রংপুর
পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নাতির মারধরে নানার মৃত্যু
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে নাতি (ভাতিজির ছেলে) ও স্থানীয় বাজারের মাছ বিক্রেতা নাসিরুল ইসলাম (২২) ও তার স্বজন ফজর, রফিকুল, তরিকুলদের মারধরে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানা মজিবর রহমান (৬৫) মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নেয়া হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বৃদ্ধ মজিবরকে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে আলাল উদ্দীন বাদী হয়ে নাসিরুল সহ কয়েকজনকে আসামী করে আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সদর থানা পুলিশ।
নিহত বৃদ্ধের বাড়ি উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের (খাংকিপাড়া) এলাকায়। তিনি মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যর জমিতে দিনমজুরের কাজও করতেন। মারধরকারী নাসিরুল একই এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই নাসিরুল, ফজর, তরিকুল, রফিকুল পলাতক রয়েছেন।
পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে নিজ ভাতিজির ছেলে নাতি নাসিরুল ইসলামের কাছে স্ত্রী তনজিনা বেগমকে নিয়ে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা চাইতে যান। এসময় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন নাসিরুল। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে এক পর্যায়ে নাতি নাসিরুল মাছ কুটার ডাম্বেল (কাঠের তৈরী যা দিয়ে মাছ বিক্রেতারা মাছ কুটার সময় ব্যবহার করেন) দিয়ে তার নানার বুকে আঘাত করেন। এ সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে বাঁচাতে বৃদ্ধের কয়েকজন স্বজন এগিয়ে এলে তাদেরও বেধরক মারধর করে নাসিরুলসহ তার স্বজনেরা। এ সময় তারা ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধকে মেরে ফেলার হুমকী দিতে থাকেন। পরে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নেয়া হলে মেয়ে ফুলজান বানুর কাছে পানি খেতে চান বৃদ্ধ মজিবর রহমান। মেয়ের হাতে পানি খেয়েই রক্ত বমি শুরু হয় বৃদ্ধ মজিবরের। পরে তাকে স্থানীয় হাড়িভাসা বাজারে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তবে নিহতের স্বজনদের দাবী নাসিরুল মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বৃদ্ধ মজিবর রহমানের বুকে আঘাত করায় তার ক্ষত চিহ্ন বুকেই রয়ে গেছে।
নিহতের বড় মেয়ে ফুলজান বানু বলেন, আমার চাচাতো বোনের ছেলে নাসিরুলের কাছে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা পেতাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই পাওনা টাকা চাইতে যান আমার বাবা মা। তবে সে টাকা না দিয়ে উল্টো তাকে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার বাবাকে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বুকে আঘাত করে নাসিরুল। পরে তার সাথে ফজর, তরিকুল, রফিকুলেরা যোগ দেয়। আমার বাবাকে বাচাতে এলে তারা আমার ভাতিজা নুরুজ্জামান , চাচাতো ভাই সুজনকেও মারধর করে। পরে বাসায় এসে বাবা আমার কাছে পানি খেতে চান। পানি খেয়েই বাবা বমি শুরু করেন। এসময় গলা দিয়ে রক্তও বের হয়। পরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালেই মারা যান। আমি বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
নিহতের ভাতিজা সুজন আলী বলেন, আমি বড় আব্বার সাথেই ছিলাম। তিনি আমার ভাগিনা নাসিরুলের কাছে পাওনা টাকা চাইতে যান। পরে সে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বড় আব্বার বুকে জোড়ে আঘাত করতে থাকে। আমি তাকে বাচাঁতে গেলে নাসিরুলেরা আমাকেও মারধর করে। তাদের মারধরেই বড় আব্বার মৃত্যু হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিহতের মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে আলাল উদ্দীন বাদী হয়ে , নাসিরুল সহ কয়েকজনকে আসামী করে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দিয়েছেন। মামলা দ্রুতই আমলে নিয়ে আসামীদের ধরতে আমাদের অভিযান শুরু হবে।
জাতীয়
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে কাউন্সিলরসহ নিহত ৫
রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে রংপুর নগরীতে সংঘর্ষ চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি। নিহতের বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা।
নিহত অন্য চারজন হলেন নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খরশু মিয়া, যুবলীগ নেতা মাসুম, হারাধন রায়ের ভাগ্নে এবং অপরজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, সকাল থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেন নগরীর টাউনহল চত্বরে। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরে জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে পুনরায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আটকে পড়েন পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। পরে পায়রা চত্বর থেকে পালিয়ে কালিবাড়ি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পড়েন হারাধন রায় হারা। সেখানেই এলোপাতাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলেও পুনরায় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন তারা। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনা জানার পর হারাধনের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমান, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের রিপোর্টার ফখরুল শাহীন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনি, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, অনলাইনের মিজানসহ ১০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর করেছেন আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য, রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন, গংগাচড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন, মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দফতরে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এএম/
দেশজুড়ে
রংপুরে আ.লীগের এমপির বাসায় আগুন, লুটপাট
রংপুরের বদরগঞ্জে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক) ও পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক চৌধুরীর (টুটুল) বাসায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আগুন দেওয়ার পর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রথমে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়েছেন। পরে বিক্ষোভকারীরা একত্রিত হয়ে স্থানীয় দুপুর ১২টার দিকে আগুন দেয়। বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে ওই দুই বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছে।
অন্যদিকে রংপুর শহরের সুপার মার্কেটের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রোববার (৪ আগস্ট) সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (রমেক) উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৩২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এনএস/
দেশজুড়ে
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রংপুর, নিহত ২
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
রোববার (৪ আগস্ট) সকালে শহরের সুপার মার্কেটের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত ও নিহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (রমেক) উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৩২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
এনএস/