টুকিটাকি
৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটি ইতিহাসে মাত্র একবারই এসেছিল, কবে?
বহু বছর ধরে প্রতি চার বছর পর পর লিপ ইয়ারের মাধ্যমে বছর গণনাকে সমন্বয় করায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
সাধারণত এক বছর বলতে ৩৬৫ দিনের হিসাব করা হলেও এবারে ২০২৪ সালে বছরের গণনা করা হবে ৩৬৬ দিনে। কারণ চলতি বছর হল লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।
লিপ ইয়ার হল প্রতি চার বছর পর পর ৩৬৫-দিনের ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষে বাড়তি একটি দিন যোগ হওয়া। তাই ২৯শে ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন।
এই বাড়তি এক দিন যোগ হওয়া মানে মাসের শেষে বিল পরিশোধ করতে যেমন বাড়তি একদিন সময় পাওয়া যায়, তেমনি অনেকের ক্ষেত্রে বেতন আসার জন্য আরেকটা দিন বেশি অপেক্ষা করতে হয়।
যারা এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তারা প্রতি চার বছরে পর পর তাদের প্রকৃত জন্মদিন পালন করতে পারেন।
কিন্তু ইতিহাসে শুধুমাত্র একবার এমন সময় এসেছিল যখন ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যোগ করতে হয়েছিল। সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩০শে ফেব্রুয়ারি যুক্ত করেছিল।
তাহলে ভেবে দেখুন, সেই তারিখে যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাদের ভাগ্যে কী হয়েছে? তারা তাদের জীবদ্দশায় কখনই সত্যিকারের জন্মদিন উদযাপন করতে পারেননি।
এই ৩০শে ফেব্রুয়ারি কেন যুক্ত করতে হয়েছিল সেই ব্যাখ্যার আগে লিপ ইয়ার কেন আসে, কবে থেকে লিপ ইয়ার যুক্ত হয়েছে সেই ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
কেন আসে লিপ ইয়ার ?
প্রতি চার বছর পর পর ক্যালেন্ডারে যে অসঙ্গতি থাকে, সেটিকে সমন্বয় করতে লিপ ইয়ারের আবির্ভাব।
কখন থেকে এই লিপ ইয়ারের প্রচলন হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য দুই সহস্রাব্দেরও বেশি আগে প্রাচীন রোমের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে।
কারণ সেই সময় প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল, তারা যে সৌর ক্যালেন্ডার ধরে বছর গণনা করছেন সেটি সৌর বছরের সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।
এই ক্যালেন্ডারের প্রাথমিক ধারণা এসেছিল রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের কাছ থেকে।
তিনি সেসময় আলেকজান্দ্রিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসকে রোমান ক্যালেন্ডারের একটি বিকল্প তৈরি করতে সাহায্য করতে বলেছিলেন।
যে ক্যালেন্ডার হবে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কারো কারো মতে, পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে কাঁটায় কাঁটায় ৩৬৫ দিন সময় নেয় না। এতে ৩৬৫ দিনের সাথে পাঁচ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৫৬ সেকেন্ড বেশি সময় লাগে।
এই বাড়তি সময়কে সমন্বয় করতে সোসিজেনেস একটি ক্যালেন্ডার তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন, যা মিশরীয়দের ক্যালেন্ডারের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়।
সৌর বছরের সাথে সন্নিবেশ করতে প্রতি চার বছরে ৩৬৫ দিনের সাথে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়।
এভাবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্ম হয়, এর প্রবর্তক জুলিয়াস সিজারের সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছিল।
একটি বাড়তি দিন
কিন্তু এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বেশিদিন টেকেনি। ওই ক্যালেন্ডারে কিছু ফাঁক থাকার কারণে ১৫৮২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জায়গা প্রতিস্থাপন করে নেয় আজকের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো মার্চ থেকে।
যেহেতু প্রতি চার বছরে একটি অতিরিক্ত দিনের প্রয়োজন ছিল, তাই রোমানরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এটি ফেব্রুয়ারিতে হবে, যা তখন বছরের শেষ মাস ছিল।
লিপ নামটি ল্যাটিন বাক্য থেকে এসেছে। যার অর্থ মার্চ মাস শুরুর ছয় দিন আগে, অর্থাৎ ২৪শে ফেব্রুয়ারি। সেসময় ওই দিনটি লিপ ইয়ার হিসেবে পালন করা হত।
বাক্যটি কিছুটা দীর্ঘ হওয়ায় একে সংক্ষেপে ‘বিস সেক্সটাস’ বলা হয়ে থাকে যার অর্থ লিপ ইয়ার বা বাংলায় অধিবর্ষ।
কয়েক বছর পরে, ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে ক্যালেন্ডারটিকে ‘নিখুঁত’ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তার আনা পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি ছিল যে লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি হবে ২৯শে ফেব্রুয়ারি এবং জুলিয়ান ক্যালেন্ডার দ্বারা নির্ধারিত ২৪ তারিখ নয়।
একটি গাণিতিক সমাধান
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্ল্যাভিয়াসের পরামর্শে, তখনকার জ্ঞানী ব্যক্তিরা বছরের হিসেবে এই সমন্বয় আনার জন্য সিদ্ধান্ত নেন যে, ১৫৮২ সালে চৌঠা অক্টোবরের পরের দিনটি হবে ১৫ই অক্টোবর।
অর্থাৎ মাঝে ১০ দিন গায়েব হয়ে যাবে।
মূলত এই উপায়ে সৌর বছরের মাঝে সময়ের যে ব্যবধান হয়েছিল সেটা দূর করা হয়।
এবং পরবর্তীতে যেন এই ভারসাম্যহীনতা আবার না ঘটে, সেজন্য তখন লিপ ইয়ারের প্রবর্তন করা হয়।
সময়ের হেরফের
সময়কে মূলত গণনা করা হয়, দিন, মাস এবং বছরের হিসেবে। এই গণনা প্রক্রিয়া মানুষেরই আবিষ্কার।
চন্দ্র আবর্তন অনুসরণ করে দেখা গেছে, দুইটি পূর্ণিমার মধ্যে কমবেশি সাড়ে ২৯ দিনের পার্থক্য থাকে।
অন্যদিকে, সৌর পরিভ্রমণ অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে সময় নেয় কমবেশি ৩৬৫ দিন ছয় ঘণ্টার মতো।
তবে এটি এমন এক গণনা পদ্ধতি যা হেরফের হতে পারে।
ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন শাসক এক বছরকে কয়েক মাসে ভাগ করেছেন। অর্থাৎ সব সময়ে ১২ মাসে এক বছর ছিল না, মাসের সংখ্যায় হেরফের ছিল।
ওই শাসকদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা-প্রয়োজন, বা তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুসারে সেই মাসগুলোয় বাড়তি দিন যোগ করা হতো নাহলে সরিয়ে নেয়া হতো।
ফলে সৌর বছরের সাথে এই ক্যালেন্ডারগুলোকে সমন্বয় করা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, যা উপেক্ষা করার উপায় ছিল না।
সম্রাট জুলিয়াস সিজার, প্রায় দুই হাজার বছর আগে, আমরা বর্তমানে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি তার অনুরূপ একটি ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেছিলেন।
সেই তথাকথিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১২ মাসে এক বছর ছিল। এবং মাসগুলোর কিছু ৩০ দিন এবং কিছু ৩১ দিনে গণনা করা হতো।
শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতো ২৮ বা ২৯ দিনে।
বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে। কারণ এটি বসন্তের শুরু। এজন্য বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারিকে লিপ ইয়ারের জন্য বেছে নেয়া হয়।
এক বছর যেহেতু ৩৬৫ দিন ছয় ঘণ্টায় হয়, তাই বাড়তি এই ছয় ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্য সেই রোমান সময় থেকে লিপ ইয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে।
গ্রেট গ্রেগরিয়ান লিপ
এই গণনা শতাব্দী ধরে চলে আসছে, কিন্তু এই গণনা পদ্ধতি সঠিক নয়। সৌর বছর আসলে একটু ছোট – সুনির্দিষ্টভাবে বললে ১১ মিনিট ১৪ দশমিক ৭৮৪ সেকেন্ড কম।
আদতে মনে হতে পারে এটি এমন কোন বড় পার্থক্য নয়, যা তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে বছরের পর বছর ধরে, এই বাড়তি মিনিট/ সেকেন্ড যোগ হয়ে সেটি বড় ব্যবধান তৈরি করে।
এ কারণেই ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি ১৫৮২ সালে তার ক্যালেন্ডারে থাকা অসঙ্গতিগুলো ঠিক করার জন্য কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন।
এটি প্রধানত ধর্মীয় কারণে করা হয়েছিল, কেননা এই সময়ের ব্যবধানের কারণে কয়েকশ বছরে ইস্টারের সূচনা তিন দিন আগপিছ হয়ে যায়।
তবে যাই হোক না কেন, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার এখন পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মানসম্মত প্রতিষ্ঠিত ক্যালেন্ডার।
যদিও সব দেশ একই সময়ে তা গ্রহণ করেনি।
যারা ক্যাথলিক চার্চের সাথে যুক্ত ছিল, প্রথমে তারা এই ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। পরবর্তী চার দশকে লিপ ইয়ার নির্মূল করার পরিবর্তে, তারা অক্টোবর মাস থেকে এক লাফে ১০ দিন কমিয়ে দেয়।
১৫৮২ সালে ৫ই অক্টোবর বৃহস্পতিবারের পরের দিন ১৪ই অক্টোবর শুক্রবার করা হয়।
অন্যান্য প্রোটেস্ট্যান্ট জাতি এবং সাম্রাজ্যগুলো শুরুতে এই ক্যালেন্ডার গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, কিন্তু অবশেষে তারাও এই পরিবর্তিত ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আমেরিকান উপনিবেশগুলো এই পরিবর্তন সাদরে গ্রহণ করে। তবে নতুন ক্যালেন্ডারে সমন্বয় করতে গিয়ে ১৭৫২ সালে তাদেরকেও ১২ দিন কমাতে হয়েছিল।
তারা দোসরা সেপ্টেম্বর থেকে এক লাফে ১৪ই সেপ্টেম্বরে পদার্পণ করে।
সুইডিশ পার্সিমনি এবং ৩০শে ফেব্রুয়ারির প্রবর্তন
কিন্তু তার আগে, সুইডেন যখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা হঠাৎ করে ওই দিনগুলোকে একসাথে বাদ দিতে চায়নি।
তারা ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিল।
এজন্য তারা টানা ৪০ বছরের জন্য ফেব্রুয়ারির লিপ দিনগুলো এড়িয়ে যায়, যতক্ষণ না সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে।
তাদের এতদিনের অনুসরণ করা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৭০০ সালে একটি লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু তারা ফেব্রুয়ারি মাস শুধুমাত্র ২৮ দিনেই কাটায়।
একইভাবে ১৭০৪, ১৭০৮ সাল লিপ ইয়ার হলেও তারা ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু, ওই সময়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক কাজের মধ্যে এই লিপ ইয়ার না কাটানোর পরিবর্তনের কথা তারা ভুলে যায়।
কয়েক বছর পরে, সম্রাট দ্বাদশ চার্লস বুঝতে পেরেছিলেন যে সুইডেনের ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনটিই নয়।
এরপর তিনি ক্যালেন্ডার প্রণয়নে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আগের সব পরিবর্তন বাতিল করেন।
কিন্তু, যেহেতু তারা ইতিমধ্যেই ১৭০০ সালের অধিবর্ষ বাদ দিয়েছিল, তাই তিনি আদেশ দেন যেন ১৭১২ অর্থাৎ আরেকটি লিপ ইয়ারে ২৯শে ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি আরেকটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়।
এভাবে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ইতিহাসে প্রথম এবং একটিমাত্র বারের জন্য ৩০শে ফেব্রুয়ারি তারিখটি তৈরি করা হয়েছিল।
ওই ৩০শে ফেব্রুয়ারি যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাদের জন্ম তারিখ বা জন্ম দিন পালনের বিষয়ে কী হয়েছিল তা জানা যায়নি।
তবে তারা যে কোনদিনই সত্যিকারের জন্মদিন উদযাপন করতে পারেনি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
শেষ পর্যন্ত, সুইডেন উত্তর ইউরোপে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণ করে।
দেশটি ১৭৫৩ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে এবং একই পদ্ধতিতে বছরে ১০ দিন এক সাথে ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
অন্যান্য ৩০শে ফেব্রুয়ারি
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে একটি বিপ্লবী ক্যালেন্ডার চালু করেছিল।
যেখানে পাঁচ দিনে এক সপ্তাহ নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং সব মাস ধরা হয় ৩০ দিনে। এতে বছরের শেষে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় দিন বাড়তি থেকে যায়, যা ‘ছুটি’ হিসাবে বিবেচিত হয়।
সাত দিনের সপ্তাহ বাতিল করার উদ্দেশ্য ছিল সপ্তাহে ছুটির দিনের বাধা ছাড়াই শিল্প উৎপাদন উন্নত করা।
কিন্তু শিগগিরই এটি উপলব্ধি করা হয় যে, রবিবারের প্রথাগত বিশ্রামের অভ্যাস দূর করা কঠিন হবে এবং ধারণাটি এক পর্যায়ে বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে ৩০শে ফেব্রুয়ারি তারিখটি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে।
রে ব্র্যাডবিউরির ছোট গল্প “দ্য লাস্ট নাইট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড”-এ ৩০শে ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ লেখক জন রোনাল্ড রিয়েল টলকিয়েন তার ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অফ দ্য রিংসে’ ৩০শে ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখ করেছেন।
তার বই অনুযায়ী হবিটরা একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করে যেখানে ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ৩০ দিনে।
তবে বাস্তব জগতেও এই তারিখের ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে।
যখন কোন মানুষের মৃত্যুর তারিখ অজানা থাকে তখন তাদের সমাধি প্রস্তর বা এপিটাফে জন্ম তারিখ হিসেবে ৩০শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রেকর্ড করা হয়।
ধর্মীয় রেফারেন্স ছাড়া ক্যালেন্ডার
সংস্কারের এ ধারা আধুনিক ক্যালেন্ডারের পথ তৈরি করে দিয়েছে, যা আমরা বর্তমানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসাবে জানি।
সর্বশেষ সংস্কারের পর থেকে ক্যালেন্ডার ব্যবস্থায় কোনো নতুন পরিবর্তন হয়নি।
যদিও ফ্রান্সের মতো কিছু দেশে নতুন এই ক্যালেন্ডার সংশোধনের জন্য আন্দোলন হয়েছিল।
তবে, ১৭৯২ সালে ফরাসি বিপ্লব চলাকালে দেশটি তাদের গণিতবিদ গিলবার্ট রোমের ডিজাইন করা একটি ‘প্রজাতন্ত্রী’ ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
এই ক্যালেন্ডারে ধর্মীয় রেফারেন্স বাদ দেওয়া হয় এবং মাসগুলোর নতুন নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয় – নতুন নামে প্রাকৃতিক ঘটনা এবং কৃষি খাতের নানা বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু ক্যালেন্ডারের নতুন এ সংস্করণের স্থায়িত্ব ছিল খুব সংক্ষিপ্ত।
এরপর ১৮১৪ সালে নেপোলিয়নের উৎখাতের পর, ফ্রান্স দ্রুতই ত্রয়োদশ গ্রেগরির তৈরি এবং জুলিয়াস সিজারের সংস্করণের ক্যালেন্ডারে ফিরে আসে।
সূত্র: বিবিসি
টুকিটাকি
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ বছর ধরে তরুণীকে ধর্ষণ
তরুণীকে একাধিক বার ধর্ষণের অভিযোগে রোববার মুম্বাইয়ের যোগেশ্বরী থেকে ২৮ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঠাণে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্তের নাম রিয়াসাত ইলিয়াস কুরেশি। গেলো দু’বছর ধরে এক তরুণীকে লাগাতার ধর্ষণ করেছে সে।
অভিযুক্ত ও নির্যাতিতা দু’জনেই ঠাণের বাসিন্দা। ২০২১ সালে বছর ২৪-এর ওই তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায় ইলিয়াস। কিছু দিনেই বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে। এর পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ওই তরুণীর সঙ্গে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক করে সে। একবার ওই তরুণীকে গর্ভপাত করাতেও বাধ্য করা হয়।
কিন্তু এ বছর তরুণী বিয়ের কথা তুলতেই বেঁকে বসে সে। এর পরেই ইলিয়াসের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বার ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন ওই তরুণী।
রাবোড়ি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পেশায় এক জন দর্জি। নিজের দোকান রয়েছে তার। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পর বিয়েতে রাজি না হওয়াতে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন এক মহিলা। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবককে রবিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জেএইচ
টুকিটাকি
বরের বাবা পালিয়ে গেলেন কনের মাকে নিয়ে
যুগলের বিয়ের আগে বরের বাবা পালিয়ে গেলেন কনের মাকে নিয়ে। অনেক খুঁজেও তাদের হদিস মিলল না। অগত্যা পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার।
ঘটনাটি ভারতের উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্চ জেলার। অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে যুগলের বাগ্দান পর্ব সারা হয়েছিল। বাকি ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। তারই তোড়জোড় চলছিল। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন আগে হঠাৎই উধাও হয়ে যান বরের বাবা। ওই একই সময় থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না কনের মায়েরও। দুই পরিবার এ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়। নানা জায়গায় দু’জনের খোঁজ করা হয়। কী থেকে কী হয়েছে, কারও সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না।
প্রায় এক মাস ধরে দু’জনের খোঁজ করে পরিবার। এরপর বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন কনের বাবা। তার অভিযোগ, তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন তার হবু জামাইয়ের বাবা। অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করেছে পুলিশ। তাতে অভিযুক্তের নাম শাকিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার নিজেরই ১০ সন্তান। এ ছাড়া, ওই মহিলার আরও ছয় সন্তান রয়েছে। মোট ১৬ সন্তান রেখে তারা পালিয়েছেন।
কনের বাবা থানায় জানিয়েছেন, গেলো ৩ জুন থেকে তার স্ত্রী নিখোঁজ। একই সময় থেকে পাওয়া যাচ্ছে না হবু জামাইয়ের বাবাকেও। তিনি মহিলাকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা অভিযোগকারীর।
তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দু’জন স্বেচ্ছায় একে অপরের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছেন। তবে বিশদে জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ মনে করছে, যুগলের বাগ্দানের পর থেকেই বরের বাবা এবং কনের মা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করেন। গোপনে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেন। ক্রমে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরেই দু’জন পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
স্থানীয় স্টেশন হাউস অফিসার বিনোদ কুমার বলেছেন, ‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গেলো ১১ জুলাই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারা অনুযায়ী অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আমাদের অনুমান, মহিলা নিজের ইচ্ছাতেই পালিয়েছেন। তবু পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি স্বেচ্ছায় না হয়ে থাকলে ওঁকে ফিরিয়ে আনা হবে।’
জেএইচ
টুকিটাকি
স্বামীর গায়ের রং কালো, তাই বাপের বাড়ি চলে গেলেন স্ত্রী
স্বামীর গায়ের রং কালো হওয়ায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন স্ত্রী! বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে গেছেন বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন যুবক। তার অভিযোগ, সদ্যোজাত সন্তানকে ফেলে বাপের বাড়ি চলে গেছেন স্ত্রী। আর ফিরতে চাইছেন না। চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্বামীর গায়ের রংকে দুষছেন তিনি। অন্যদিকে, অভিযুক্ত মহিলাও স্বামীর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে পাল্টা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের। ২৪ বছর বয়সি যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৪ মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। কিছু দিন আগে তার স্ত্রী এক কন্যা সন্তানের জন্মও দিয়েছেন। এর পরেই সন্তানকে ফেলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। কিছু দিন পর বাপের বাড়ি থেকে যুবক স্ত্রীকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মহিলা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্বামীর গায়ের রং কালো হওয়ায় তার সঙ্গে ঘর করতে চান না।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ আপাতত আগামী শনিবার দম্পতিকে থানায় তলব করেছে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে দু’জনের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে গোলমাল মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। তাতেও যদি মিটমাট না হয়, তবে অভিযোগ অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে পুলিশ।
গোয়ালিয়রের ভিকি ফ্যাক্টরি এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই তার গায়ের রং নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন স্ত্রী। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে একাধিক বার ঝামেলাও হয়েছিল। কিছু দিন আগে সন্তান জন্ম দওয়ার পরেই স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। যদিও মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, স্বামী তার উপর অত্যাচার করেন। সেই কারণেই তিনি বাড়ি ছেড়েছেন।
জেএইচ