জাতীয়
বাংলাদেশের সংবিধান বঙ্গবন্ধুর উপহার: প্রধানমন্ত্রী
স্বাধীনতার মাত্র ১১ মাসের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপহার দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল, বহুল আকাঙ্ক্ষিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) জাতীয় সংবিধান দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে সংবিধান দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে তিনি দেশের সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গৃহীত হয়েছিল বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল, বহুল আকাঙ্ক্ষিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনের পূর্ব-পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মোট ৩১০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচিত করে। কিন্তু তদানিন্তন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আওয়ামী লীগের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ না করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার আগে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রোকলামেশন অব ইনডিপেনডেন্ট, ১৯৭১ ঘোষণা করা হয়; যা অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান হিসেবে বিবেচিত। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রী করে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন এবং ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রোভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২ জারি করেন; যা দ্বিতীয় সংবিধান নামে খ্যাত।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সংবিধান রচনার উদ্দেশে বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ, ১৯৭২ জারি করা হয়। ওই আদেশের অধীন ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্য ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। গণপরিষদকে সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয় ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল। ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে গণপরিষদে উত্থাপন করা হয়। ৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়।
গণপরিষদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান যেদিন গৃহীত হয়, ওইদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য প্রদানকালে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘জনাব স্পিকার সাহেব, আজই প্রথম সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তাদের শাসনতন্ত্র পেতে যাচ্ছে। বাংলার ইতিহাসে বোধ হয় এই প্রথম, বাঙালিরা তাদের নিজেদের শাসনতন্ত্র দিচ্ছে। বোধ হয় না, সত্যিই এটা প্রথম যে, বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের মারফতে এসে তাদের দেশের জন্য শাসনতন্ত্র দিচ্ছেন’।
‘এই শাসনতন্ত্রের জন্য কত সংগ্রাম হয়েছে এই দেশে। আজকে, আমার দল যে ওয়াদা করেছিল, তার এক অংশ পালিত হল। এটা জনতার শাসনতন্ত্র। যে কোনো ভাল জিনিস না দেখলে, না গ্রহণ করলে, না ব্যবহার করলে হয় না, তার ফল বোঝা যায় না। ভবিষ্যৎ বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়বাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে আমার জীবন সার্থক হবে, শহীদের রক্তদান সার্থক হবে’- বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার; যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। বঙ্গবন্ধুর এই লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের জন্যই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় ঘোষণা করা হয় যে, রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন একটি শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।
জাতির পিতা মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শূন্য হাতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিয়ে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করেন, অবকাঠামো পুনস্থাপন ও উন্নয়ন করেন এবং উৎপাদন খাত ও অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। বঙ্গবন্ধুর আমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধীরা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। শুরু হয় হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি; থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের জীবনমান পরিবর্তনের মিশনে নেমে পড়ি। দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করি। আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বাস্তুহারা মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করি। মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করি। ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করি। আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকাল ছিল সকল পশ্চাৎপদতা, অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে অন্ধকার থেকে আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে অভিযাত্রা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সবকটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করছে। এরই মধ্যেই আমরা ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে এসেছি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে সুনীল অর্থনীতির দ্বার উন্মুক্ত করেছি। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটিয়েছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মতো মেগা প্রজেক্ট এরই ৎমধ্যে আমরা উদ্বোধন করেছি। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। আমরা ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অর্থাৎ ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন করছি। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দর্শনে বিশ্বাসী। দেশের অগ্রগতিতে আমরা আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুদূরপ্রসারী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতি অল্প সময়ে সংবিধান প্রণয়ন বাঙালির জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস পালন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে- এ আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় সংবিধান দিবস-২০২৩’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ