পরামর্শ
সারাদিনে হাতে মোবাইল ফোন? যে যে বিপদ ডেকে আনছেন
স্মার্টফোন বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা সবাই স্বচ্ছ কাঁচের মতো ত্বক চাই। সে জন্য আমরা যে কোনো প্রান্তে যাব। হোম হ্যাক থেকে ড্রাই ফেস প্যাক, লেটেস্ট স্কিন ট্রেন্ড অনুসরণ করে সেই সব দামী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট- আমরা সবই করি। কিন্তু যদি সেই ডার্ক সার্কেলগুলি অব্যাহত থাকে এবং আপনার ত্বক আগের মতোই ফ্যাকাশে থাকে, তাহলে সমস্যাটি অন্য কোথাও থেকে যায়। আপনি নিশ্চয়ই তা পছন্দ করবেন না? তাহলে সমস্যাটি আসলে কোথায়? তবে আমরা আপনাকে বলি যে আপনার স্মার্টফোনের সমস্যা। হ্যাঁ, হতবাক হলেও হতে পারেন! তবে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গেই আটকে রয়েছে আপনার ত্বকের সুস্থতা।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু একই রকম ক্ষতি করতে পারে ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে বিচ্ছুরিত নীলচে রশ্মি।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের মত, ‘বৈদ্যুতিন যন্ত্র থেকে বিচ্ছুরিত নীল আলোর প্রভাব, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। যার ফলে চোখ এবং চোখের চারপাশে স্পর্শকাতর ত্বকে বলিরেখা, দাগ-ছোপের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।’
১. ডার্মাটাইটিস
ডার্মাটাইটিস ত্বকের বর্ণনা করার জন্য একটি শব্দ। এই সমস্যাটি সাধারণত আপনার ত্বককে লাল করে এবং চুলকায়। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন আকারে হতে পারে। কখনও কখনও, ফোলা ফুসকুড়ি, ফোসকা বা ফ্লেক-অফও হতে পারে। যারা অ্যালার্জিতে ভুগছেন তাদের মধ্যে সেল ফোনের বিকিরণ অ্যান্টিজেনকে আরও ত্বরান্বিত করে।
২. কুঁচকানো ঘাড় / ঘাড়ের চামড়া কুঁচকে যাওয়া –
দীর্ঘ সময় ধরে একটানা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ে বলিরেখা হতে পারে এবং এটি বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ। ক্রমাগত এবং নিয়মিত তাকিয়ে থাকা ধীরে ধীরে ঘাড়ের কোলাজেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি আরও ঘাড়ের বলিরেখা সৃষ্টি করে।
৩. ডার্ক সার্কেল
এটি সবচেয়ে পরিচিত, সর্বাধিক পর্যবেক্ষণ করা ত্বকের প্রভাবগুলির মধ্যে একটি। সেল ফোন থেকে আসা নীল আলো বা ব্লু রে’জ একজনের ঘুমের ধরণকে প্রভাবিত করে। একজন মানুষ যত কম ঘুমায়, তার চোখের নিচে ব্যাগ এবং কালো দাগের সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
৪. ত্বকের অ্যালার্জি এবং ব্রণ
হ্যাঁ! এটা আপনার কাছে নতুন না মনে হতেই পারে, কিন্তু এটা সত্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর প্রধান বাহক। বিশেষজ্ঞরা এমনকি মোবাইলকে পাবলিক টয়লেটের চেয়েও বেশি অস্বাস্থ্যকর বলছেন। ফোনগুলি সারাদিন অসংখ্য পৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকে যা ক্ষুদ্র জীবাণুগুলিকে স্থানান্তরিত করে। আমরা কখনই বুঝতে পারি না যে আমরা আমাদের শরীরে কতগুলি জীবাণু প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছি, যার ফলে ত্বকে অ্যালার্জি এবং ব্রণ হয়।
এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?
# যে ধরনের ডিজিটাল ডিভাইজ় ব্যবহার করুন না কেন, তার পর্দার উপর অবশ্যই স্ক্রিন প্রোটেক্টর থাকতে হবে। যা তীক্ষ্ণ নীল আলো থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করবে।
# এই ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতে যদি একটানা মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ না করে, মাঝেমধ্যে বিরতি নেয়া ভালো।
# বেশিক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকলে শরীরে জলের ঘাটতি হতে পারে। ত্বক শুষ্কও হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। ত্বকে ময়েশ্চারাইজ়ার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও ত্বকের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।
জেএইচ
পরামর্শ
মুখে ঘা দূর করতে মেনে চলুন ৫ উপায়
খাওয়া দাওয়ার সময় বা কথা বলার সময়ে মুখে ঘা হলে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা দীর্ঘদিন সহ্য না করাই উত্তম। এই সমস্যা কিন্তু একসময় মুখে আলসারেরও লক্ষণ হতে পারে। মুখের আলসারকে সামান্য ঘা ভেবে অবহেলা করলেই বিপদে পড়বেন। কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোন জনিত সমস্যার কারণে মুখের ভিতরে আলসার হতে পারে। অনেকে আবার ব্রেসেস পড়েন, তাঁদেরও মাঝেমাঝে এই সমস্যা হয়। শরীরে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি, আয়রন, জিঙ্ক, ফোলেটের ঘাটতির কারণেও মুখের ঘা থেকে আলসার হতে পারে।
মুখে ঘা হলে কিছুদিনের জন্য ঝাল, টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। না হলে মুখে জ্বালা অনুভূত হবে। মুখে ঘা হলে মুক্তি পেতে পারেন ৫ উপায়ে ।
১) মুখের ঘা কমাতে হালকা গরম পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে কুলকুচি করুন। এতে আরাম পাবেন। দিনে তিন থেকে চার বার করলে ব্যথা ও ঘা দুটোই কমে আসবে।
২) ঘায়ের জায়গায় সামান্য মধু লাগিয়ে রাখতে পারেন, ভালো উপকার পাবেন। কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর মধু লাগালে সুফল পাবেন।
৩) ঘায়ের জায়গায় বিশুদ্ধ নারিকেল তেল লাগিয়ে রাখলেও বেশ আরাম পাবেন।
৪) যে কোনও ঘায়ের জন্য ভালো প্রাকৃতিক ঔষধ হতে পারে হলুদ। মুখে যে জায়গায় ঘা হয়েছে, সেই স্থানে হলুদ বাটা লাগিয়ে রাখতে পারেন। কিছু দিন ব্যবহার করলেই ঘায়ের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা কমে আসবে।
৫) বেকিং সোডা ঘা সারাতে দারুণ উপকারী একটি জিনিস। এক কাপ পানিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করলে ঘা কমে যাবে। এছাড়া বেকিং সোডার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। সেই পেস্ট ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখলেও বেশ উপকার পেতে পারেন।
জেডএস/
পরামর্শ
হাড়ের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য শিশুর খাদ্যতালিকায় যা রাখবেন
সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় থাকেন সব বাবা-মাই। শিশু কী খাবে, কতটা খাবে আর কখন খাবে- এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা নিয়ে তারা সারাক্ষণ অস্থির। শিশু রোজ যা যা খাচ্ছে, তার থেকে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছচ্ছে কি না এটি জানাও খুব জরুরি। বাড়ন্ত শিশুকে হাড়ের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য সুষম আহারই দিতে হবে। আর বিশেষ করে শিশুর খাদ্যতালিকায় রোজ ক্যালশিয়াম রাখতেই হবে। রোজ কোন কোন খাবার তালিকায় রাখলে শিশুর ক্যালশিয়ামের অভাব হবে না, তা জেনে নিন।
দুধ : সুষম আহারের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় দুধের কথা। এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপিকা সুর জানাচ্ছেন, দুধের মধ্যে থাকা ক্যালশিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়। শিশুকে রোজ নিয়ম করে দুধ খাওয়ানো উচিত। তবে যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে বা দুধ হজম না হয়, তা হলে পনির, দই, ছানা, মাখন এ সব রাখুন তার খাদ্যতালিকায়।
মটরশুঁটি : মটরশুঁটির দানায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম। যা তার হাড়ের পুষ্টিতে বিশেষ সহায়ক। সাধারণত, শীতের সব্জি এটি, তাই শীতেই তার খাবারে মটরশুঁটি রাখতে হবে। ব্রোকোলিও তাই। অনেক শিশুই ব্রোকোলি খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে ব্রোকোলি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দিন। কয়েক টুকরো চিকেন সিদ্ধ দিয়ে দিন তাতে। অল্প করে মাখন দিয়ে গরম স্যুপ, সোনামুখ করে খেয়ে নেবে খুদে।
পিনাট বাটার : পিনাট বাটারেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম আছে। খেতে ততটা সুস্বাদু নয় বলে হয়তো শিশু খেতে চাইবে না। মায়েরা সে ক্ষেত্রে পাউরুটির মুচমুচে টোস্ট বানিয়ে তার মধ্যে পিনাট বাটার দিয়ে দিন। গরম আটার রুটি রোল করে ভেতরে পিনাট বাটার দিয়ে শিশুকে প্রাতরাশে দিন। সঙ্গে দিন ফ্রুট স্যালাড। ফল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নুন ও গোলমরিচ দিয়ে দিন। ফল এমন ভাবে সাজিয়ে দিন যে দেখেই খেতে চাইবে শিশু।
আমন্ড বাটার : বাড়িতে আমন্ড বাটারও এনে রাখতে পারেন। সাদা মাখন না দিয়ে পাউরুটিতে আমন্ড বাটার মাখিয়ে দিন। আমন্ড বা কাঠবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ক্যালশিয়াম। ১/৩ কাপ কাঠবাদামে প্রায় ২৬৪ মিলিগ্রাম মতো ক্যালশিয়াম মেলে। সন্তানকে দুধের সঙ্গেও দিন কয়েক টুকরো কাঠবাদাম। দুধ-কর্নফ্লেক্স খেলে উপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
মাছ : মাছে প্রচুর ক্যালশিয়াম আছে। শিশুর হাড়ের বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিতে হলে তার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন মাছ। কাতলা, ভেটকি, কই মাছে ভাল পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম কাতলা মাছ খেলে ৫৩০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে, ১০০ গ্রাম ভেটকিতে প্রায় ৪৮০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। ৫০ গ্রাম করে, অর্থাৎ দিনে দু’পিস মাছও যদি খুদে খায়, তা হলেও রোজের ক্যালশিয়ামের অনেকটাই পূরণ হবে।
ফলের রস : টাটকা ফলের রসও দিন শিশুকে। এক গ্লাস কমলালেবু বা মুসম্বির রস থেকে ৬০ মিলিগ্রামের মতো ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে। প্রাতরাশে যে দিন দুধ দেবেন না, সে দিন ফলের রস দিন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাবার দিলে শিশুর অরুচি হবে না। মনে রাখতে হবে, শিশুকে একদম চা-কফি বা নরম পানীয় দেওয়া চলবে না। কারণ ক্যাফিন ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়। তখন যতই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান না কেন, তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। বেশি লবণ দেয়া খাবার, বেশি তেল ও মশলা দেওয়া খাবার শিশুকে দেয়া চলবে না।
জেএইচ
পরামর্শ
কিডনিতে পাথর হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে কারা?
অফিসে সারাদিন বসে যারা কাজ করেন, তাদের বিপত্তি বেশি। একেই সারাক্ষণ বসে থেকে পেট-কোমরের মেদ বাড়ে। তার উপরে শরীরচর্চার অভ্যাস নেই, পানি কম খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধতে থাকে কম বয়স থেকেই। চিকিৎসকেরা বলেন, কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হল পানি কম খাওয়া। তা ছাড়া স্থূলত্ব, বিশেষ কিছু ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলেও কিডনিতে পাথর জমতে পারে। এখন জেনে নিন, এ ক্ষেত্রে কাদের ঝুঁকি বেশি।
কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন— রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতেও এর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখা। কিডনিতে পাথর জমলে ভয়ের খুব বেশি কারণ না হলেও দ্রুত সেই পাথর শরীর থেকে বার না হলে সমস্যা বাড়তে পারে।
ঝুঁকিতে কারা?
১) দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খেতে হবে।
২) বেশি প্রাণিজ প্রোটিন যারা খাচ্ছেন, তাদেরও ঝুঁকি বেশি। খুব বেশি তেলমশলা দিয়ে কষিয়ে মাংস বা মাছ, ডিম প্রায় রোজ খেতে শুরু করলে তখন বিপদ বাড়বে। এমনকি, বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়বে।
৩) অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা থেকে ভ্যাসোপ্রেসিন নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মূত্রের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে।
৪) বাতের সমস্যা থাকলেও ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে দেখা গিয়েছে কিছু ক্ষেত্রে।
৫) রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে, খনিজ উপাদানগুলির ভারসাম্য বিগড়ে গেলে ঝুঁকি বাড়বে।
৬) খাদ্যে লবণ তথা সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৭) বেশি মাত্রায় মদ্যপানও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নরম পানীয়, বেশি মিষ্টি দেয়া প্যাকেটজাত পানীয় বেশি খাওয়াও বিপদের কারণ হতে পারে।
কেএস/