বাংলাদেশ
শিক্ষকেরা স্যাঁতসেঁতে ফ্লোরে , কর্মকর্তারা টাইলস করা ফ্লোরে
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, সুপেয় পানির অভাব, স্যাঁতসেঁতে মোজাইকের ফ্লোরসহ নানা অব্যবস্থাপনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডরমেটরি। ডরমেটরিতে নানা অব্যবস্থাপনার মাঝেও বিলাসিতার শেষ নেই কর্মকর্তাদের। শিক্ষকেরা মোজাইকের স্যাঁতসেঁতে ফ্লোরে থাকলেও কর্মকর্তা থাকেন টাইলস করা ফ্লোরে।
এছাড়া কর্তৃত্ব কাটিয়ে রুমে এসির ব্যবস্থাও করে নিয়েছেন এক কর্মকর্তা। ডরমেটরির এসব অসুবিধা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতেও বিব্রত শিক্ষকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা যায়, ৫ তলা বিশিষ্ট দু’টি ডরমেটরিতে ২৮জন শিক্ষক ও ১০জন কর্মকর্তাদের ভাগাভাগি করে থাকেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তার মধ্যে নিচ তলার তিনটি, ৩০১ ও ৪০২ নং ফ্ল্যাট কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ডরমেটরি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের অধিকাংশ দেয়াল বিবর্ণ। বিভিন্ন কক্ষের দরজা অকেজো, মোজাইক করা ফ্লোর স্যাতঁসেঁতে। এদিকে শিক্ষকদের কক্ষে নানা সংকট থাকলেও কর্মকর্তারা থাকেন টাইলস করা রুমে। কর্তৃত্বের সুবাদে কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের ফ্ল্যাট টাইলস করে নিলেও শিক্ষকদের ফ্ল্যাটগুলো শেওলাপড়া পুরনো মোজাইক অবস্থায় রয়েছে। ডরমেটরি-২ এর ১০১ নং রুমে টাইলস করা রুমে থাকছেন কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি আবু তাহের, যা ৫ বছর আগে টাইলস করে নেন প্রকেীশলী দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল হাসান।
এছাড়া ডরমেটরির দু’টির বাকি ফ্ল্যাটগুলোর নিচ তলায় টাইলস করার অনুমতিও পেয়েছে। যেখানে কর্মকর্তারা সিট বরাদ্দ পাবে। ডরমেটরি-১ এর ৩০১ নং রুমে এসির ব্যবস্থা করে নিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম। অথচ ডরমেটরিতে এসি ব্যবহারের কোন অনুমতিই নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভবনের পিছনের অংশে একাধিক ফ্ল্যাটের গ্রীল ভাঙ্গা। নিরাপত্তার জন্য ভবন দু’টির সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলেও তাও প্রায় অকেজো। একজন নিরাপত্তাকর্মী দায়ত্ব পালন করলেও সচেষ্ট নয়। গত ২৫ মে রাতে ডরমেটরি-১ এর ২০২ রুমের গ্রীল ভেঙ্গে সহকারী প্রক্টর শারমিন সুলতানার মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটে। পরে নিরাপত্তার আশঙ্কায় ডরমেটরি ছেড়েছেন ওই শিক্ষক।
ডরমেটরির আবাসিক শিক্ষকেরা বলেন, একটি শিক্ষক ডরমেটরিতে যে সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার কোনটি নেই ডরমেটরিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতে হয়। ডরমেটরির ব্যবস্থাপনায় নানা সংকট থাকলেও কর্মকর্তারা টাইলস করা, এসি রুমে থাকছে। অথচ আমাদের স্যাঁতসেঁতে মোজাইকের ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। যা খুবই লজ্জাজনক ও বিব্রতকর।
এআইএস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এখন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মীরা যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে কথাও বলেছি।
নিজের রুমে এসি ব্যবহারের বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বলেন, আমি প্রশাসনকে জানিয়ে এসি ব্যবহার করছি। এটা আমার পারসনাল, বিদ্যুাৎ বিল পেমেন্ট করি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী শহিদুল বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা অগ্রধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করি। তেমনি নিচের তলার রুমগুলোতে শেওলা পড়ে যায়, তাই অগ্রধিকার পেয়েছে। এছাড়া আমরা মাঝেমাঝেই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। নিচের রুমে টাইলস করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেসময় বাজেটের ছোট একটি অংশ নিয়ে টাইলস করিয়েছিলাম। এটি আমার জন্য তো করিনি, এখানে যে বরাদ্দ পাবে সে থাকবে।
এদিকে শিক্ষকদের চাহিদা প্রকৌশলী দপ্তর বরাবর দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী। কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি আবু তাহের বলেন, নিচের তলায় থাকা খুবই অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন। ৪দিন না থাকলে ফ্লোরে শেওলা পড়ে যায়। তাই টাইলস করার জন্য আবেদন করা হয়।
এবিষয়ে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষকেরা এখানে যে অবস্থা তা অমানবতার। আগে ডরমেটরি বিষয়গুলোর সাথে যুক্ত ছিলাম না। এখন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি এটি বলতে পারি উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে ডরমেটরির যে সমস্যাগুলো আছে তা অচিরেই সমাধান করব। তবে ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করব বৈশ্বিক করোনার কারণে একটু সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এটা অস্বীকার করার উপায় নাই শিক্ষকদের যে সুযোগ সুবিধা দরকার তা ডরমেটরিতে নাই।
কর্মকর্তাদের আলাদা সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একই ভবনে থাকা সত্ত্বেও যদি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈষম্য থাকে তা নিরসন এবং যদি কর্মকতর্রা শিক্ষকদের থেকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে তাহলে কেন এমনটা ঘটছে তা দেখব।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম. আবদুল মঈনের মুঠুফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকেঁ পাওয়া যায়নি।
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ