বাংলাদেশ
‘বাবা, এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম’; বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে বেঁচে যাওয়া শিশু
রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনে আগুন লাগার সময় ওই ভবনের একটি রেস্টুরেন্টে আটকা পড়েছিলেন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, তাঁর স্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহরুফা গুলশান আরা এবং তাদের দুই কন্যা ওয়াজিহা জামান মজুমদার (১২) ও ওয়াজাহ জামান মজুমদার (৭)। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উদ্ধারকারী কর্মীরা সময়মতো পৌঁছে যাওয়ায় তারা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হতে পেরেছিলেন। এজন্য ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, যখন একটি বিধ্বংসী আগুন মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় তখন তাদের উদ্ধারে শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস ওসিভিল ডিফেন্সের কর্মীরাই এগিয়ে আসেন।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সময়মতো না পৌঁছলে আমি এখানে থাকতাম না।’
বড় মেয়ে ওয়াজিহার ১২তম জন্মদিন উদযাপন করতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ওই ভবনের জেস্টি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। তবে তাঁর ধারণা ছিল না ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘ বড় মেয়ের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে খাওয়া-দাওয়াসহ সময় কাটানোর জন্য ওই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জেস্টি রেস্টুরেন্টটির অবস্থান আমাদের বাসা থেকে মাত্র দুটি ভবনের পরেই। খাবার ওর্ডার দেওয়ার পরপরই কিছু একটা পোড়া গন্ধ পাই এবং কিছুক্ষণ পরেই নিচতলা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখি।
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার গবেষণা এবং কাজ করার কারণে আমি বিপদ বুঝতে পেরেছিলাম। জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি রাস্তার ওপারে একটি বিল্ডিংয়ের দিকে ইশারা করে লোকজন জড়ো হচ্ছেন এবং চিৎকার করছেন। রেস্টুরেন্টের জানালার পাশেও ধোঁয়া উঠছে। আমি সময় নষ্ট না করে দ্রুত রেস্টুরেন্ট প্রাঙ্গন ছেড়ে যাওয়ার জন্য উঠে পড়ি। প্রথমে উপরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ওইসময় জেস্টি রেস্টুরেন্টে থাকা ১০-১২জনকেও স্থান ত্যাগ করতে বলি। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে লবিতে যাওয়ার পর দেখতে পাই নিচ থেকে প্রচুর ধোঁয়া আসছে।’
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘ধোঁয়া উপরের দিকে উঠতে থাকায় বেশ কয়েকজন লোক উপরে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। তবে কিছু লোক নীচে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে নিচে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তারাও আমাদের সঙ্গে ছাদে যাওয়ার জন্য রওনা দেন। এসময় ধোয়া প্রতি সেকেন্ডে উদ্বেগজনকভাবে আরো ঘন হয়ে উঠছিলো। ছাদের দরজা খোলা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি পরিবারসহ বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডে আটকা পড়েছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
পরে আবারও পোস্টে লেখেন, ‘আমরা এখনো মারা যাইনি, ছাদে আছি। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। কল নয়, দোয়া করুন।’
পরে তৃতীয় পোস্টে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। স্ত্রী ও সন্তানদেরসহ আমরা ভবন থেকে নেমেছি। আমরা ছাদে ছিলাম।’
অধ্যাপক কামরুজ্জামান সেই ভয়াবহ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘ছাদে যাওয়ার পর বাতাস পাচ্ছিলাম। তবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছিল না। এরইমধ্যে ৪০জন লোক ছাদে অবস্থান করছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আগুনের ধোঁয়া এবং তাপ তীব্র হয়ে ওঠে, নিরবচ্ছিন্নভাবে ছাদের দিকে উঠতে থাকে। এসময় নারী ও শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ধোঁয়া ছাদের দিকে উঠে আসতে থাকলে অনেকে ভেজা কাপড়ে মুখ ঢেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে প্রার্থনায় বসেন, বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। একসময় বেঁচে থাকার আশা যখন ক্ষীণ হয়ে উঠলো, ঠিক সেই সময় আমরা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আসার খবর শুনি। কিছুক্ষণ পর, আমরা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীকে ছাদে উঠতে দেখি। অবশেষে মধ্যরাতের দিকে উদ্ধারকারী ক্রেনটি দেখতে পাই।’
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরের দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রথমে শিশু ও নারী এবং পরে অন্যদের ধীরে ধীরে ভবন থেকে বের করে আনেন।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘ আজ (২ মার্চ) আমি এরইমধ্যে ওয়াজিহার জন্মদিনের কেক অর্ডার করেছি। আমরা তার জন্মদিন উদযাপন করবো। তবে ওয়াজিয়া আমাকে বলেছে, বাবা, এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম।’
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ