দুর্ঘটনা
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’র ৯ বছর
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’র ৯ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে আজ। এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আক্ষেপ কমেনি। সহকর্মী ও প্রিয়জনদের হারানোর কষ্ট প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ৯ তলার একটি ভবনের পুরোটাই ধসে পড়েছিল। এ ঘটনায় ইট-কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে মারা যান ১ হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক। এছাড়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত হয়ে ও পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক মানুষ। বাঁচার তাগিদে তাদের অনেকে আজও জীবিকার খোঁজ করে চলেছেন। অসুস্থতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে আপোষ করে কেউ কেউ কাজেও ফিরেছেন।
আলোচিত ওই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, ৯ বছর চলে গেলেও সরকার কিংবা বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি। তাই বিচার ও কর্মহীনতার আক্ষেপ নিয়ে আজও জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন রানাপ্লাজার অসংখ্য শ্রমিক।
রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস কারখানায় ফিনিশিং আয়রনম্যানের কাজ করতেন ইমাদুল ইসলাম এমদাদ। ভবনের নিচে চাপা পড়েছিলেন তিনিও। ৩৬ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এমদাদ বলেন, ‘২৩ এপ্রিল বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরলে আমাদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে আমাদের জানানো হয়, পরদিন ২৪ এপ্রিল প্রতিটি সেকশন খোলা থাকবে। যদি কেউ না যায়, তবে তার বেতন আটকে দেয়া হবে।’
এমন নির্দেশনা পেয়ে পরদিন আরও অনেকের মতো ভবনের গেটে গিয়ে হাজির হন এমদাদ। তিনি বলেন, ‘তখন বড় বড় স্টাফরা আমাদের জোর করে কারখানায় উঠাইছিল। ৪৫ মিনিটের মতো আমরা কাজও করেছিলাম। এরপর বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকট শব্দের পরই বুঝতে পারি আমাদের গায়ের ওপর বিল্ডিং পড়ে আছে।
‘তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে আমরা অনেক চিৎকার করছি। ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা আমাদের ওখান থেকে বের করছিল। পরে এনাম মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয় আমাকে। পরে আমার বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছি। লিভারের সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
বর্তমানে অনেক কষ্টে জীবন পার করছেন জানিয়ে এমদাদ বলেন, ‘চাকরির জন্য অনেক জায়গায় চেষ্টা করছি। চাকরি হলেও কাজ করতে পারি না। এলাকার একটা সমিতিতে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করছি। এত দিনেও সরকার কিংবা বিজিএমইএ কেউই আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। তাই ৯ বছর পরও আমাদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই।’
শহিদুল ইসলাম নামে রানা প্লাজার বেঁচে ফেরা আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমার শরীরের যে অবস্থা হয়েছে তাতে কাজ করার মতো অবস্থা নাই। তারপরও বাধ্য হয়ে ঢালাইয়ের কাজ করতে হয়। কারণ পরিবারে ৫-৬ জন সদস্য আছে। তারা তো আর রাস্তায় নামতে পারবে না। তাদের খাওয়ানোর জন্য মরি-বাঁচি আমাকে কাজ করতেই হবে। এজন্য সরকারের কাছে আমি বলতে চাই, রানা প্লাজার ঘটনার পর যে দায়িত্ব সরকারের ছিল, সেই দায়িত্ব তারা কেন নেয়নি। তারা তো সে সময় ভালো চাকরি ও নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কোনো কথাই তারা রাখেনি। এখন কাজের জন্য আমাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। একদিন কাজ না করলে আমার সংসারে চাল কিনতে পারি না, ভাত জোটে না।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্ণ হলো। এত বছর পরও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে রানা প্লাজার ঘটনার সময় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানুষের অনুদান হিসেবে তাদের সামান্য কিছু টাকা দিয়েছিল। ৯ বছর পর তাদের সেই টাকার অবশিষ্ট কিছুই নেই।’
খাইরুল মামুন জানান, সাহায্য পাওয়া অর্থ দিয়ে বেঁচে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। মাঝখানে করোনা এসে সেটাও শেষ হয়ে গেছে।
মামুন বলেন, ‘আমরা দেখছি, রানা প্লাজার অসংখ্য শ্রমিক এখন বেকার জীবনযাপন করছে এবং চিকিৎসা করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের নেই। অনেকে এখন গ্রামে ফিরে গেছেন। সেখানে কৃষিকাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসলে তাদের সেই শারীরিক সক্ষমতাও নেই।’
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে রানা প্লাজার ওই স্থানটিতে প্রয়োজনে হাসপাতাল, পুনর্বাসন সেন্টার কিংবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের দাবি জানান মামুন।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই এসব দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আশা করছি, ৯ বছর পর হলেও সরকার রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেবে।’
শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার লিমা বলেন, ‘রানা প্লাজায় হাজারও শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে আজ থেকে ৯ বছর আগে। এত বড় দুর্ঘটনা দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। আমরা ধারণা করেছিলাম, সেই ঘটনার পর মালিকদের টনক নড়বে, সরকারের টনক নড়বে ও শ্রমিকদের জীবনের মান বদলাবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, অনেক ভবনের হয়তো চেহারা বদলেছে। ভবনের নিরাপত্তার কিছু জায়গা বদল হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবন বদল হয়নি।’
দেশে ক্ষতিপূরণের আইন যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য যথেষ্ট না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজীবন বা এক জীবনের যথাযথ ক্ষতিপূরণ আমরা দাবি করেছি। একই সঙ্গে আমরা দোষী মালিক, প্রকৌশলীসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা এই ভবনকে অনুমোদন দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের শাস্তির দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত তারা শাস্তি পায়নি।’
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিক নেতা বলেন, ‘সরকার চাইলে যে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, তা আমরা অতীতের নানা সময়ে দেখেছি। ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলনের পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের শাস্তির বিষয় দেখেছি। কিন্তু রানা প্লাজার ঘটনায় আমরা কোনো মালিকের শাস্তি দেখিনি। শাস্তি দেখিনি তাজরিনের ঘটনায়ও। এ থেকেই আমরা ধারণা করতে পারি, এখানে আসলে সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে।’
চট্টগ্রাম
কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন দুই সাইকেল আরোহী
কর্ণফুলীতে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা একটার দিকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর বাংলাবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার নন্দনালী গ্রামের কামাল মণ্ডলের ছেলে চঞ্চল মণ্ডল (১৮) ও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট পাগলা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল জলিলের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
চরপাথরঘাটার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আবু তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুরে তারা তিনজন সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে।
এএম/
ঢাকা
মেঘনায় নিখোঁজ ৩ জনের মধ্যে ২ জনের লাশ উদ্ধার
শরীয়তপুরের মেঘনা নদীতে বরযাত্রীবাহী একটি ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের মধ্যে ছিলেন বর সানজুসহ তার ভাই শাওন ও বন্ধু হৃদয়। এর মধ্যে জেলেদের জালে বরের ভাই শাওন ও বন্ধু হৃদয় বেপারীর মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বর সানজু।
শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টার সময় গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুষ্পেন দেবনাথ বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
উদ্ধার হওয়া শাওন পুরান ঢাকার ধোলাইখালের শাহজাহান বেপারীর ছেলে ও হৃদয় একই এলাকার বলু বেপারীর ছেলে। এ নিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একই পরিবারের ৩জন সহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার হলো। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১ জন।
গেলো শুক্রবার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত হন বরের মা, বোন, ভাই ও বন্ধু। এর আগে সকাল ১০টায় কোদালপুর লঞ্চ ঘাট থেকে মাঝেরচর যাওয়ার সময় মেঘনায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় (স্রোতের) ডুবে ট্রলারটি। এসময়ে ট্রলারটিতে ১১ জন যাত্রী ছিলো বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ৫ জন বর্তমানে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এএম/
দুর্ঘটনা
বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজবাড়ীতে নিহত ২
রাজবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাস ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আরও কয়েজন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল ৮টায় রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আহলাদিপুর টিটিসি ভবনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ী আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল রানা বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ৮ টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুরগামী লোকাল আমানত শাহ নামের একটি বাস সদর উপজেলার রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের আহলাদিপুর টিটিসি ভবনের সামনে এলে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়াগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। আহত হন আরও ৪-৫ জন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল রানা বলেন, আহতদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ও ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। চালক ও হেলপাররা পলাতক রয়েছে ।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মৃত অবস্থায় হাসপাতালে একজনকে নিয়ে আসা হয়। আহত অবস্থায় ছয়জনকে হাসপাতালে আনলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
জেডএস/