বরিশাল
বরিশালে চলছে ঢিলেঢালা লকডাউন
দ্বিতীয় দফা লকডাউনের প্রথম দিনে বরিশালে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। যে যার মত অবাধে রাস্তায় চলাফেরা করছে। কেউ আবার কেনাকাটায় করে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকে খুলে বসে আছে। কেউ দোকানের পুরো সার্টার, কেউ আবার অর্ধেক সার্টার খুলে দেদারসে মালামাল বিক্রয় করছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সদর রোডে মানুষের সমাগম, পোর্ট রোডে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাবেচা, বাজার রোড এলাকায় প্রায় দোকানই খোলা রয়েছে। তবে সদর রোডসহ অন্যান্য রোডের শপিংমল, মার্কেট, লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
নগরীতে ক্রেতা ও পথচারীদের সমাগম ছিলো চোখে পড়ার মতো। এদের মধ্যে কারো মুখে মাস্ক, কারো থুতনির নিচে মাস্ক ঝোলানো, আবার কারো মুখে মাস্ক নেই। গণপরিবহন ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলেও সড়কগুলোতে রিকশা, অটোরিকশা, সিনএনজি, মাহেন্দ্রা অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক চলাচল করছে।
তবে মোবাইল কোর্ট অভিযানের টের পেলেই মুহূর্তের মধ্যে রাস্তা ও দোকানপাট ফাঁকা হয়ে যায়। পথচারীরা যে যার মতো গলির ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে বরিশাল নগরীতে ঢিলেঢালাভাবে চলছে সরকার ঘোষিত লকডাউন।
রিকশাচালক ইদ্রিস হাওলাদার জানান, নামে লকডাউন, কামে নাই। সব মানুষ রাস্তায় নামছে বলেই রিকশা নিয়ে নামছি। রিকশা না চালাইলে খামু কি?
বরিশাল মেট্রোপলিটন (ট্রাফিক) পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার জানান, সরকারি নির্দেশনায় আন্ত:জেলা পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে উল্লেখ করা থাকলেও ক্ষুদ্র পরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উল্লেখ নেই। তাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নগরীর মধ্যে এসব পরিবহন চলাচল করছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানান, সরকার ঘোষিত একসপ্তাহে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও অবরুদ্ধ (লকডাউন) বাস্তবায়ন করার জন্য কঠোর অবস্থায় রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগর ও উপজেলা শহরগুলোতে করা হচ্ছে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান। সকল মানুষদের সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও মাস্ক না পড়ায় তাদের কে জেল-জরিমানা করা অব্যাহত রয়েছে। অভিযানের সময় পথচারীদের যাদের মাস্ক নেই তাদের কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করছে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
বরিশাল নগর পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, দেশ করোনামুক্ত রাখতে সরকারের ঘোষিত লকডাউন সঠিক ভাবে মানতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নগর পুলিশ। তাই সচেতনতা বাড়াতে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সোমবার মটরসাইকেল শোভাযাত্রা করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবং অপ্রয়োজনীয় ভাবে রাস্তায় চলাফেরা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলার ১০ উপজেলা ও মহানগরীতে রোববার (০৪ এপ্রিল) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩২৮ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪ হাজার ৯৩৪ জন আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই জেলায় মারা গেছেন ৯২ জন৷
উল্লেখ, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় এর আগে রোববার (০৪ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপন জারি করে সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) রাত ১২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
বিদেশগামী/বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলো (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
এস
বরিশাল
ববিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিটিংয়ে ছাত্রলীগের হামলা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা গেট থেকে বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আহতদের মধ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১০ আহত শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ববি সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ২০ শিক্ষার্থী ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে মিটিং করছিলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একে আরাফাতের নেতৃত্বে ২০-৩০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠি, রড ও পাইপ নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগের মাহমুদুল হাসান তমাল, আল সামাদ শান্ত, খালেদ হাসান, শাহরিয়ার সান, সাব্বির, জাইফ, সাইফ, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামকে আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি। হামলার পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের মিটিংকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের সামনেই আমাদের বেধরক মারধর করে ছাত্রলীগ।
বরিশাল নগর পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিটিং শেষ দিকে ছিলো। তখন কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনকে সমর্থন জানানো কিছু শিক্ষার্থী গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও অন্য এক গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তারা ছাত্রলীগ কিনা তা বলতে পারবো না, তবে তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত একে আরাফাতের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অংকন করতে গেলে হামলার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
কেএস/
দেশজুড়ে
বিপৎসীমার ওপরে বরিশালের ১০ নদীর পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বরিশাল নগরীসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানি প্রবাহ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাউবো জানায়, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে বিষখালী নদীতে ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা নদী ৮৯ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে মেঘনা ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে পায়রা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার, বরগুনা সদর উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটা উপজেলা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও উমেদপুর পয়েন্টে কচা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদী তীরবর্তী বাসিন্দা আরশাদ আলী বলেন, মঙ্গলবার থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। যারা বেড়িবাঁধের বাইরে থাকেন তাদের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এজন্য বাধের কূলে এক ঘরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। পানি কমলে ঘরে ফিরবেন।
এদিকে নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় কেবল উপকূলীয় এলাকা নয়। জেলা শহরের ভিতরেও জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে।
আই/এ
বরিশাল
বরিশাল থেকে লঞ্চ ও বাস চলাচল শুরু
বরিশালে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা এবং মেট্রেপলিটন এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ দিন বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে; সড়ক পথেও চলছে যাত্রীবাহী বাস।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে বুধবার (২৪ জুলাই) বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করেছে। তবে সন্ধ্যা ৬ টার কারফিউ কঠোর থাকায় ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল করেনি।
নগরবাসী জানান, নগরে গণপরিবহন চলছে এবং ব্যাংক-বিমা-অফিস-আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। কারফিউ শিথিল হওয়াতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে প্রয়োজনীয় কাজে আসা ব্যক্তিরা অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। পরিস্থিতি এমনই থাকুক, আর কোনো অস্থির বা অস্থিতিশীল পরিবেশ চান না নগরবাসী।
উল্লেখ্য, কারফিউ শুরুর পর গেলো ২০ জুলাই থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
জেডএস//