আন্তর্জাতিক
গাজায় যুদ্ধ চলতে পারে প্রজন্ম ধরে!
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৪২২ জনের। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গেলো ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলা বন্ধের কোনো আশা মিলছে না। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের এক মন্ত্রী বলছেন যে, গাজায় যুদ্ধ চলতে পারে এক প্রজন্ম ধরে।
ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে আরো অনেক বেশি ফিলিস্তিনি রাফায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমন অবস্থায় সেখানে নাগরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গেলো একদিনে গাজায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৬৫ জন আহতের সংখ্যা ২৯০। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৭ জন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে গাজার ৮৫% জনসংখ্যা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া গাাজর ৬০% অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধ ১০ বছর বা এমনকি একটি পুরো প্রজন্ম স্থায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু সরকারের একজন সিনিয়র সদস্য। যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, হুমকি নির্মূল করতে সময় লাগবে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গেলো ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলোর অন্যতম উৎস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
গেলো ৭ অক্টোবর কয়েক দশকের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় কয়েক হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, বিস্ফোরক, ছোট ও হালকা অস্ত্র এবং প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে হামাস।
প্রায় ১৭ বছর ধরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা গাজা। এছাড়া আকাশ ও নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। তা সত্ত্বেও হামাসের হামলায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ব্যবহারে কীভাবে হলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও উপকারী বিদেশি বন্ধুর সহায়তায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
এছাড়া অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবরোধের মধ্যেও হামাসের কাছে এত ভারী অস্ত্র থাকার কারণ হলো, গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে তৈরি করা পথে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অস্ত্র তাদের হাতে আসে।
কিন্তু ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রের অন্যতম উৎস ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় দখলদার দেশটির ফেলা অবিস্ফোরিত হাজার হাজার গোলাবারুদ দিয়ে নিজেদের জন্য রকেট ও ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা তৈরি হয়েছে হামাসের। এছাড়া ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি থেকে লুট করা অস্ত্রও হামাস তাদের যোদ্ধাদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
গেলো কয়েক মাসের লড়াইয়ের সময়ে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, হামাসের সম্পর্কে ৭ অক্টোবরের আগে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে তা ভুল। তেমনি তাদের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টিকেও ছোট করে দেখেছে ইসরায়েল।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিগত ১৭ বছরের গাজা অবরোধকালে সেখানে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এখন সেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//