খুলনা
দুর্ঘটনায় পা হারানো জান্নাত পেয়েছে জিপিএ-৫
চলতি বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো এক শিক্ষার্থী। মিফতাহুল জান্নাত যশোরের শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে অংশ নেয়া এ ছাত্রী চিকিৎসক হতে চায়।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জান্নাতের বাবা উপজেলার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি জমি বিক্রি দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মেয়েকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের ভেলোরে নিয়ে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) কৃত্রিম পা লাগানো হয় জান্নাতের।
জান্নাতের পরিবার আরও জানায়, চিকিৎসার পেছনে রফিকুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়, যার ফলে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় তার। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে রফিকুলের পরিবার। মিফতাহুল জান্নাত তার বড় সন্তান। ছোট সন্তান মুন্তাকিম রাফি উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
রফিকুল জানান, স্কুলের বেতন ও বাড়িতে টিউশনি করে মাসে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয় তার। এ দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।
জান্নাত বলেন, ‘জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমি খুব খুশি। আমি ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্টই হোক, ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হব। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।’
জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, ‘মিফতাহুল জান্নাত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি।
‘ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়। তা দিয়েই ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। জান্নাত ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক, আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব।’
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘মিফতাহুল জান্নাত খুব মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও সে মনোবল হারায়নি। এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া।
যেভাবে দুর্ঘটনা
২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে জান্নাত বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। সে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল। এমন সময় ভ্যানটি নাভারণ বাজারের সালেহা সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে উল্টো দিক থেকে আসা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়।
দুর্ঘটনায় জান্নাত মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। ওই সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জান্নাতকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন।
কেএস/
খুলনা
কুষ্টিয়া কারাগার থেকে পালাল অর্ধশতাধিক আসামি
কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক আসামি পালিয়েছে গেছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়েন কারারক্ষীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনার পর সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
তবে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা গণমাধ্যমে বলছেন, ১২-১৩ জনের মতো আসামি পালিয়েছেন। পলাতকদের তালিকা করার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী জামিন পান। দুপুর আড়াইটার দিকে বের হওয়ার কথা ছিল। তাদের সঙ্গে বের হতে হট্টগোল শুরু করেন কারাবন্দীরা। এ সময় কারারক্ষীরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালান। তবে এর আগেই অর্ধশত আসামি পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার আবু মুসা গণমাধ্যমে জানান, কারাগার থেকে ঠিক কত জন কয়েদি পালিয়ে গেছে তা সঠিক হিসাব জানা যায়নি।
এএম/
খুলনা
মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহত, আহত ১০
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে মাগুরা শহরের ঢাকা রোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় জেলা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্যসহ ১০ জন।
রোববার সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখিন হয়। ঘটনাস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলি করলে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী নিহত হন।
জেলা শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম গণমাধ্যমকে জানান, ‘রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।’
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমর প্রশাদ বিশ্বাস জানান, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেডএস/
খুলনা
কনস্টেবল সুমন হত্যায় মামলা, অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামি ১২০০
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় খুলনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামী হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
লবণচরা থানার এসআই মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে লবণচরা থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান লবণচরা থানার ওসি মমতাজুল হক।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার বিকেলে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।
নিহত সুমন ঘরামীর বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নগরীর বয়রা এলাকায়। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকায় পিটুনিতে নিহত হন তিনি। সমুনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস। তাদের ৬ বছর বয়সি স্নিগ্ধা নামে এক মেয়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত্তি দিয় পুলিশ জানায়, বিকেলে খুলনায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার পরে আবার সোনাডাঙ্গা এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল সুমন গুরুতর আহত হন। পরে রাতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জানা গেছে, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের আরও ৩০ সদস্য।
এসি//