বাংলাদেশ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে আফগানিস্তান, নিহত ১৮২
আফগানিস্তানে চলতি মাসে বন্যায় ১৮২ জন মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। ভারি বর্ষণের পর মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় আফগান প্রদেশগুলোতে সৃষ্ট বন্যায় এই হতাহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।
আজ শুক্রবার (২৬ আগস্ট) আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই মাসে আফগানিস্তানে বন্যায় ১৮২ জন নিহত এবং ২৫০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৩ হাজার ১০০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার গবাদি পশু নিহত হয়েছে। যা দেশের অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের পক্ষে একা এই বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আর তাই পুরো বিশ্ব, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ইসলামিক দেশগুলোকে আমাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করছি।
আফগানিস্তান চলতি বছর বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভুগছে। যার মধ্যে খরাসহ গেলো জুন মাসে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের ঘটনাও রয়েছে। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে এক হাজার জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
২০ বছর পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এছাড়া তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অবশ্য বৈশ্বিক মানবিক সংস্থাগুলো কয়েক মাস ধরে আফগানিস্তানে সহায়তা প্রদান করেছে। কিন্তু এসব সংস্থা সতর্ক করেছে, হাজার হাজার গৃহহীন এবং আশ্রয় বা বিশুদ্ধ পানির সংকটজনিত মানবিক বিপর্যয় এড়াতে তাদের আরও কাজের সুযোগ এবং তহবিল প্রয়োজন।
আলজাজিরা বলছে, আফগানিস্তানের মধ্য লোগার প্রদেশের খোশি জেলায় সাহায্য কর্মীরা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শক্তিশালী বন্যার কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে ফসলের ক্ষেত কাদায় ভরে গেছে এবং মৃত পশুর মৃতদেহ স্তূপ হয়ে পড়ে আছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা জানিয়েছে, জেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কমপক্ষে ছয় শিশুসহ ২০ জন নিহত হয়েছে এবং আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।
ইউনিসেফ আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান অ্যান কিন্ড্রাচুক বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর বলেছেন, মানুষ সবকিছু হারিয়েছে, তারা রাতারাতি সবকিছু হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লোকেরা নিশ্চিত নয় যে পরবর্তীতে কী হবে, তারা এই শীতে কীভাবে খাবে, তাদের জীবিকা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
গ্রীষ্মকালে প্রায়ই উত্তর এবং পূর্ব আফগানিস্তানে ভারি বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যায়। গেলো বছর রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) উত্তর-পূর্বে প্রত্যন্ত কামদেশ জেলায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া নিখোঁজ হয় আরও বহু মানুষ।
এর আগে ২০২০ সালে পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকর শহরের বড় অংশজুড়ে বন্যার কারণে উত্তর ও পূর্ব আফগানিস্তানে কমপক্ষে ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল।
এছাড়া প্রতিবেশী পাকিস্তানে কয়েক ডজন জেলা প্রবল বৃষ্টির পর সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে। গেলো জুনের মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে কমপক্ষে ৪৩৭ জন নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার লোককে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, বন্যা এবং মুষলধারে বৃষ্টির কারণে প্রতি বছর অসংখ্য আফগান নাগরিক মারা যায়। বিশেষ করে দরিদ্র গ্রামীণ এলাকায় দুর্বলভাবে নির্মিত বাড়িগুলো প্রায়ই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।
বিপ্লব আহসান
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ