রংপুর
শারিরিক প্রতিবন্ধকতা হারিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও চরম বিপাকে সজীব
সংসারের অভাব-অনটন অন্যদিকে উচ্চতায় বামন বা বেটে আর দুটি পা বাঁকা শারিরিক প্রতিবন্ধী হলেও হাজারো প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে সজীব মিয়া।
২০১১ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৩ পয়েন্ট ১৯ ও ২০১৩ সালে এইচএসসিতে জিপিএ- ২ পয়েন্ট ২০ এবং ২০১৯ সালে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে দর্শন বিভাগে জিপিএ-২ পয়েন্ট ৭৪ পেয়ে অনার্স পাশ করেন শারিরিক প্রতিবন্ধী সজীব মিয়া।
উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও শারিরিক মাত্র সোয়া তিনফিট উচ্চতা নিয়ে তাকে পদে পদে হাজারো বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। বাবার মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মাসহ তিন জনের সংসারের হাল ধরতে হয় এই শারিরিক প্রতিবন্ধি সজীবকে। শত-শত কষ্ট আর হাজারো কুটুক্তি উপেক্ষা করে থেমে যাননি সজীব মিয়া।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি কলা বাগান ধরলা নদীর প্রত্যন্ত চরা ল এলাকার মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে সজীব মিয়া। অসুস্থ জনিত কারণে সজিবের বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেওয়া (৫৮),ছোট ভাই ফেরদৌস আলীসহ সজীবের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। অভাব আর নানা বাঁধা উপেক্ষা করে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে।
প্রতিদিন তিন থেকে চার কিলোমিটারের পথ হেটে টিউশনি পড়াতে বেড়িয়ে পড়েন। টিউশনির আয় মাত্র মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। এই সামান্য আয়েই একদিকে সংসারসহ ছোট ভাই আর নিজের পড়াশুনার খরচ জোগাতে চরম অর্থ সঙ্কটেই দিন কাটে। খেয়ে না খেয়ে পড়াশুনা করে স্বপ্ন আকেন সজীব মিয়া। শারিরিক উচ্চতা কম থাকায় বউ না পাওয়ার শংকায় থেকে সজীব ২০১৮ সালে পারিবারিক ভাবে খালাতো বোন শিরিনাকে বিয়ে করেন। সজীবের সংসারে রয়েছেন স্ত্রী,নবম শ্রেণী পড়–য়া ছোট ভাইসহ মাসহ চার জনের সংসার। সংসারের সকল দায়িত্ব এই সজীবের ঘাড়েই। জমিজমা বলতে ভিটেমাটিসহ তিন বিঘা জমি রয়েছে। এরমধ্যে সংসারের অভাবে কারণে বছর তিনেক আগে দেড় লাখ টাকায় দু’বিঘা জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে।
সজীব মিয়া বলেন,পড়াশোনা করার সময় অনেক বাঁধা আর মানুষের বিভিন্ন ধরনের কুটুক্তি শুনতে হয়েছে। এসব কিছু কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়েছি। বর্তমানে করোনার কারনে ৮/১০ জন শিক্ষার্থীকে টিউশনি পড়াচ্ছি। সংসারের আয়ের উৎস বলতে নিজের প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মায়ের বিধবা ভাতা। সংসারে মায়ের কয়েকটি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী লালন-পালন করেই তা দিয়েই টানা পোড়েনের মধ্যে আমাদের সংসার চলছে। মাঝে মধ্যে ছোট ভাই ফেরদৌস দিনমজুরির কাজ করে সংসারে যোগান দেয়। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করিয়েছেন।
সজীব বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় টিউশনি পড়িয়ে সরকারি চাকরির খোঁজখবর রাখা মুশকিল। আর শারিরিক উচ্চতারও জন্য নিজেই অস্বস্তিতে দিন রাত কাঁটাতে মানষিকভাবেই বিধ্বস্ত সজীব। আমি খাটো হওয়ায় বিয়ের জন্য মেয়ে না পাবার শংকাতে পরিবারের কথায় লেখাপড়া চলাকালিন বিয়ে করি। এখনও কোন সন্তান হয়নি। মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে আর ছোট ভাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য আমার একটা চাকুরির প্রয়োজন। সজীবের দাবী প্রতিবন্ধি কোটায় সরকার তাকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমার অসহায় পরিবারটির একটা স্থায়ী সমাধান হতো। পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন সজীব।
সজীবের স্ত্রী শিরিনা বেগম জানান, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী হলেও অনার্স পাশ করেছে। কিন্তু আমি সুস্থ স্বাভাবিক থেকেও পড়াশুনা করতে পারিনি। আমার স্বামী কষ্ট করে টিউশনি পড়িয়ে কোন রকমেই সংসার চালাচ্ছেন। স্বামীর সংসারে একটু সুখ ফিরে আসবে এই স্বপ্ন দেখছেন তিনিও।
সজীবের মা ফাতেমা বেওয়া জানান,বাপ মরা ছেলেটাকে খেয়ে না খেয়ে নেখাপড়া শিখাইছং। কষ্ট করি মোর প্রতিবন্ধি ছেলেটাই সংসারের হাল ধরেছে ওর বাপ মারা যাবার পর থাকিয়া। ছোট ছেলেটাও ভাইয়ের কষ্ট দেখে এই বয়সে কামলা খাটিয়া সংসারের জোগান দেয়। সরকার যদি মোর বেটার জন্য একটা সরকারি চাকরি দেইল হয় হামার পরিবারটি বাঁচিল হয়।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.মুসাব্বের আলী মুসা জানান, ইতিপূর্বে সজীবকে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে অসহায় প্রতিবন্ধী সজীবের একটা চাকুরির খুবেই দরকার। চাকুরিটা হলে তার পরিবারের একটা স্থায়ী সমাধান হতো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান জানান, বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন হতে তাকে চাকুরি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে সজীব যদি সরকারী-বে-সরকারী চাকুরির জন্য কোথাও অবেদন করে তাহলে যোগ্যতা ও প্রতিবন্ধী কোটায় চাকুরির জন্য সহযোগীতার আশ্বাস দেন।
জাতীয়
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে কাউন্সিলরসহ নিহত ৫
রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে রংপুর নগরীতে সংঘর্ষ চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি। নিহতের বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা।
নিহত অন্য চারজন হলেন নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খরশু মিয়া, যুবলীগ নেতা মাসুম, হারাধন রায়ের ভাগ্নে এবং অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, সকাল থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেন নগরীর টাউনহল চত্বরে। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরে জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে পুনরায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আটকে পড়েন পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। পরে পায়রা চত্বর থেকে পালিয়ে কালিবাড়ি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পড়েন হারাধন রায় হারা। সেখানেই এলোপাতাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলেও পুনরায় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন তারা। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনা জানার পর হারাধনের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমান, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের রিপোর্টার ফখরুল শাহীন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনি, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, অনলাইনের মিজানসহ ১০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর করেছেন আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য, রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন, গংগাচড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন, মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দফতরে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এএম/
দেশজুড়ে
রংপুরে আ.লীগের এমপির বাসায় আগুন, লুটপাট
রংপুরের বদরগঞ্জে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক) ও পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক চৌধুরীর (টুটুল) বাসায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আগুন দেওয়ার পর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রথমে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়েছেন। পরে বিক্ষোভকারীরা একত্রিত হয়ে স্থানীয় দুপুর ১২টার দিকে আগুন দেয়। বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে ওই দুই বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছে।
অন্যদিকে রংপুর শহরের সুপার মার্কেটের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রোববার (৪ আগস্ট) সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (রমেক) উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৩২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এনএস/
দেশজুড়ে
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রংপুর, নিহত ২
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
রোববার (৪ আগস্ট) সকালে শহরের সুপার মার্কেটের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত ও নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (রমেক) উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৩২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এনএস/