ফুটবল
দরিভালের ব্রাজিলের নতুন শুরু, নাকি আরও একটি হতাশার রাত?
ফুটবল সম্রাট পেলে বলেছিলেন, ‘ব্রাজিলিয়ানরা ফুটবল খায়, ঘুমায় এবং পান করে।’কিন্তু ফুটবল যাদের কাছে এতোটা আবেগের, সেই দেশটিই এখন যেন কেবল ঐতিহ্যের কঙ্কাল। বলতে গেলে ব্রাজিলের ফুটবল খুব সম্ভবত নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম খারাপ সময় কাটাচ্ছে।
শুরুটা কাতার বিশ্বকাপ থেকে, মরুভূমির বুকে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পর ব্যর্থতার চোরাবালিতে ডুবতে শুরু করে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিতে। এরপর ব্রাজিলের কোচ নিয়োগের জন্য শুরু হয় এক মহানাটক। তিতের বিদায়ের পর ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) জানায় তারা নিয়োগ দিতে চায় বিদেশি কোচ। কিন্তু ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলাররা এ ব্যাপারে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যান। কেউ কেউ বিদেশি কোচ নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকলেও কেউ কেউ আবার বলে বসেন ব্রাজিল দলে বিদেশি কোচ ‘অপমানজনক’।
সব কিছু পাশ কাটিয়ে ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে নেইমার-ভিনিসিয়াদের শিষ্য বানানোর কথা ভাবতে শুরু করে সিবিএফ। আনচেলত্তির সাথে মৌখিক চুক্তিও নাকি হয়ে যায়! রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে চলতি মৌসুম শেষে কোপা আমেরিকার আগে তিনি দায়িত্ব নিবেন ব্রাজিলের। তবে এর মধ্যে আনচেলত্তি রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে বাড়িয়ে ফেলেন তার চুক্তির মেয়াদ। উপায় না পেয়ে স্বদেশী কোচ দরিভাল জুনিয়রকে নিয়োগ দেয় সিবিএফ। সেই দরিভালের ব্রাজিলের শুরু হচ্ছে নতুন যুগ। আজ রাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার লড়বে দরিভালের ব্রাজিল।
এবার তিতের চলে যাওয়া এবং দরিভালের আগমের মাঝ সময়টায় একটু নজর দেওয়া যাক। এই সময়ের ভিতরে ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন দুইজন। রামন মেনেজেস ও ফার্নান্দো দিনিজ। তবে এই দুজনের অধীনে ব্রাজিলের ব্যর্থতা যেন আরও গভীর থেকে গভীরে গেছে।
এই দুই কোচের অধীনে ব্রাজিল ২০২৩ সালে ৯ ম্যাচ খেলে হারের মুখ দেখেছে পাঁচটিতে, জয় মাত্র তিনটিতে, একটি ড্র। যা ১৯৬৩ সালের পর প্রথমবারের মতো এক বছরে সেলেসাওদের জয়ের চেয়ে হার ছিল বেশি।
সেই সাথে রয়েছে কিছু অস্বস্তিকর রেকর্ডও। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে পরাজয় বরণ করে ব্রাজিল। সেটিও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এছাড়াও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইয়ে টানা তিন ম্যাচে (কলম্বিয়া, উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে) পরাজয়ের স্বাদ পায় ফুটবল ইতিহাসের সব থেকে সফল দলটি।
গোল খাওয়ার কথা বলতে গেলেও কেবল ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ৬ ম্যাচেই ব্রাজিল হজম করেছে ৭ গোল। অথচ কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সব ম্যাচে ব্রাজিলের জালে প্রতিপক্ষ বল পাঠাতে পেরেছে কেবল ৫ বার।
সব কিছু হিসাব করে ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাস যে এখন তলানিতে এ নিয়ে হয়তো কোন সন্দেহ নেই। ওয়েম্বলিতে আজ আশাবাদী হওয়ার মতো রসদ খুব বেশি নেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দারিভাল পেয়েছে চোটজর্জর এক ব্রাজিলকে।
দলের প্রধান তারকা নেইমার জুনিয়র নেই গত অক্টোবর থেকেই। নেই প্রধান দুই গোলরক্ষক আলিসন বেকার ও এদেরসনও। এ ছাড়া কাসেমিরো, এদের মিলিতাও, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লিসহ বেশ কজন তারকা আছেন ইনজুরির তালিকায়।
এমনিতে বাজে পারফরম্যান্স তার উপর বড় তারকাদের না পাওয়া। দরিভালের উপর চাপটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি থাকবে। সেই চাপ সামলে দারিভাল ব্রাজিলকে নতুন শুরু এনে দিবেন নাকি উপহার দিবেন হলুদ ভক্তদের আরও একটি হতাশার রাত সেটিই দেখার অপেক্ষা।
ফুটবল
ফুটবলকে বিদায় জানালেন পেপে
সব ধরনের ফুটবল থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগালের ডিফেন্ডার পেপে। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পর্তুগালের ম্যাচটাই হয়ে রইল ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
সে ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল পর্তুগাল। ইউরোর মূলপর্বে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
পর্তুগালের হয়ে ১৪১ ম্যাচ খেলেছেন পেপে। জিতেছেন ২০১৬ ইউরো।
ফুটবল
বাফুফে থেকে পদত্যাগ করলেন সালাম মুর্শেদী
পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি ২০০৮ সাল থেকে পদটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়াও সালাম মুর্শেদী বাফুফের অর্থ কমিটি ও রেফারিজ কমিটির প্রধানও ছিলেন। এই দুটি পদ থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানায় বাফুফে। সালাম মুর্শেদী খুলনা–৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফুটবল
চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সংগঠক ও উদ্যেক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতালে থাকাকালীন সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন তিনি। অবশেষে ৭৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাইদুর রহমান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শোক জানিয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাইদুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে তহবিল তুলতেন সাইদুর রহমানরা। তারা ভারতে ঘুরে ঘুরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতেন। সেখান থেকেও তহবিল সংগ্রহ করতো এই দলটি।
একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন সাইদুর রহমান প্যাটেলরা। এখানে খেলে যে অর্থ উত্তোলন হবে, তা মুক্তিযুদ্ধের জন্য গঠিত তহবিলে প্রদান করা হবে; এমনই ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেসময়ের ভাবনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাইদুর রহমানের। সবশেষ সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে হয় তাকে। সেখানে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়ার পর আর দেশে ফিরতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটালেন।
সাইদুর রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পরে অবশ্য গেন্ডারিয়ায় চলে যায় তার পরিবার। গেন্ডারিয়াতেই বেড়ে উঠেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতে খেলতে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলেও নিজের জায়গা করে নেন। তিনি ঢাকার ইস্টএন্ডের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, প্রথম বিভাগে পিডব্লুডি’র হয়ে খেলেছেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
এম এইচ//