। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তাও। উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ ভেকসিন, ওষুধসহ সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ লাখ টাকার হাঁস ও ডিম বিক্রি করেছেন। আমরা আশা করছি তার সফলতা দেখে এ উপজেলার অন্যান্য নারী-পুরুষ অনুপ্রোনিত হয়ে খামারি হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
এসআই/
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ