ময়মনসিংহ
স্ত্রীর শরীরে গরম পানি ঢেলে ১ সপ্তাহ আটকে রাখেন শিক্ষক স্বামী
জামালপুরে মায়া আক্তার নিশি (১৮) নামে এক কিশোরী গৃহবধূ হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঝলসে গেছে তার বুক, পিঠ ও পেট। হাত বেঁধে তাকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন তার স্বামী। পরে তাকে চিকিৎসা না করে ঘরে সাত দিন তালাবদ্ধ করে রাখেন।
এমন অমানবিক নির্যাতনের পর গেলো সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই গৃহবধূকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে গেলো ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুর শহরের গেটপাড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় জামালপুর সদর থানায় ওই গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় গৃহবধূর শ্বশুর আশেক আলীকে আটক করেছে পুলিশ। স্বামী আল-আমিন (৩৩) পালাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত আল-আমিন জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা ও শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
জানা যায়, প্রায় ১০ মাস আগে মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া এলাকার প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে নিশির সঙ্গে আল-আমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ঝগড়া বিবাদ। গেলো ৩ মাস আগে ওই জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নেন শিক্ষক আল-আমিন। ওই ভাড়া বাসায় স্ত্রী নিশিকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
গেলো ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওড়না দিয়ে স্ত্রী নিশির হাত বেঁধে তাকে মারতে শুরু করেন। পরে চা তৈরি করার জন্য রাখা গরম পানি নিশির শরীরে ঢেলে দেন। গরম পানিতে মুহূর্তে ঝলসে যায় তার শরীর। পরে ওষুধের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে এনে নিশিকে খাওয়ান। তারপর তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ৭ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর নিশি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে তার পরিবারকে খবর দেন আল-আমিন। এরপর ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে আহত নিশিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মায়া আক্তার নিশি বলেন, ‘গেলো ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে যৌতুকের টাকা দাবি করে কথা কাটাকাটি হয় আমাদের। পরে আমার গলায় টিপে ধরে ও হাত বেঁধে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চা বানানোর জন্য করা গরম পানি আমার শরীরে ঢেলে দেয়। গরম পানি ঢেলে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে বের হই। এ সময় আমি কান্না করলে, আমাকে দেখে হাসতে থাকে। পরে ওষুধের দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধ নিয়ে আসে কাউকে না জানানোর জন্য আমাকে ভয় দেখায়।’
সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে রুমে তালা মেরে স্কুলে চলে যেত। আবার বিকেলে বাসায় আসতো। সাত দিন আমাকে তালা মেরে রেখেছে। শরীরের পিঠে, বুকে, পেটে পোড়ার ক্ষত বেশি থাকায় আমাকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্যজনের মোবাইল দিয়ে আমি বড় বোনকে ফোন করি। আমার বোন আসার আগেই আল-আমিন পালিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগীর মা নার্গিস বেগম বলেন, আমার মেয়ের পিঠ, বুক ও পেট দেখার মতো অবস্থায় নেই। গরম পানি ঢেলে একবারে ঝলসে দিয়েছে। এতটা পুড়িয়ে দিয়েছে যে কেউ দেখলে ভয় পাবে। আমার মেয়ে তো কোনো অপরাধ করেনি। এভাবে নির্যাতন করার কী দরকার ছিল। আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এতটা নির্যাতন করতে পারে। গরম পানি ঢেলে তাকে চিকিৎসা না করে উল্টো ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে। একজন শিক্ষক স্বামী হয়ে তিনি এই কাজ কিভাবে করতে পারেন। দ্রুত আল আমিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, নিশির শরীরের পিছনে ও সামনের অংশ পুড়িয়ে দিয়েছে। শরীরের বিশ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে আর রোগীর আশঙ্কা নেই। চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
জামালপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত কবীর বলেন, এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আলামিন পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
ময়মনসিংহ
বন্ধুদের নিয়ে নববধূকে ধর্ষণ,স্বামীসহ গ্রেপ্তার ২
টাঙ্গাইলে স্বামীর সহযোগিতায় বাসর রাতে বন্ধুদের নিয়ে নববধূকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী আব্দুল বাছেদ (২৫) ও বন্ধু জহুরুল ইসলামকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপর বন্ধুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গেলো বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) অভিযুক্ত দু আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিয়ে করে ওই নববধূকে নিজের বাড়িতে তোলেন আব্দুল বাছেদ। বাসর রাতে প্রবেশের পর বাছেদের সহযোগিতায় তার দুই বন্ধু কৌশলে ভুক্তভোগী নববধূকে ধর্ষণ করেন। পরে ভুক্তভোগী ভূঞাপুর উপজেলার নিকলা পাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানান।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় গেলো ২৭ জুলাই ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় গ্রেপাত দুই আসামিসহ বর্তময়ানে পলাতক রবিন মিয়াকে (২৬) আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী ও তার বন্ধুকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় নববধূর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আই/এ
জনদুর্ভোগ
বন্যার পানিতে গোসলে নেমে ৪ জনের মৃত্যু
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুচর এলাকায় বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে লোকজন গিয়ে দেখেন মরদেহ পানিতে ভেসে উঠেছে। এ সময় বেঁচে ফেরেন মারিয়া (১২) নামের এক শিশু।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৫টায় এ ঘটনা ঘটে। মেলান্দহ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- দক্ষিণ বালুচর এলাকার দিশা আক্তার (১৭), সাদিয়া (১০), খাদিজা (১০) ও রোকশানা (২৫)।
স্থানীয়রা জানান, রোববার বিকেলে দক্ষিণ বালুচর এলাকার পাশাপাশি বাড়ির তিন শিশু, এক কিশোরী ও এক গৃহবধূ ফসলি জমিতে বন্যার পানিতে গোসল করতে যান। গোসল করার একপর্যায়ে হঠাৎ করেই চারজন পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় দূরে থাকা এক কিশোরী তাদের তলিয়ে যাওয়া দেখে দৌড়ে বাড়িতে এসে খবর দেন।
স্থানীয়দের বরাতে (ওসি) রাজু বলেন, এলাকার লোকজন বলছেন, অল্প পানিতেই সবাই গোসল করতে গিয়েছিল। এই পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাতে সবাই হতবাক। এর মধ্যে আগামী শুক্রবার দিশার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ আলী বলেন, দুপুরে এমন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। এমন ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এএম/
ময়মনসিংহ
বন্যায় টাঙ্গাইলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও, কিছু এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় অনেক নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।এর ফলে প্রায় ছয়টি উপজেলার ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই)টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, বন্যার পানিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার ৬৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে রয়েছে। তবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন এলাকার ফসলি জমি বন্যাকবলিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, বাসাইল উপজেলার ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া যমুনাসহ তিনটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ বছর বন্যায় যেসকল মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম।
জেড/এস