জাতীয়
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরির আড়ালে চলছে জঙ্গি সংগঠনের কাজ
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার রিক্রুটারসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রানা শেখ ওরফে আমির হোসাইন, মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি স্মার্টফোন ও দুইটি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়। স্মার্টফোনে তাদের প্রশিক্ষণের ছবি ও ভিডিও আছে।
সোমবার (১৩ মে) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) গোয়েন্দা তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রানা শেখ জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার রিক্রুটার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
রানা শেখ ইতোমধ্যে তিনজনকে সংগঠনে রিক্রুট করে প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে কুকি-চিনের আস্তানায় পাঠান। এমনকি প্রশিক্ষণের খরচ বাবদ কুকি-চিনের কাছে লক্ষাধিক টাকাও পাঠান এই রানা।
ডিবি প্রধান বলেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত রানা ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা আব্দুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহের ভালুকায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য হিসেবে সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৩ সালে বাবা, মামা ও ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন।
গ্রেপ্তার মশিউর রহমান প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। ২০০২-২০০৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে আব্দুর রউফের মাদ্রাসায় সামরিক ও আন আর্মড কমব্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে অপরাপর হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে চার বছর সাজা খাটেন।
২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরি পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, পিটি-প্যারেড শেখা, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমা তৈরি এবং ব্যবহারসহ সিকিউবি বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য দুই বছর বান্দারবানে কুকি-চিনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করেন। এই কষ্টকর প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে সমতলে ফেরত আসেন মশিউর।
আর হাবিবুর রহমান ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে রানার অধীনে কাজ করতেন। রানা একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে ইতোমধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজি, আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ গঠন করেন।
এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা বিশ্বাস করেন যে, ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক একটি যুদ্ধ হবে। কোন এক সময় দাজ্জালের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুসলিম নিধনের বড় রকমের চেষ্টা করা হবে। ইসলামকে সমুন্নত রাখতে এবং মুসলমানদের সুরক্ষা দিতে ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ নামক এ যুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করবেন। ফলে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ অথবা গাজীদের মতো মর্যাদা পাবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।
পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ধারাবাহিক তৎপরতায় সফল জঙ্গি অভিযানের কারণে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি সমতল এড়িয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ খুঁজছিল। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের পথভ্রষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত কুকি-চিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শারক্বীয়ার।
অর্থের বিনিময়ে কুকি-চিনের সন্ত্রাসীরা শারক্বীয়ার সদস্যদের বৈরী পরিবেশে সারভাইভাল, আন আর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল পরিচালনা, এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তৈরি এবং ব্যবহার, সিকিউবিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গিদের খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, নিজ দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে ধর্ম যুদ্ধে জড়িয়ে শহীদ বা গাজী হওয়ার অপেক্ষায় থেকে রসদ সামগ্রী এবং কর্মী সংগ্রহে তৎপর ছিল সংগঠনটি।
তিনি আরও বলেন, সংগঠনটিতে ৫৩ জনের মতো সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ৪৯ জনই ইতোমধ্যে ধরা পড়েছেন। গ্রেপ্তার রানা বর্তমানে সংগঠনের প্রধান রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
সারাদেশ থেকেই তাদের সদস্য রিক্রুটের পরিকল্পনা ছিল। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে হয়তো আরেকটা গ্রুপকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো।
গ্রেপ্তারদের চার দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে জড়িত আর কারা আছে জানার চেষ্টা করব। জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
কেএস/
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ