আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে শেখ হাসিনার জয়
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার নিরঙ্কুশ জয়ের মধ্যদিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দুটি আসন ছাড়া ২৯৮ আসনের ফলাফল ঘোষণা শেষে বেসরকারিভাবে এমন জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘বিতর্কিত’ এই গণরায়ের মাধ্যমে দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চমবার এবং টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটির জয়ের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এরপর নির্ধারিত বিরতি শেষে শুরু হয় গণনা। বেসরকারিভাবে পাওয়া ২৯৮ আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৪ আসন। ১৯৯৬ সালের পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে দলটি। এরপর থেকে একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই দলটি।
আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার বেশি। তারা ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর অন্যান্য দল পেয়েছে একটি আসন।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল।
আওয়ামী লীগের জয়ের খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আরও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সামগ্রিকভাবে এটি শেখ হাসিনার পঞ্চম মেয়াদ। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০০৯ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন।
নির্বাচনের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে আরেক ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনের এক মুখপাত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি’র উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।’ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ বছরের ক্ষমতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং পোশাক শিল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য কৃতিত্ব পেয়েছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রতিবেশী মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের জয়ের খবর প্রকাশ করেছে সুপরিচিত মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নারী সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের খেতাব বজায় রেখেছেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ভোটের শতাংশ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাংলাদেশে পঞ্চমবার জয়ী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ যে এমন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে তা তফসিল ঘোষণার পরেই ধারণা করা হয়। কারণ অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও সমমনা দল একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এবারের নির্বাচনে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এককভাবে জয়ী হয়েছেন ২২২ আসনে। দলীয়ভাবে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১ আসন। এর ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।
একইভাবে এ খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।
এছাড়াও, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতীয় বেশিরভাগ গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের জয়ের খবর।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//