বাংলাদেশ
ইফতার পার্টির টাকায় বাঁচুক গরিবের প্রাণ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে। গেলো বছরের ধাক্কা সামলে ওঠার চলমান লড়াইয়ে যখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন দ্বিতীয় দফার লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে খাবারের পাত্রগুলো প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। একমুঠো খাবারের সন্ধানে অনেকেই ভিড় করছেন শহরের সড়কগুলোতে। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের হাত পাততে ইতস্ততাবোধ থাকলেও পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করছে। এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে লাজ-লজ্জা, করোনা আতঙ্ক শুধুই বিলাসিতা, তুচ্ছ ব্যাপার মাত্র। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের সামর্থ অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দুস্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য।
অভাবী ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লকডাউনের প্রথম থেকেই সরকার অনুদান ও প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, ভাসমান এবং অসচ্ছল মানুষকে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে নতুন করে আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু, বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়া একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক যেমন রিকশওয়ালা, হকার, দিনমজুরের সংখ্যা ৫ কোটি ১৭ লাখের বেশি। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। মোট জনসংখ্যার হারে তা ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্যদিকে প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। সংখ্যার বিচারে তা প্রায় চার কোটি। মৌলিক চাহিদার অনেক কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দিন আনে দিন খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে থাকে তারা। করোনা সংকট তাদের রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে, তাতে চাহিদার ২৫ শতাংশও মিটবে না। বাকি যে ৭৫ শতাংশ বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে তাদের জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনেক কিছুই করার আছে।
অতীতে প্রতি রমজানেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও জমকালো ইফতার পার্টির আয়োজনের রেওয়াজ আমরা দেখেছি। রোজায় এসব ইফতার পার্টিতে সর্বমোট কতটাকা খরচ হয় তার সঠিক কোন হিসাব না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেন সেটি শত কোটি টাকার ওপরে। লকডাউনের কারণে ইফতার পার্টি আয়োজনের সুযোগ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো সাশ্রয় হওয়া এই টাকা শ্রমিক, গরিব, অনাহারীদের জন্য ব্যয় করে তাহলে সংকটে পড়া দরিদ্র মানুষগুলোর কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।
করোনার মতো এমন মহাসংকট অতীতে আমাদের কখনো মোকাবেলা করতে হয়নি। কোটি কোটি মানুষ আজ বিপদগ্রস্ত, দিশাহারা, ক্ষুধার্ত। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ধনী ব্যক্তিরা প্রতি রোজায় ইফতার পার্টিতে যে টাকা খরচ করতো সেই টাকা যদি এখন গরিবের জন্য ব্যয় করে, তবে তা হবে ত্যাগ ও মহিমান্বিত রমজান মাসে সর্বোৎকৃষ্ট এবং মহৎ কাজ। মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে নিজের সামর্থ নিয়ে এই অতিমারি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই জয়ী হবে মানবতা, রক্ষা পাবে আমাদের প্রিয় দেশ ও দেশের মানুষ।
লেখক: সৈয়দ আশিক রহমান
প্রধান সম্পাদক আরটিভি অনলাইন ও সিইও আরটিভি
জাতীয়
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা
শপথ নেয়ার পরের দিন ভাষা শহীদদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩ জন উপদেষ্টা নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্য উপদেষ্টারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
আই/এ
জাতীয়
উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানালেন জাসদ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং অন্য উপদেষ্টাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন
বৃহস্পতিবার ( ৮ আগস্ট ) রাতে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানান তারা।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশে আর একটিও প্রাণহানি, হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত হবে।”
বিবৃতিতে আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ সংবিধানকে সমুন্নত রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাথে আলোচনা করে সরকারের কর্ম পরিকল্পনার রূপরেখা দ্রুত প্রকাশ করে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা প্রশমিত করবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাসদ নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
জাসদ জোর দাবি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ববর্তী সরকারের পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ পেশাজীবী ও হিন্দু ও আহমদীয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যা করা, মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ও নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা-হত্যা-নির্যাতন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন-বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা, লুটপাট, জ্বালিয়ে ছারখার, দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, সাত বীরশ্রেষ্ঠর ভাস্কর্যসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভেঙে ফেলা এবং কুমিল্লার বীরচন্দ্র পাঠাগার, সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য জাদুঘর, কুড়িগ্রামের উত্তরবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক শশীলজের ভেনাস ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অগনিত শিল্পকর্ম ভেঙে ফেলার সব অপরাধ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার।
জেডএস/
জাতীয়
তদবির থেকে বিরত থাকুন, দেশগঠনে পরামর্শ দিন : আসিফ মাহমুদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ১৭ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন সরকার। এ উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন প্রতিনিধি। এদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঘনিষ্ঠজনদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনো আবদার কিংবা তদবির করতে বারণ করেছেন। বরং দেশগঠনে কোনো পরামর্শ থাকলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্ট করে এ অনুরোধ করেন।
পোস্টে এই তরুণ উপদেষ্টা লিখেছেন, ব্যক্তিগত লাভের আশায় আবদার, তদবির করা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আমার সাথে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। দেশগঠনে পরামর্শ থাকলে জানাবেন।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ঢাকার বাইরে থাকায় তিন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায় এবং সুপ্রদীপ চাকমা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অন্যান্য উপদেষ্টারা হলেন- ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২. ড. আসিফ নজরুল ৩. আদিলুর রহমান খান ৪. হাসান আরিফ ৫. তৌহিদ হোসেন ৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ৭. মো. নাহিদ ইসলাম ৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ১০. সুপ্রদীপ চাকমা ১১. ফরিদা আখতার ১২. বিধান রঞ্জন রায় ১৩. আ.ফ.ম খালিদ হাসান ১৪. নুরজাহান বেগম ১৫. শারমিন মুরশিদ ১৬. ফারুক-ই-আযম।
জেএইচ