জাতীয়
৫ম জাতীয় নির্বাচন: প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী পায় বাংলাদেশ
১৯৯০ সালে গণ অভুত্থানের মুখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রে উত্তরণের’ সময়কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরশাদ সরকারের পতনের পর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন দেখা দেয়।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। এসময় তিনি ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় কেয়ারটেকার’ সরকার গঠন করেন। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আট দলীয় জোট,ক্ষমতাচ্যুত এরশাদের জাতীয় পার্টি,বিএনপির নেতৃত্বে সাত দলীয় জোট এবং বামপন্থী পাঁচ দলীয় জোটসহ মোট ৭৫টি দল অংশগ্রহণ করে। মোট ৩০০টি আসনের জন্য নির্বাচনে লড়েছেন ৪২৪জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ২ হাজার ৭৮৭ জন প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বলা হয়,ক্ষমতায় গেলে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম করবে। উত্তরাঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন,‘আওয়ামী লীগ বেশি কথা বলে না, সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল গেমের হুমকিও দেয় না।আওয়ামী লীগ যা করতে পারে কেবল সেটাই বলে।’
অন্যদিকে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি যেমন দিয়েছেন,অপরদিকে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নানা সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন।মানিক মিয়া এভিনিউতে এক সমাবেশে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে বলেন,তাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা,আর অন্যদের হাতে গোলামির জিঞ্জির।বাংলাদেশকে বিদেশীদের গোলামীর চুক্তিতে আবদ্ধ করিতে না চাহিলে ধানের শীষে ভোট দিন।
কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি,আওয়ামী লীগ ৮৮,জাতীয় পার্টি ৩৫,জামায়াতে ইসলামী ১৮ আসনে জয় পায়। সিপিবি ও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশালের দখলে যায় ৫টি করে আসন।।এছাড়া,একটি করে আসনে জয় পায় জাসদ-সিরাজ,ইসলামী ঐক্যজোট,ওয়ার্কার্স পার্টি,ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্ট-এনডিপি,গণতন্ত্রী পার্টি ও ন্যাপ মোজাফফর। অবশিষ্ঠ তিনটি আসন পায় তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ছয় কোটি একুশ লাখের বেশি। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৩ কোটি ৪৪ লাখের বেশি ভোটার বা পঞ্চান্ন দশমিক চার শতাংশ ভোট। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৬টি ভোট বাতিল হয়।
৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির থলিতে যায় এক কোটি ৫ লাখ ৭ হাজার ৫৪৯টি ভোট,যা গৃহীত মোট ভোটের ৩০ দশমিক আট এক শতাংশ। অন্যদিকে,আওয়ামী লীগ ভোট পায় এক কোটি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ টি বা ৩০ দশমিক শূণ্য আট শতাংশ।
এই নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি।তবে সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই সরকার গঠনের জন্য বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামীর আলোচনা চলতে থাকে।একপর্যায়ে জামায়াতে ইসলামী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠির মাধ্যমে সমর্থন দিলে সরকার গঠন করে বিএনপি।আর খালেদা জিয়া হন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান।আর বিরোধী দলের নেতা হন শেখ হাসিনা। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ৪ বছর আট মাস।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ