বাংলাদেশ
বড়লোক হওয়ার নেশায় মোটরসাইকেল চুরি
মোটরসাইকেল চুরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চক্রের মুলহোতা নূর মোহাম্মদ (২৬), অন্যতম সহযোগী রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
গেলো মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গণমাধ্যমকে পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা বড়লোক হওয়ার নেশায় গেলো আট বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের।
ডিবি জানায়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করে। সুযোগ বুঝে নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট করা বাইকটি স্টার্ট করা মাত্রই পালিয়ে যেত তারা। এভাবে পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে নুর মোহাম্মদ। এরপর কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেল কম দামে বিক্রি করত তারা।
ডিবি আরও জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের এ পাঁচ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়।
আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নুর মোহাম্মদ ও রবিনকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিন সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের সংখ্যাই বেশি।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চুরির জন্য তাদের টার্গেটেড এরিয়া ছিল পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত তারা। গেলো কয়েক বছরে এ চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চেহারার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। এরপর অভিযান চালিয়ে প্রথমে চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নুর মোহাম্মদের তথ্য অনুযায়ী যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে সজল, মনির এবং আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার নূর মোহাম্মদের বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সে মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করত। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়। নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাটে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করে। এরপর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।
তিনি বলেন, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষদের চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিল।
গ্রেপ্তার সজলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, সে নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনি বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়। গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্য ভাগ করে নিত।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। এ পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে।
ডিবি প্রধান বলেন, বিভিন্ন থানায় নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এসি
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ