আন্তর্জাতিক
ইয়েমেনে পশ্চিমা জোটের হামলা
ইরাক ও সিরিয়ার পর ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এদিনের হামলায় হুথিদের ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে দেশ দুটি। লোহিত সাগরে একের পর এক জাহাজে হামলার পর মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর এ হামলার ঘটনা ঘটল। ভূমি ও আকাশ থেকে এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমা জোট।
রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন শনিবার ইয়েমেনে কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের জাহাজে বারবার হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। লোহিত সাগরে হুথিদের এই হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করেছে এবং অনেকের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের।
ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে একতরফা আমেরিকান হামলার একদিন পর ইয়েমেনে যৌথ এই বিমান হামলা চালাল মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী। গেলো ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সৈন্য নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরাক ও সিরিয়ায় এই হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং এই অভিযানে সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য দেশগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক এবং বাণিজ্যিক জাহাজের পাশাপাশি লোহিত সাগরে চলাচলকারী নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে হুথিদের ক্রমাগত আক্রমণের জবাবে ইয়েমেনের ১৩টি স্থানে ৩৬টি হুথি লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই নিখুঁত হামলার উদ্ধেশ্য ছিল- বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং নিরপরাধ নাবিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলার জন্য হুথিদের ব্যবহৃত সক্ষমতাকে ব্যাহত ও অবনমিত করা।’
শনিবারের (০৩ ফেব্রুয়ারি) এই হামলায় ‘হুথিদের সু-সংরক্ষিত অস্ত্র স্টোরেজ অবকাঠামো, ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম এবং লঞ্চার, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও রাডারগুলোর সাথে সম্পর্কিত স্থাপনাগুলোকে’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলেও এতে বলা হয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) বলেছে, এর আগে শনিবার পৃথকভাবে হুথিদের ছয়টি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ‘লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল’।
সামরিক কমান্ড শনিবার আরও বলেছে, মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের কাছে আটটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং উৎক্ষেপণ করার আগেই আরও চারটি ড্রোন ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুথিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এর মাঝেই হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় চার মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত : মার্কিন মুখপাত্র
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিলার বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি শুভ দিন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সবেমাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে অভিননন্দ জানিয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স আজ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনুসের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলেও জানান ম্যাথিউ মিলার। তবে কোন বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে তিনি সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি।
আই/এ
এশিয়া
জাপানে ৭.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটের দিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিয়ুশুর মিয়াজাকি অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থার (জেএমএ) বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর দেশটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মিয়াজাকিতে সমুদ্রের ঢেউ ইতোমধ্যে ৫০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখ্য সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা যায়নি। সরকার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা একেবারে সাধারণ। বিশ্বে ৬ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই এদেশে ঘটে থাকে।
এর আগে, ২০১১ সালের ১১ মার্চ দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। যেটি ছিলো জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই সময় ভূমিকম্পের পর দেশটিতে বিশাল সুনামি আঘাত হানে।
সূত্র: রয়টার্স
জিএমএম/
আন্তর্জাতিক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেনো গণতন্ত্র, আইন ও বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করে-এমনটাই চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটাই আশা করে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইরাকের এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তার বা অন্যদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছি কী? বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা এখনও যোগাযোগ করেনি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি এবং আমরা এরইমধ্যে দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি নিশ্চয়ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন যে. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তা যেনো গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে, আইনের শাসন এবং সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, আপনি কি জানেন যে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করে নতুন সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন, সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন? তিনি সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যিনি বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দয়াকরে তার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানাবেন কী?’
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছি এবং আমরা দেখতে চাই এই সরকার কী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যায়।
এসময় মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও জানতে চান, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?
জবাবে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্র বলেন, শনের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেমনটি বলেছি – অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা দেখতে চাই ওই সিদ্ধান্তে যেনো গণতান্ত্রিক নীতি মেনে চলা হয় এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিনের গাজা, দক্ষিণ আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, ইরাক ও ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এমআর//