শিল্প-সাহিত্য
গান্ধীরও ২৫ বছর আগে ‘মহাত্মা’ উপাধি পান লালন
লালন শাহ, লালন সাঁই, মহাত্মা লালন, বাউল সম্রাট, মরমি সাধক, লালন ফকির, গুরুজি -এমন অনেক নামে পরিচিত তিনি। তবে শিষ্যদের কাছে তিনি কেবলই ‘সাঁইজি’ নামে পরিচিত। লালন জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, গোত্রের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষ ও মানবতাকে বড় করে দেখেছেন।শুধু জাত-পাতের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন না, সামাজিক অনাচার, বিভেদ বৈষম্য এবং সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এমনই এক বিস্ময়কর ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন লালন সাঁই। আজ (১৭ অক্টোবর) ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান এই মরমী সাধকের মৃত্যুদিবস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১১৬ বছর।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য যখন অস্তমিত, ইংরেজদের শাসনে দিশেহারা উপমহাদেশের জনগণ, গ্রামীণ সমাজ ধর্ম জাত-পাত ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত- বাঙালির জীবনের ওই ক্রান্তিকালে ১৭৭৪ সালের এই দিন লালন ফকিরের আর্বিভাব ঘটে। তিনি চেয়েছিলেন একটি জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন সমাজ গড়ে তুলতে। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।
বাংলা ভাষা, বাংলাসংস্কৃতি, বাউল সম্প্রদায়, বাউল গান সবই বাঙালিদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়। আর বাঙালির এই গৌরবের ইতিহাসের গোড়াপত্তন করেন লালন সাঁই। গান্ধীরও ২৫ বছর আগে ভারত উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ‘মহাত্মা’ উপাধি পাওয়া লালনের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিকরাও প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন।
প্রখ্যাত লালন গবেষক ড. আবদুল ওয়াহাব জানান,‘১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালন শাহের মৃত্যুর ১২ দিন পর ৩১ অক্টোবর তৎকালীন পাক্ষিক পত্রিকা ’হিতকরী’তে লালন শাহ সম্পর্কে লেখনীতে তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সংবাদটির প্রতিবেদক ছিলেন রাইচরণ নামে এক সাংবাদিক। হিতকরীর সম্পাদক ছিলেন মীর মোশাররফ হোসেন।মৃত্যুর পর লালন শাহ ’মহাত্মা’ উপাধি পেলেও গান্ধীজী পেয়েছিলেন জীবদ্দশায়। ১৯১৫ সালের ২১ জানুয়ারি গুজরাটের কামরীবাই স্কুল পরিদর্শনে গেলে নৌতম লাল ভগবানজী মেহতা নামে এক রাজনৈতিক নেতা গান্ধীজীকে ওই উপাধি দেন।’
লালনকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কবি এলেন গিন্সবার্গের রচনাবলীতেও লালনের দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। লালন সংগীত ও দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা হয়েছে এবং এই ধারা এখনও চলছে। দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত বিভিন্ন ভাষায় গবেষণা করছেন, কীভাবে সাধারণ এক ব্যক্তি এমন কালজয়ী গান লিখে গেছেন? স্বশিক্ষিত লালন তাইতো গবেষকদের কাছে এক বিস্ময়ের নাম।
লালনের অসম্ভব কামিশমা ছিলো মুখে মুখেই পদ রচনা করা। তার মনে নতুন গান উদয় হলে শিষ্যদের ডেকে বলতেন, ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে’। লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক শাহ ও মনিরুদ্দিন শাহ সেই গান লিখে নিতেন। বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে লালনের গান বেশ জনপ্রিয়। শ্রোতার পছন্দ অনুসারে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির করা সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় লালনের “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়” গানটিও রয়েছে।
বাউলদের বিশ্বাস অনুযায়ি, সাধন স্তরের পাঁচটি পর্যায়ের নাম হচ্ছে- আউল, বাউল, দরবেশ, সাঁই এবং ফকির। সাধারণ মানুষকে আউল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাউল হচ্ছে দীক্ষাপ্রাপ্ত মুরিদ। একজন আত্মসংযমী আদর্শ মানব হচ্ছেন দরবেশ। আধ্যাত্মজ্ঞানে শিক্ষিত ব্যক্তি সাঁই নামে পরিচিত। আর আত্মতত্ত্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো ব্যক্তি হলেন ফকির। ফকির লালন সাঁইয়ের ভাষায়- এলমে লাদুন্নী হয় যার/ সর্বভেদ মালুম হয় তার।
হিন্দু না মুসলমান- কি ছিলেন লালন? তিনি কোন ধর্ম পালন করতেন? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। নির্ভরযোগ্য উত্তর এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছেন গবেষকরা। তবে লালনের ধর্ম, জাত-পাত নিয়ে নানা ধরণের বিতর্ক ও সমালোচনা থাকলেও লালন যে জাত-পাতের ধার ধারতেন না- এবিষয়ে সবাই একমত।
লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ভারতের প্রয়াত ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, লালন ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু কোনো বিশেষ ধর্মের রীতিনীতি পালনে আগ্রহী ছিলেন না। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন জীবনে। লালন মূলত অসাম্প্রদায়িক ও মানবধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (২০০৮)। মনের মানুষ, আনন্দ পাবলিশার্স, কোলকাতা। পৃষ্ঠা-১৯৭)।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি ও লেখক কাঙাল হরিনাথ ও উনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ট মুসলিম সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন লালনকে চিনতেন ও জানতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক রায় বাহাদুর জলধর সেন এবং প্রখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবেত্তা ও সমাজকর্মী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় বেশ কয়েকবার লালনকে সামনাসামনি দেখেছেন, কথা বলেছেন, গান শুনেছেন। তবে তার ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারেননি। এমনকি আমরা লালনের যে ছবিটিকে সচরাচর দেখিতে পাই, ১৮৮৯ সালে আঁকা সেই ছবির চিত্রকর রবীন্দ্র ঠাকুরের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরও ব্যর্থ হয়েছেন তার প্রকৃত পরিচয় জানতে। তাইতো লালন গেয়েছেন, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/ লালন কয় জাতের কি রূপ/ দেখলাম না এই নজরে।
লালনের অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আজও সাম্প্রদায়িক ধর্মবাদী ও উগ্রপন্থীরা সমালোচনা করেন। তার ধর্মবিশ্বাস আজও অনেকের কাছে একটি বিতর্কিত বিষয়। জাত-পাতের বিরোধিতা, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধিতাসহ নানা কারণে লালন সাঁই জীবদ্দশায় হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থীদের ঘৃণা, বঞ্চনার এবং আক্রমণের শিকার হয়েছেন। লালনের দর্শন এবং ঈশ্বর, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে তার উত্থাপিত নানান প্রশ্নের কারণে তাকে নাস্তিক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন বা দিয়ে থাকেন অনেকে।
লালন সাঁই ছিলেন জন্মান্তরবাদী। তার মতাদর্শে সন্তান উৎপাদন নিষিদ্ধ। লালনের যুক্তি আত্মা থেকে যেহেতু সন্তান উৎপন্ন হয়, ফলে আত্মা খণ্ডিত হয়। লালনের এই মতবাদের ভাবার্থ হচ্ছে, খণ্ডিত আত্মা নিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। পুনর্জন্মের ফাঁদে পড়ে দুনিয়াতেই অবস্থান করতে হয়। লালন তাই গেয়েছেন, পিতার বীজে পুত্রের সৃজন/ তাইতে পিতার পুনর্জনম।
ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো খুব পছন্দ করতেন লালন। মাঝে মাঝে চাঁদের আলোয় ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। তবে শিষ্যরা জানতেন না তিনি কোথায় যাচ্ছেন। শিষ্যদের অনুমান, দোল পূর্ণিমার তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে লালন জীবদ্দশায় ফাল্গুন মাসের রাতে খোলা মাঠে শিষ্যদের নিয়ে সারারাত গান বাজনা করতেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, লালনের জীবদ্দশায় তাঁকে কোন ধরনের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতেও দেখা যায়নি। নিজের সাধনা দিয়ে তিনি হিন্দুধর্ম এবং ইসলামধর্ম উভয় শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর রচিত গানে এর প্রচুর নিদর্শন রয়েছে।
লালন সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “শিলাইদহের ঠাকুর জমিদাররা যখন প্রজাপীড়ন আরম্ভ করলেন তখন কুমারখালির কাঙাল হরিনাথ তার ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকায় ঠাকুর জমিদারদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেন। এতে ঠাকুর জমিদাররা কাঙাল হরিনাথকে শায়েস্তা করার জন্য গুণ্ডা নিয়োগ করেন। লালন ফকির তখন তাঁর এই বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে জমিদারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।”
লালন সাঁই জীবিত ছিলেন ১১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। মৃত্যুর এক মাস আগে তাঁর পেটের পীড়া হয়। তখন পানি জমে হাত-পা ফুলে যায় তাঁর। সে সময় দুধ ছাড়া তিনি অন্য কোনো খাবার খেতেন না। তবে খাবারের পাতে মাঝেমধ্যে মাছ চাইতেন। অসুস্থাবস্থায়ও শিষ্য-ভক্তদের নিয়ে গানের আসর বসাতেন। মৃত্যুর আগের দিন ভোররাত পর্যন্ত গান শুনেছেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে শিষ্যদের ডেকে বলেছেন, ‘আমি চলিলাম।’ এর কিছুক্ষণ পরই মারা যান লালন।
আসলেই কি লালন শাহ মারা গেছেন? অবশ্যই না। তাঁর দেহের প্রস্থান ঘটেছে শুধু। তিনি বেঁচে আছেন মানবতাবাদী, সুরপ্রেমী মানুষেরই মাঝে। অগনিত ভক্তের মণিকোঠায় অমর হয়ে।
শিল্প-সাহিত্য
মারা গেছেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হক
খ্যাতিমান ভাষাবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। গেলো ৭ জুলাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রকাশ দাশ গুপ্ত বলেন, ‘ড. মাহবুবুল হক দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২৪ জুলাই বুধবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি মারা যান।’
২৫ জুলাই দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় নেয়া হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই ২৬ জুলাই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ড. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
ড. মাহবুবুল হকের জীবন বহুবিধ ও বিচিত্র কর্মে আলোকিত। কৈশোর ও যৌবনে তিনি চট্টগ্রাম শহরে বাম রাজনীতির একজন অগ্রগণ্য কর্মী ও সংগঠক হিসেবে নিজের পরিচয়কে বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি অধ্যাপনাকে কর্মজীবনের পাথেয় করেছেন। গবেষক হিসেবেও পেয়েছেন স্বীকৃতি। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল- তিন কবি সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। পরম যত্নে মাহবুবুল হক তাদের কবিতার বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। মিষ্টভাষী এই মানুষটার মধ্যে নানা সুন্দর ও অপূর্ব গুণের সমন্বয় ঘটেছে। সৃজনে, মননে সবসময় তিনি ছিলেন ক্রিয়াশীল। ঝঞ্ঝাটমুক্ত ছিল তার পথচলা।
মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে। তবে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মাহবুবুল হক। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ করেন ড. মাহবুবুল হক। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বাংলা পাঠ্য বইয়েরও রচয়িতাও তিনি। আহ্বায়ক হিসেবে নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের বাংলা শিক্ষাক্রম ও বাংলা পাঠ্যবই প্রণয়নে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তার।
এসি//
শিল্প-সাহিত্য
রাজধানীতে চলছে পাহাড়ি ফলের মেলা
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী পাহাড়ি ফলের মেলা।
গেলো শনিবার (৬ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ১২ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে মেলাটি।
সোমবার (৮ জুলাই) মেলায় ঘুরে দেখা যায়, যান্ত্রিক শহরের বুকে এ যেন এক টুকরো পাহাড়ের চিত্র। স্টলভর্তি থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেক-রকমের পাহাড়ি ফল। এসব ফলের স্বাদ ও গন্ধের টানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন নানা বয়সী শত শত মানুষ।
স্টলভেদে মান ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে এসব ফল বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। সূর্যমুখী কলা স্টলভেদে ২৫০-৩০০ টাকা ডজন, পাহাড়ি বড় জাতের লটকন ১০০-১২০ টাকা কেজি, চম্পা ফল সাইজ অনুযায়ী ১০০-১৫০ টাকা, পাহাড়ের জনপ্রিয় ও সুস্বাদু আম রাঙগুইর কেজি ১০০-১২০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৫০ টাকা, চিয়াং মাই ৬০০ টাকা, কিং অব চাকাপাদ আম ৮০০ টাকা, পাহাড়ি ড্রাগন ফল ৪০০ টাকা, পাহাড়ি পেঁপে ১০০-১২০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ১৫-৪০ টাকা, রাম্বুটান ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এগুলো ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ে উৎপন্ন ঐতিহ্যবাহী বিন্নি চাল, জুমের চাল, বাঁশের কোরাল, জুমের মিষ্টিকুমড়া, পাহাড়ি কাজুবাদাম, আচার, পাহাড়ি মরিচ, পাহাড়ি মধু, চিংড়ির বালাচাও, পাহাড়ি নারিকেল, তেজপাতা, শুকনা রোজেলাসহ নানারকম পাহাড়ি খাবার।
মেলার এক বিক্রেতা বলেন, পাহাড়ি এসব ফলের স্বাদ,গুণ ও গন্ধ সমতলের ফলের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এসব ফল সম্পূর্ণ বিষমুক্ত আর টাটকা। কিছু কিছু ফল আছে, যেগুলো সমতলের চেয়ে পাহাড়ি মাটিতে বেশি ভালো হয়। আবার কিছু ফল আছে যেগুলো পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় লোকজন ছাড়া দেশের অন্য এলাকার মানুষ চেনেন না। এই পাহাড়ি ফল মেলায় তার অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্য, পাহাড়ি ফলগুলোকে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা।
আরেক বিক্রেতা বলেন, পাহাড়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাস আর চাষ পদ্ধতি দেশের অন্যান্য জায়গার মানুষের চেয়ে অনেক ভিন্ন। আমরা চাই আমাদের পাহাড়ি সংস্কৃতি ও খাবার সম্পর্কে মানুষ জানুক।
মেলায় আসা একজন দর্শনার্থী জানান, পাহাড়ি আবহাওয়া, মানুষ আর প্রকৃতির মতো পাহাড়ের ফলগুলোও অসাধারণ। কিন্তু ঢাকার ভেতর চাইলেও তো এসব ফল পাওয়া যায় না। তাই মেলা থেকেই অপূর্ব স্বাদের এসব ফল কিনছি। যাতে বাচ্চাদের পাহাড়ি ফলের স্বাদ ও গুণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়।
জিএমএম/
শিল্প-সাহিত্য
ওপারে পাড়ি জমালেন কবি অসীম সাহা
ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন খ্যাতিমান কবি অসীম সাহা। মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালেয় (বিএসএমএমইউ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন কবি, ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক মালেক মাহমুদ।
কবি অসীম সাহা পারকিনসন (হাতকাঁপা রোগ), কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অসীম সাহা। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। তার বাবা অখিল বন্ধু সাহা ছিলেন অধ্যাপক।
অসীম সাহা ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৯ সালে স্নাতক পাস করে তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পিছিয়ে যায় এবং তিনি ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন অসীম সাহা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।